আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
প্রকাশিত হয়েছে : ৭ মার্চ ২০১৫, ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। গত ৪৪ বছরে অনেক কিছু বদলে গেলেও বদলানো যায়নি মাত্র ১৯ মিনিটের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সেই ভাষণটি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্জগম্ভীর কণ্ঠ থেকে ধ্বনিত হয়েছিল স্বাধীনতার ঘোষণা। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) মুক্তিপাগল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এই ভাষণ থেকেই মূলত সোনার স্বাধীনতার অঙ্কুরোদগম ঘটতে থাকে এ বাংলায়।
গণমানুষের স্লোগানের মধ্য দিয়ে বিকেল তিনটা ২০ মিনিটে জনসমুদ্রের মঞ্চে আসেন স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু। ফাগুনের সূর্য তখনও মাথার ওপর। আকাশ কাঁপিয়ে স্লোগান হচ্ছে, ‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’, ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’। বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি আর হাতকাটা কালো কোট পরে সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর প্রাণপুরুষ দৃপ্তপায়ে উঠে এলেন মঞ্চে। দাঁড়ালেন মাইকের সামনে। আকাশ কাঁপানো স্লোগান আর মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে হাত নেড়ে অভিনন্দন জানালেন অপেক্ষমাণ জনসমুদ্রের উদ্দেশে। তারপর শুরু করলেন ভাষণ।
মাত্র ১৯ মিনিটের স্বল্প সময়ে বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের পুরো ক্যানভাসই তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানী সামরিক জান্তাদের জানিয়ে দেন, স্বাধীনতাকামী জনতাকে আর বুলেট-বেয়নেটে দাবিয়ে রাখা যাবে না। তাই বর্জ্রনির্ঘোষ কণ্ঠে ঘোষণা দেন, “রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” …‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমাদের কাছে অনুরোধ রইল, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে, তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো…’।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের প্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে। ঐতিহাসিক সেই ভাষণ এদেশের গণমানুষকে গভীরভাবে আন্দোলিত করে এবং তাঁদেরকে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে বিপুলভাবে উদ্বুদ্ধ করে। ঐতিহাসিক ভাষণের সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা ঘোষণা করেন বাঙালী জাতির মুক্তির সনদ মহান স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ ন’মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি বহু কাক্সিক্ষত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেন, ৭ মার্চ বাঙালীর জাতীয় ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় ঐতিহাসিক দিন। বাঙালীর বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতার ঐতিহাসিক ভাষণের দিকনির্দেশনাই ছিল সে সময় বজ্রকঠিন জাতীয় ঐক্যের মূলমন্ত্র। অসীম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অমিত শক্তির উৎস ছিল এ ঐতিহাসিক ভাষণ; যার আবেদন আজও অটুট রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোটের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে শনিবার রাজধানীসহ সারাদেশে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালিত হচ্ছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের ৪৪তম বার্ষিকীর এ দিনটিতে ভোর ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি শুরু হয়। সকাল ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় তিনি কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর পর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্থানটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের ঢল নামে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের ব্যানারে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। তারা ‘জামায়াত-শিবির রাজাকার, এ মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই’, ‘মুজিবের বাংলায় খুনিদের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, হকার্স লীগ, তাঁতী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, মোটরচালক লীগ, ওলামা লীগ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আদর্শ মূল্যায়ন ও গবেষণা সংসদসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায়।