২৫ হাজার যাত্রীর হজে যাওয়া অনিশ্চিত
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মার্চ ২০১৫, ৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ
নির্ধারিত কোটার চেয়ে এবার হজযাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ২৫ হাজারের বেশি হজযাত্রীর হজে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সৌদি সরকার এসব হজযাত্রীর অতিরিক্ত কোটা বরাদ্দ না দিলে এবার তারা হজে যেতে পারবেন না। অথচ এসব হজযাত্রীর কাছ থেকে মুয়াল্লেম ফি বাবদ প্রায় আট কোটি টাকা নিয়েছে হজ এজেন্সিগুলো। এর মধ্যে সাড়ে নয় হাজার হজযাত্রীর মুয়াল্লেম ফির টাকা ব্যাংকে জমা পড়লেও বাকি প্রায় ১৬ হাজার হজযাত্রীর টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, এসব টাকা হজ এজেন্সির পকেটে গেছে।
সৌদি সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারিভাবে ১০ হাজার ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯১ হাজার ৭৫৮ জনের হজের সুযোগ পাওয়ার কথা। তবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী কম হওয়ায় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯৮ হাজার ৭৫৮ জন হজ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
গত ১ মার্চ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজের জন্য নাম নিবন্ধন কার্যক্রমে হজযাত্রীর কোটা পূরণ হয়ে যাওয়ায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে সার্ভার বন্ধ হয়ে পড়ে। ওই দিন সর্বশেষ ৯১ হাজার ৯০৮ জনের নাম নিবন্ধন হয়। তার পরও কিছু এজেন্সি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নাম ও লোগো নকল করে রাতারাতি ওয়েবসাইট তৈরি করে দেশের তৃণমূল পর্যায়ের স্বল্পশিক্ষিত হজযাত্রীর নাম নিবন্ধন দেখিয়ে টাকা নেয়। অনেক এজেন্সি নাম নিবন্ধনের বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করতে ব্যাংকে মুয়াল্লেম ফি জমা দেয়। ১ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকে এক লাখ ১১ হাজার ৩৪৫ জনের নামে মুয়াল্লেম ফির টাকা জমে পড়ে। নির্ধারিত কোটার অতিরিক্ত টাকা জমা হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে এ প্রতারণা ফাঁস হয়। এ প্রসঙ্গে হাবের মহাসচিব শেখ আবদুল্লাহ জানান, হজ অফিসের পরিচালক মিজানুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত সাত সদস্যের কমিটি নিবন্ধিত প্রায় আট হাজার ভুয়া নিবন্ধন বাতিল করেছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নিবন্ধিত হজযাত্রীর বাইরে হজে যেতে ইচ্ছুক আরও ১৫ হাজার ৬৮৭ জনের তালিকা জমা দিয়েছে এজেন্সিগুলো। এসব হজযাত্রীর কাছ থেকে মুয়াল্লেম ফি জমা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের মুয়াল্লেম ফি জমা দেওয়া হয়নি। সব মিলিয়ে ২৫ হাজার ২৭৫ জনের হজে যাওয়া অনিশ্চিত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
হজ কার্যক্রমে অনিয়মের দায়ে কালো তালিকাভুক্ত এজেন্সিগুলো নানা কৌশলে হজ কার্যক্রম চালায়। চলতি বছর ৬৭টি এজেন্সিকে অনিয়মের দায়ে শাস্তি দিয়েছে সরকার। অথচ এসব এজেন্সি আগের মতোই হজযাত্রী সংগ্রহ করে যাচ্ছে। এতে হাজার হাজার হজযাত্রীর প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। হাবের সভাপতি মো. ইব্রাহিম বাহার এ ব্যাপারে বলেন, যেসব হজ এজেন্সির হজযাত্রীদের মুয়াল্লেম ফি জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি, তাদের হজে পাঠানোর জন্য সৌদি সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় হজ চুক্তিতে আরও ১০ হাজার হজযাত্রীর কোটা বাড়ানোর প্রস্তাব উত্থাপনের দাবি জানানো হয়েছে। হাবের সভাপতি বলেন, যেসব দেশ থেকে কম হজযাত্রী হজে যাবেন, সেসব দেশের কোটা থেকে সৌদি সরকার বাংলাদেশকে কোটা বাড়িয়ে দিলে আমাদের সব হজযাত্রীই হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
হজযাত্রীর সংখ্যা ২৫ হাজার বাড়াতে সৌদি আরব সরকারের কাছে ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান অনুরোধ করেছেন বলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে লিখিত আবেদন দিলে সৌদি আরব সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে আশ্বাস পাওয়া গেছে। ধর্মমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে এ তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন। হজ চুক্তির জন্য ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে সৌদি আরব সফরে রয়েছে। সৌদি আরব সফররত ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের সঙ্গে ওই দেশের হজমন্ত্রীর গত বৃহস্পতিবার হজ-সংক্রান্ত চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, এবার এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জন হজে যেতে পারবেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (হজ) মিজানুর রহমান জানান, বাংলাদেশ থেকে হজে যেতে এবার প্রায় সোয়া লাখ হজযাত্রী অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন। হজ প্যাকেজের ২৮ হাজার ৭৪ টাকা জমা দিয়ে হজযাত্রীরা ১ মার্চ পর্যন্ত অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর (৯ জিলহজ) হজ হতে পারে।