অভিজিৎ হত্যা মামলার প্রধান সন্দেহভাজন আসামি ফারাবী গ্রেফতার
প্রকাশিত হয়েছে : ২ মার্চ ২০১৫, ৮:১০ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার প্রধান সন্দেহভাজন আসামি শফিউর রহমান ফারাবীকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান কর্নেল আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, আজ ২ মার্চ সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি বাসা থেকে ফারাবীকে আটক করা হয়।
তিনি বলেন, ‘ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যার পর থেকেই এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও অভিযান পরিচালনা করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় ফারাবীকে আটক করা হয়েছে।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, ‘ফেসবুকে ফারাবীর স্ট্যাটাস দেখে অভিজিৎ হত্যায় তাঁর সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। সহযোগী মান্নান ও রাহীর সঙ্গে অভিজিৎকে কীভাবে হত্যা করা যায়, সে বিষয়ে ফেসবুকে কথোপকথন করেন ফারাবী।’
এর আগে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় ফারাবীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফুটপাতে অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী বন্যার ওপর হামলা চালানোর সময় টিএসসি’র সামনের রাস্তায় শাহবাগ থানা পুলিশের একটি টহল গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। বাংলা একাডেমির একুশে বই মেলার প্রবেশস্থলেও পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। ফুটপাত দিয়ে স্বামী-স্ত্রী হেঁটে যাওয়ার সময় পিছন থেকে দুইজন চাপাতিধারী ব্যক্তি হামলা চালায়। হামলাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় একজনের পিছু নেন একজন পথচারী। ওই পথচারী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবির হাট পর্যন্ত তাকে অনুসরণ করে। এক পর্যায়ে ওই পথচারী হামলাকারীকে জাপটে ধরে। এসময় হামলাকারী পথচারীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পালিয়ে যায়। অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা এখনো স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
অন্যদিকে, অভিজিতের মাথার পিছনে তিনটি আঘাতের প্রচণ্ডতা ও অতিরিক্ত রক্তণেই অভিজিতের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন লাশের ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক। তিনি মন্তব্য করেছেন, অত্যন্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত ব্যক্তির হাতেই অভিজিৎ খুন হয়েছেন।
তবে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের পরপরই এ হত্যার দায় স্বীকার করে ‘আনসার বাংলা-৭’ নামের একটি সংগঠন টুইট করে। এতে বলা হয়, ‘টার্গেট ৫ ঘণ্টা আগে ফেসবুকে সর্বশেষ স্ট্যাটাস দেয় এবং এর ২ ঘণ্টা পর তাকে হত্যা করা হয়।’
টুইটারে আরো লেখা হয়, ‘ভিআইপি টার্গেট ইজ ডাউন। ইয়েস ব্রাদার, উই ক্যান।’
অভিজিৎ রায় হত্যার পরের দিন শুক্রবার সকালে নিহতের পিতা অজ্ঞাতনামা আসামি করে শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরের দিন মামলা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।
গত শুক্রবার অভিজিৎ রায় হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আমেরিকা। ঢাকাস্থ ব্রিটিশ দূতাবাস থেকেও উদ্বেগ জানানো হয়। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) তদন্ত কার্যক্রমে সহায়তা দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ জন্য এরই মধ্যে অভিজিতের পরিবার ও বাংলাদেশের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এফবিআইর সদস্যরা। সরকারও বিষয়টিতে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।
গতকাল রোববার প্রথমে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় ও পরে টিএসসি চত্বরে অভিজিৎ রায়ের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে তাঁর মরদেহ মগবাজারের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর অভিজিতের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তাঁর মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। জীবদ্দশায় অভিজিতের এটাই ইচ্ছা ছিল বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।