কুলাউড়ায় খাসিয়াদের বাধায় ঝিমাই চা বাগানের সম্প্রসারণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ
নূরুল ইসলাম ::
কুলাউড়ার ঝিমাই চা বাগানে পরিপক্ক বৃক্ষ কর্তনে খাসিয়াদের আপত্তির মুখে চা বাগান সম্প্রসারণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে একদিকে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় পড়েছে। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট চা বাগান কর্তৃপক্ষ ও খাসিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
চা বাগান কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, চা বাগান বন্দোবস্ত চুক্তি অনুযায়ী সম্প্রতি চা বাগান কর্তৃপক্ষ বাগান সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। নতুন চা গাছ লাগানোর লক্ষ্যে তারা বন্দোবস্তকৃত এলাকার ২০৯৬টি পরিপক্ক বৃক্ষ কর্তনের জন্য আবেদন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় নতুন চা লাগানোর স্বার্থে উল্লেখিত বৃক্ষ কর্তনের অনুমতি দেয়। অনুমোদনকৃত বৃক্ষ কর্তনের লক্ষ্যে বনবিভাগের লোকজনসহ গাছ চিহ্নিত করতে গেলে খাসিয়ারা বাধা দেয়। গাছ কর্তনের প্রতিবাদে কুলাউড়া শহরে বাপা ও খাসিয়ারা মানববন্ধন করে। ফলে কর্তনযোগ্য গাছ চিহ্নিতকরণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। চা বাগান কর্তৃপক্ষ তাদেরকে চাপে ফেলার জন্য বাগানের রাস্থা ব্যবহার করে খাসিয়াদের চলাচলে বাধা দেয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মাঝে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
খাসিয়ারা দাবি করে গাছ কেটে ফেললে তাদের জীবন-জীবিকার প্রধান অবলম্বন পান চাষে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়বে। অপরদিকে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। বাগান কর্তৃপক্ষ জানান ৫০ বছরের বেশি বয়েসী বৃক্ষগুলো প্রাকৃতিক কারনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চা বাগান সম্প্রসারনের জন্য সরকারি রাজস্ব প্রদান করে এই বৃক্ষ কেটে নতুন চা লাগানো হবে। চা বাগান সম্প্রসারিত এলাকায় নতুন করে প্রতি একরে দুইশটি ছায়া বৃক্ষ লাগানো হবে। তাছাড়া বড় গাছে পান চাষ করতে গেলে খাসিয়ারা গাছের মাথা অংশ কেটে পান চাষ করে। ছোট গাছে পান চাষ করলে রোদের জন্য গাছের মাথা কাটতে হয় না।
কেদারপুর টি কোম্পানি লি. ১৯৬৮ সালে ৬শ ৮৬ একর বিশিষ্ট ঝিমাই চা বাগানটি বন্দোবস্ত নেয়। বন্দোবস্ত গ্রহনের পর ৩শ ১০ একর ভূমিতে চা গাছ লাগানো হয়েছে। বাকি ভূমির মধ্যে প্রায় ৫ একর ভূমিতে রয়েছে বাগানের অফিস, ফ্যাক্টরিসহ অন্যান্য স্থাপনা। চা বাগান কর্তৃপক্ষের লিজ নেওয়া ৩শ ৭১ একর ভূমি দখল করে ৪৪টি খাসিয়া পরিবার পান চাষ ও বসবাস করছে। বাগান কর্তৃপক্ষ প্রতি পরিবার এক একর ভূমিতে পান করার প্রস্তাব করলে খাসিয়ারা তা গ্রহণ করেনি।
ঝিমাই খাসিয়া পুঞ্জির হেডম্যান (মন্ত্রী) রানা সুরং জানান গাছ কাটা হলে তাদের জীবন-জীবিকার আয়ের উৎস পান চাষ বন্ধ হলে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরবে। তাছাড়া পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে নানা ধরণের রোগ বালাইয়ের শিকার হবে।
গাজীপুর বনবিটের রেঞ্জ কর্মকর্তা প্রভাত কুসুম আচার্য জানান বাগান কর্তৃপক্ষের সৃজিত এবং প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া গাছ বাছাই করে কর্তনের জন্য অনুমোদনকৃত গাছ চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া যথাশীঘ্র শুরু করা হবে।
ঝিমাই চা বাগানের ম্যানেজার জাকির হোসাইন জানান, খাসিয়ারা বাগানের অর্ধেক জায়গা দখল করে রেখেছে এবং বাগান সম্প্রসারনের জন্য মন্ত্রনালয় অনুমোদন দিলেও লিজকৃত ভূমির গাছ কাটতে দিচ্ছে না খাসিয়ারা। বাগান সম্প্রসারণের কাজ আটকে আছে।