রাজনগরের স্কুল ছাত্র হত্যাকাণ্ড
‘মোবাইল ফোন ও বাইসাইকেলের জন্য রায়হানকে হত্যা করে’— গ্রেপ্তারকৃত জায়েদের স্বীকারোক্তি
প্রকাশিত হয়েছে : ১ মার্চ ২০১৫, ১১:০১ পূর্বাহ্ণ
আব্দুর রহমান সোহেল, রাজনগর ::
৭ হাজার টাকার জন্য প্রাণ দিতে হলো রাজনগরের স্কুল ছাত্র রায়হানকে। এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদে ও ঘাতকের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠছে রাজনগরের ছাত্র শিক্ষক ও অভিভাবকমহল। এদিকে আজ ১ মার্চ রবিবার বিকালে রাজনগর থানার পুলিশ জায়েদকে আদালতে নিলে সে স্বীরোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘাতক জায়েদের এক ভাই বিশ্বনাথ উপজেলায় থেকে লেখাপড়া করছে। সম্প্রতি তাকে ৭ হাজার টাকা দেয়ার জন্য জায়েদকে বলছিল। জায়েদ কোথাও টাকা না পেয়ে রায়হানের মোবাইল ফোন ও বাইসাইকেল নেয়ার লোভ জাগে। এজন্য সে ফন্দি আঁটছিল। ঘটনার দিন গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাত ৮টার সময় রায়হান ও জায়েদ দক্ষিণ খারপাড়া গ্রামের ওয়াজ থেকে ফিরে এক সঙ্গে ভাত খায়। ঘাতক জায়েদের বোনের বাড়ি উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের পৈতুরা গ্রামে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে রায়হানকে নিয়ে বাইসাইকেলে করে উভয়ে বের হয়ে যায়। পাকা সড়ক শেষে গ্রামের কাঁচা রাস্তা দিয়ে উভয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। রায়হান হত্যার ঘটনাস্থলে (শারমপুর গ্রামের পূর্ব ক্ষেতের জমির পাশের রাস্থায়) গিয়ে রাত সাড়ে ৯টার সময় রায়হানের কাছে মোবাইলফোন ও তার বাইসাইকেলটি চায় জায়েদ। রায়হান এগুলো দিতে অস্বীকৃতি জানালে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এসময় জায়েদের সঙ্গে থাকা তার গৃহকর্তার কোরবানির ছুরি বের করে রায়হানের পেটে আঘাত করে। চিৎকার দিয়ে রায়হান পাশের খেতের জমিতে পড়ে যায়। সেখানে তাকে ফেলে উপুর্যোপুরি আঘাত করে। সেখানেই নিস্তেজ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে রায়হান। রায়হানকে হত্যা শেষে বাইসাইকেলটি বাগাজুড়া গ্রামে তার সাবেক গৃহকর্তার ঘরে নিয়ে রাখে। হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটি নিয়ে রাখে তার ভাবি সায়রা বেগমের কাছে। মোবাইলফোনটি পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে রাখে তার শোবার ঘরের বেড়ার ফাঁকে।
ঘাতক জায়েদ জবানবন্দিতে আরো জানিয়েছে, সে একাই এ নির্মম হত্যার ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এদিকে পুলিশ জয়েদর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার ভাবি শওকত মিয়ার স্ত্রী সায়রা বেগমকে (২২) কুলাউড়ার ভাটেরা ইউনিয়নের আশিঘর থেকে আটক করে রায়হান হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করেছে। গতকাল মৌলভীবাজার আদালতে সায়রা বেগম ও জায়েদের গৃহকর্তার ছমদ মিয়ার ছেলে মোর্শেদ আদালতে স্বাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।
প্রতিবাদ ও ঘাতকের ফাঁসির দাবিতে ছাত্র-শিক্ষকসহসাধারণ মানুষের মানববন্ধন ও মিছিল-সমাবেশ
এদিকে রায়হান হত্যার প্রতিবাদে ও ঘাতকের ফাঁসির দাবিতে রাজনগর উপজেলার সবকটি উচ্চ বিদ্যালয় ও মেদেনিমহল এবং উপজেলা সদরের সাধারণ মানুষ মানববন্ধন ও মিছিল-সমাবেশ করেছে। আজ রবিবার দুপুরে উপজেলা সদরে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নেয় ইউডিয়েল হাই স্কুল, রাজনগর মডেল পোর্টিয়াস উচ্চ বিদ্যালয় ও মেহেরুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা।
মিছিল ও মানববন্ধনে ঘাতক জায়েদের ফাঁসির দাবিতে বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত ইউএনও সহকারী কমিশনার মিন্টু চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শামসুদ্দোহা পিপিএসম, অধ্যক্ষ জিলাল উদ্দীন, অধ্যক্ষ মো. ইকবাল, ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ান খয়রুল মজিদ সালেক, ইউপিচেয়ারম্যান টিপু খান, অধ্যাপিকা শাহানারা রুবি, মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার সজল চক্রবর্তী, রায়হানের চাচা শেখ আলফি মিয়া, খসরু মিয়া চৌধুরী, মেদেনিমহল গ্রামের কামরুজ্জামান, রায়হানের ছোটভাই শেখ মো. সোহানুর রহমান ইউপি সদস্য মাহমুদুর রহমান, প্রমুখ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) সুজিত চক্রবর্তী জানান, রায়হান হত্যাকারী ঘাতক জায়েদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সে একাই মোবাইলফোন ও বাইসাইকেলের লোভে হত্যা করেছে।