দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ২২ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল হুমকির মুখে
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ মার্চ ২০১৫, ১০:১২ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় বোরো ফসল রক্ষায় ত্রুটিপূর্ণ বাঁধ মেরামত ও নির্মাণের সময় সীমা পেরিয়ে গেলেও তহবিল না থাকার অজুহাতে পাউবো কাজ বিলম্বিত করছে। এর ফলে উপজেলার দেখার হাওর, সাংহাই হাওর, কাচিভাঙ্গা হাওর, জামখলা হাওর ও খাইহাওরের কৃষকদের ২২ হাজার হেক্টর জমির একমাত্র বোরো ফসল হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের একমাত্র ভরসা হচ্ছে বোরো ফসল। বিগত বছরগুলোতে যে বাঁধগুলোর অংশ দিয়ে হাওরে পানি ঢুকে ফসল তলিয়ে ছিল বিশেষ করে এবার সেই অংশগুলোই মেরামতের দাবি ছিল কৃষকদের। সামান্য বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢল হলে মহাসিং নদীর পানি বিপদ সীমার কাছাকাছি চলে যায় এবং পানির প্রবল ধাক্কায় বাঁধগুলো উপচে বা ফেঁটে হাওরে পানি প্রবেশ করে। সরকার চলতি বছর নির্ধারিত সময়ে বাঁধ নির্মাণের জন্য টাকা বরাদ্দ দিলেও গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং তা ২৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যে সম্পন্ন করার কথা ছিল। কাজ আদৌ সম্পন্ন হবে কি হবে না এ নিয়ে চরম হতাশা আর শঙ্কায় রয়েছেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার প্রায় পৌনে একলাখ কৃষক।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওর, সাংহাই, কাচিভাঙ্গা, জামখলা ও খাইহাওরের কাচির ভাঙ্গা হাওরের ছয়হারা ব্রিজ হতে মাছের খলা পর্যন্ত, ডিগারকান্দি মরার টিলা হতে ডিগার বিলের কাড়া পর্যন্ত, ডেকার হাওরের ডাবর ব্রিজের নিকট হতে পুইট্যা, মাছুখালী এবং বেতকোনা পর্যন্ত, সাংহাইর হাওরের আশার চর কবরস্থান হতে কাশিপুর পর্যন্ত, গেরাবিলের ভাঙ্গা হতে বন্না পাপিজুরী বাঁধ পর্যন্ত, ফতেপুর হতে মির্জাপুর পর্যন্ত, ডেকার হাওরের জয়কলস রাস্তার মুখে ও জয়কলস খাল পর্যস্ত, আসামপুর হতে উথারিয়ার নিকট পর্যন্ত, উথারিয়া হতে আস্তমা পর্যন্ত, খাই হাওরের শালদীঘা হতে রাঙ্গামাটি পর্যন্ত, খাশিপুর হতে বেতকালী পর্যন্ত, কাউয়াজুরী হাওরের বিভিন্ন ভাঙ্গা, আক্তাপাড়া, ছয়হারা ব্রিজের পশ্চিম পাশ, সিচনী ব্রিজের ফিল্পের পাশে ভাঙ্গা, খাই হাওরের সদরপুর ব্রিজের দক্ষিণ পাশ, জামখলা হাওরের শল্লার দাইড় ক্লোজার হতে পাইকাপন ফুল বাড়ি পর্যন্ত, জামখোলা হাজী লাল মিয়ার বাড়ি হতে মৌগাঁও ব্রিজ পর্যন্ত এবং টুকের বাজার হতে লালপুর আব্দুল মান্নানের বাড়ি পর্যন্ত, সলফ জাহিরুল্লার বাড়ি হতে শল্লার দাইড় পর্যন্ত মোট ১৭টি বাঁধের কাজ পিআইসি (প্রজেক্ট ইমপ্লিমেনটেশন কমিটি) গঠন করে ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কিন্তু সরকারের নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত গড়ে ৩০-৪০ ভাগ কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়নি। এ নিয়ে কৃষকদের মাঝে সন্দেহ আর প্রচণ্ড ক্ষোভ রয়েছে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার একাধিক কৃষক জানান, মাটি কাটার খরচ বাঁচাতে বাঁধের খুব কাছ থেকে মাটি উত্তোলণ করে নির্মাণ করা হচ্ছে বেড়ীবাঁধ। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী সাধারণ বাঁধের ১০ ফুট, ক্লোজারের ক্ষেত্রে ৩০ ফুট দূরত্বে মাটি উত্তোলনের কথা রয়েছে। পাউবো এসও কে ম্যানেজ করে পি.আই.সি (প্রজেক্ট ইমপ্লিমেনটেশন কমিটি) ক্রটিপূর্ণ বাঁধ নির্মাণ করে অফিস থেকে অনায়াসে বিল উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছেন।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ এম এ মান্নান, উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী আবুল কালাম, সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম মুর্শেদা জামান তদারকি করে, সভা ডেকে ও মনিটরিং করে বাঁধ নির্মাণ কাজের খোঁজ খবর নিলেও উল্লেখিত কিছু কিছু পিআইসিরা বাঁধ নির্মাণের নীতিমালা উপেক্ষা করে তাদের মনগড়া ও দায়সারাভাবে বাঁধের কাজ করে যাচ্ছেন।
একাধিক পিআইসি চেয়ারম্যানদের সাথে আলাপ কালে জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদেরকে যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে তার ভিত্তিতে তারা কাজ করে যাচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় সময়ে বরাদ্দ না পাওয়ায় কাজ সম্পন্ন করতে পারেননি।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী আবুল কালাম জানান, পিআইসির কমিটি গঠন দেরিতে হওয়ায় কাজের সময় সীমা অতিবাহিত হয়েছে। আশা করি এ মাসের মধ্যেই অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন হবে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদ আহমদের সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।