যশোর হত্যাকাণ্ডের ১৬তম বার্ষিকীতে মৌলভীবাজারে উদীচী’র মৌন মিছিল
প্রকাশিত হয়েছে : ৬ মার্চ ২০১৫, ৮:৫৪ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
উদীচী যশোর হত্যাকাণ্ডের আজ ১৬তম বার্ষিকী। এ দিনটি দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ভয়াবহ ও কলঙ্কিত দিন হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতি বছরের মতো এবারও নিহতদের স্মরণে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এ উপলক্ষ্যে মৌলভীবাজারে আজ ৬ মার্চ শুক্রবার উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর কর্মীরা যশোর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত ও বিচারের দাবিতে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেছে।
আজ দুপুরে শহরের শাহ মোস্তফা সড়কস্থ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠির জেলা সংসদের কার্যালয় থেকে মৌন মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে স্থানীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। যশোর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত ও জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের বিচারের দাবিতে এ সময় মিছিলে অংশ গ্রহনকারী সবার মুখ কালো কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল।
মিছিল শেষে স্থানীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে উদীচী জেলা সংসদের সভাপতি অ্যাড. ডাডলী ডেরিক প্রেন্টিসের সভাপতিত্বে এক সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অ্যাড. ডাডলী ডেরিক প্রেন্টিস ছাড়াও বক্তব্য রাখেন জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাফিজ চৌধুরী।
এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা সংসদের সহসভাপতি শক্তি পদ পাল, রমাপদ ভট্ট্যাচার্য, আব্দুর রব, আহমদ আফরোজ প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালের এই দিনে যশোরের টাউন হল মাঠে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনে বর্বরোচিত বোমা হামলা চালানো হয়। ওই ঘটনায় নিহত হন নূর ইসলাম, নাজমূল হদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম, বুলু, রতন রায় ও রামকৃষ্ণসহ ১০ জন। আহত হন আরো দুই শতাধিক নারী-পুরুষ।
এদিকে ১৬ বছরেও শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়নি যশোর উদীচী হত্যাকাণ্ড মামলার আসামিদের। উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ না পাওয়ায় ২০০৬ সালের ৩০ মে যশোরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল আদালত মামলার ২৩ আসামিকে খালাস দেন। এরপর ন্যায়বিচার পেতে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর তরফ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুনঃতদন্তের আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটি বর্ধিত তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডিকে। ২০০৭ সালে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান গ্রেপ্তার হলে ওই বছরের ১৯ নভেম্বর আদালতে উদীচী বোমা হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে হান্নান। তার স্বীকারোক্তিতে পুলিশ হরকাতুল জিহাদের সদস্য বরিশালের আবুল হোসেন ও মাদারীপুরের মাওলানা আবদুর রউফকে আটক করে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতাসীন হলে ২০০৬ সালে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা হয়। উচ্চ আদালত এ মামলার খালাসপ্রাপ্তদের আবার আত্মসমর্পণের জন্য সমন জারির নির্দেশ দেন। ২০১১ সালের ২১ জুন খালাসপ্রাপ্ত ২৩ আসামির বিরুদ্ধে সমন জারি করেন যশোর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এর মধ্যে মহিউদ্দিন আলমগীর, আহসান কবীর হাসান ও মিজানুর রহমান মিজান মারা যাওয়ায় অবশিষ্ট ২০ আসামির মধ্যে ১৭ জন বিভিন্ন সময়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন। বাকি তিনজন শফিকুল ইসলাম মিন্টু, শরিফুল ইসলাম লিটু ও সোহরাব নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করায় তাদের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৪ জুলাই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সর্বশেষ ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আটক হন এ মামলার অন্যতম আসামি শফিকুল ইসলাম মিন্টু। বর্তমানে তিনিও জামিনে রয়েছেন। বর্তমানে মামলার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।