সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বিএনপিতে এখনো দোটানা
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মার্চ ২০১৫, ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে এখনো দ্বিধা চলছে বিএনপিতে। গতকাল দলের শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতার বক্তব্যে বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে দুই নেতাই বলেছেন, শিগগিরই এ বিষয়ে ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত’ জানানো হবে।
আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে দলের অবস্থান জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, শিগগিরই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। গতকাল শুক্রবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের এ সদস্য বলেন, ‘বিএনপি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। নির্বাচনে যাবে কি যাবে না, কী করা উচিত— তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। শিগগিরই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে দল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’ সকালে বিএনপির ‘নিখোঁজ’ যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের গুলশানের বাসায় গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সহানুভূতি জানানোর পর নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে দলে দুই রকমের ভাবনা-চিন্তা চলছে। তৃণমূল পর্যায়ে এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এক পক্ষ বলছে, দলের ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। এ নির্বাচনে সরকারকে ফাঁকা মাঠে ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। আরেক পক্ষ বলছে, কীভাবে নির্বাচন হবে? দলের প্রার্থী যারা হবে, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। নেতাকর্মীরা অনেকেই জেলে আছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে কীভাবে নির্বাচনে আমরা অংশ নেব?’
নিজের ব্যক্তিগত অভিমত তুলে ধরে সাবেক এ সেনাপ্রধান বলেন, ‘দেশের যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আজ আমাদের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বেশি ভাবতে হবে। দশম যে সংসদ চলছে, তা একটি প্রশ্নবিদ্ধ সংসদ। তাই দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে এখন গুরুত্ব দিতে হবে।’ তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে দলে যে মত শক্তিশালী হবে সে অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত হবে বলে ‘প্রত্যাশা করছেন’ মাহবুবুর রহমান।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে বিশিষ্ট নাগরিকরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের অংশ নেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন খালেদা জিয়া। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান এমাজউদ্দীন আহমদ। বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নিলে চলমান আন্দোলনের রূপরেখায় পরিবর্তন আসতে পারে বলেও জানান তিনি।
প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, অধ্যাপিকা তাহমিনা আক্তার, বোরহান উদ্দিন, মামুন হোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি আবদুল হাই শিকদার প্রমুখ।
এর আগে বিএনপির আরেক নেতা সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এ ব্যাপারে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে তবেই বলা যাবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ গত বুধবার রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ওই তিন করপোরেশনে ভোট হবে আগামী ২৮ এপ্রিল। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে ২৯ মার্চের মধ্যে।
দীর্ঘ আট বছর ধরে নির্বাচনের অপেক্ষায় থাকা ঢাকা সিটি করপোরেশন এখন দুই ভাগ হলেও ২০০২ সালে অবিভক্ত সিটির সর্বশেষ নির্বাচনে জয়ী হয়ে দীর্ঘদিন মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। আর চট্টগ্রামের মেয়রের দায়িত্বে থাকা এম মনজুর আলমও ২০১০ সালের নির্বাচন পার হয়েছিলেন বিএনপির সমর্থন নিয়ে। মনজুর আলম এবারো নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী হলেও ‘দলের চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্তের’ অপেক্ষায় থাকার কথা বলেছেন। ঢাকার পরিস্থিতিও মোটামুটি একই রকম।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেমে হরতাল-অবরোধে থাকলেও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এই ভোটে অংশ নেয়ার বিষয়টি সরাসরি এখন পর্যন্ত নাকচ করেননি দলের কোনো নেতা।