পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে সয়াবিন তেলের দাম
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ মার্চ ২০১৫, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক ::
আন্তর্জাতিক বাজারে ধারাবাহিকভাবে কমছে সয়াবিন তেলের দাম। এর প্রভাবে দেশের বাজারেও দীর্ঘদিন ধরে পণ্যটির দাম কমতে কমতে সম্প্রতি পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন তা পর্যায়ে নেমে এসেছে।
ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা জানান, ২০১১ সালে পাইকারি বাজারে প্রতি মণ (৩৭ কেজি ৩২০ গ্রাম) সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ৫ হাজার ৫০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি কেজির দাম পড়ে ১৩৫ টাকা ৩২ পয়সা। পরের বছর তা কমে প্রতি মণ ৪ হাজার ৬৫০ টাকা বা প্রতি কেজি ১২৪ টাকা ৬০ পয়সায় নেমে আসে। ২০১৩ সালে আরো কমে যায় পণ্যটির দাম। এ সময় প্রতি মণ ৪ হাজার ৩০০ টাকা বা প্রতি কেজি ১১৫ টাকা ২২ পয়সায় বিক্রি হয়। দরপতন অব্যাহত থাকে ২০১৪ সালেও। ওই বছর প্রতি মণ সয়াবিন তেল ৩ হাজার ৭৮০ টাকা বা প্রতি কেজি ১০১ টাকা ২৯ পয়সায় বিক্রি হয়। তবে সয়াবিন তেলের বাজারে রেকর্ড দরপতন হয় চলতি বছর। বর্তমানে পণ্যটি প্রতি মণ ২ হাজার ৯৫০ টাকা বা প্রতি কেজি ৭৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে গত পাঁচ বছরে মণপ্রতি দাম কমেছে ২ হাজার ১০০ টাকা, আর প্রতি কেজিতে দাম কমেছে ৫৬ টাকা।
এদিকে পাইকারি বাজারে দাম কমার প্রভাবে খুচরা বাজারেও কমেছে সয়াবিন তেলের দাম। বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১১ সালে রাজধানীর বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ১৩৮-১৪০ টাকায়, ২০১২ সালে তা কমে বিক্রি হয় ১২৮-১৩০ টাকায়, ২০১৩ সালে দাম আরো কমে বিক্রি হয় ১২০-১২২ টাকায়, ২০১৪ সালে ১০০-১০১ ও বর্তমানে তা ৯০-৯২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে খুচরায় সয়াবিন তেলের দাম কমেছে কেজিপ্রতি ৪৮ টাকা।
ভোজ্যতেলের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম অব্যাহতভাবে কমছে। দেশের মিল মালিক ও আমদানিকারকরা এ সময় বিপুল পরিমাণ তেল আমদানি করেছেন। ফলে বাজারে কোনো সংকট ছিল না। তবে শীত মৌসুমে সয়াবিন তেলের চাহিদা বেশি থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছিল। শীত চলে যাওয়ার পর দাম আবার কমা শুরু হয়েছে।
২০১১ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১ হাজার ১২৬ থেকে ১ হাজার ২৫৫ ডলার, ২০১২ সালে ছিল ১ হাজার ১৩৪ থেকে ১ হাজার ২৩২ ডলার, ২০১৩ সালে ছিল ৮৯৭ থেকে ১ হাজার ৮২ ডলার, ২০১৪ সালে ছিল ৯৩৪ থেকে ৭২১ ডলার ও চলতি বছর তা নেমে দাঁড়ায় ৭০৭ ডলার। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে টনপ্রতি দাম কমেছে ৪১৯ থেকে ৫৪৮ ডলার।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশের ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে বেশি দামে তেল বিক্রি করেন। মিলাররা প্রায়ই সরবরাহ জটলা দেখিয়ে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেন। আবার পাইকারি ব্যবসায়ীরা সে সুযোগে দাম বাড়ান। পাইকারি ব্যবসায়ীদের সুযোগে খুচরা বিক্রেতারা অতিরিক্ত মূল্যে তেল বিক্রি করেন। এছাড়া শীতকাল এলে সয়াবিন তেলের চাহিদা বেশি থাকে। এ সময় ব্যবসায়ীরা সয়াবিন তেলের সঙ্গে পাম কিংবা সুপার পাম অয়েল মিশাতে পারেন না। এজন্য সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দেন তারা। তবে সম্প্রতি ভোগ্যপণ্যের দাম ওঠানামা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে সরকারের টনক নড়ে। বাজার তদারকিতে সরকারের নজরদারি বাড়ানো হয়।
বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী ভুট্টো জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কম। এ কারণে দেশের বাজারে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে পরিবেশক ও পাইকারি পর্যায়ে দামের ব্যবধান এখনো মণপ্রতি অনেক বেশি। এ কারণে ভোক্তারা সর্বোচ্চ সুবিধা পাচ্ছেন না। এছাড়া পাইকারি ও খুচরা দামে প্রায়ই বিস্তর ব্যবধান থাকে। এ ব্যবধান কমিয়ে আনতে পারলে ভোক্তারা আরো সুবিধা ভোগ করতে পারবেন বলে মনে করছেন তিনি।