ফাইনালের স্বপ্ন পূরণ নিউজিল্যান্ডের
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ মার্চ ২০১৫, ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ
স্পোর্টস ডেস্ক ::
দুই দলের জন্যই ম্যাচটি ছিল প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠার লড়াই। শেষ পর্যন্ত সেই অধরা ধরা দিল স্বাগতিকদের হাতে। শুরুতে ভালোই ব্যাটিং করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে নির্ধারিত ৪৩ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৮১ রান তোলে দলটি। ডার্কওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৯৮ রান। জবাবে স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচে ১ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে ম্যাককুলামের দল। জয় পায় ৪ উইকেটের।
অকল্যান্ডে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ওপেনাররা। দলীয় ২১ রানের মাথায় হাশিম আমলাকে বোল্ড করেন ট্রেন্ট বোল্ট। কিছুক্ষণ আগেই আমলার দেয়া শূন্যে ভাসানো বল ধরতে পারেননি তিনি। এর প্রায়শ্চিত্তই যেন করলেন সেই দুর্দান্ত ডেলিভারিতে। অষ্টম ওভারে দ্বিতীয় আঘাতও হানেন তিনি। সদ্য ফর্মে ফেরা কুইন্টিন ডি কককে থার্ডম্যানে টিম সাউদির ক্যাচ বানান বোল্ট। তবে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেয় ফ্যাফ ডু প্লেসিস ও রিলি রুশোর জুটি। তৃতীয় উইকেট জুটিতে এরা যোগ করেন ৮৩ রান। ২৭তম ওভারে কোরি অ্যান্ডারসনের লাফিয়ে ওঠা বলে ঠিকমতো ব্যাট চালাতে না পেরে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন রুশো। দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর তখন ৩ উইকেটে ১১৪ রান।
এরপর জুটি বাঁধেন প্লেসিস ও ভিলিয়ার্স। এ দুই ইনফর্ম ব্যাটসম্যানের দৃঢ়তায় রানের চাকায় গতি আনে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঝড়ো গতিতে রান তোলেন এবি। মাত্র ৩২ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করেন এই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। তবে ৩৮তম ওভার শেষে আসে বৃষ্টির উপদ্রব। বন্ধ থাকে খেলা। ম্যাচের সীমা নেমে আসে ৪৩ ওভারে। ম্যাচ ফের শুরু হতে না হতেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন প্লেসিস। ১০৭ বলে ৮২ রানের একটি ইনিংস খেলেন তিনি। তবে রান তোলার গতি মন্থর হয়নি। ডেভিড মিলারের ১৮ বলে করা ৪৯ রানের ইনিংসে ভর করে নির্ধারিত ওভার শেষে প্রোটিয়রা তোলে ২৮১ রান। ইডেন পার্কে ‘দ্য কিলার’রূপে আর্বিভূত হওয়া মিলার হাঁকান ৬টি চার ও ৩টি ছক্কা। ৪৫ বলে ৬৫ রান করে অপরাজিত ছিলেন অধিনায়ক ভিলিয়ার্স। ইনিংসের শেষ ৩০ বলে ৬৫ রান তোলে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে কোরি অ্যান্ডারসন ৭২ রানের বিনিময়ে শিকার করেন ৩টি উইকেট। এছাড়া ট্রেন্ট বোল্ট নেন ২টি উইকেট।
২৯৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ব্রেন্ডন ম্যাককুলামের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের সুবাদে উড়ন্ত সূচনা করে কিউইরা। ৬ ওভারেই ৭১ রান তুলে ফেলে ম্যাককুলাম ও গাপটিলের উদ্বোধনী জুটি। এর মধ্যেই অর্ধ-শতক তুলে নেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক। ২৬ বলে ৫৯ রান করে মরনে মরকেলের বলে ডেল স্টেইনের তালুবন্দী হন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। এ ইনিংসে ছিল ৮টি চার ও ৪টি ছয়ের মার। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি কেন উইলিয়ামসন। ৬ রান করে সেই মরকেলের বলেই বোল্ড হন তিনি।
এরপর ভালো জুটি গড়ে তুলেছিলেন গাপটিল ও রস টেইলর। কিন্তু অসম্ভব এক রান নিতে গিয়ে রান-আউট হয়ে যান আগের ম্যাচে ঝড় তোলা গাপটিল। ২১ রান পর জেপি ডুমিনির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ হন টেইলর। কিন্তু কোরি অ্যান্ডারসন ও গ্রান্ট এলিয়ট মিলে গড়ে তোলেন প্রতিরোধ। এ জুটির তোলা ১০৩ রানে জয়ের সুবাস পেতে থাকে স্বাগতিকরা। এসময় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন অ্যান্ডারসন ও এলিয়ট- দুজনই।
৫৭ বলে ৫৮ রান করে সাজঘরে ফিরে যান অ্যান্ডারসন। টিকে ছিলেন এলিয়ট। তবে দলীয় ২৬৯ রানের মাথায় স্টেইন লুক রনচিকে তুলে নিলে ম্যাচে চলে আসে শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনা। ম্যাচে তখন দুদলেরই ছিল সমান সম্ভাবনা। কিন্তু এসময় একটি রানআউট ও ক্যাচ মিস করে প্রোটিয়ারা। একই বোধহয় বলে বিশ্বকাপের স্নায়ুচাপ। ম্যাচের ভাগ্য গড়ায় শেষ ওভারে। বল করতে আসেন ডেল স্টেইন। রান দরকার ১২টি। ক্রিজে তখন অভিজ্ঞ ড্যানিয়েল ভেট্টোরি ও এলিয়ট। ওভারের তৃতীয় বলে চার মারেন ভেট্টোরি। আর পঞ্চম বলে ছয় মেরে ১ বল বাকি থাকতে জয় ছিনিয়ে আনেন ডানহাতি এলিয়ট। ৭৩ বলে ৮৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন নিউজিল্যান্ডের জয়ের এ নায়ক। ইনিংসটিতে ছিল ৭টি চার ও ৩টি ছক্কার মার। প্লেয়ার অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন নিউজিল্যান্ডের জয়ের কান্ডারি গ্রান্ট এলিয়ট।
দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ৫৯ রান দিয়ে ৩টি উইকেট শিকার করেন মরনে মরকেল। এছাড়া স্টেইন ও ডুমিনি নেন ১টি করে উইকেট।