আফগানকে বাঘের কামড় দিল বাংলাদেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, ১২:৪২ অপরাহ্ণ
স্পোর্টস ডেস্ক ::
জয়টা প্রত্যাশিতই ছিল। তবে ভয় ছিল ’ঝড়ে পড়ে না জানি আবার বক মরে’। গত বছর এশিয়া কাপে নিজেদের মাটিতে এই আফগানিস্তানের কাছেই তো হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ।
তবে সেই ভয়ের চাদর সরিয়ে দিয়ে জয়টা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশেরই। প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে আসা আফগানিস্তানকে অনায়াসে ১০৫ রানে হারিয়েছে টাইগার বাহিনী।
বাংলাদেশের দেওয়া ২৬৭ রান তাড়া করতে গিয়ে ৪২.৫ ওভারে আফগানরা অলআউট হয়েছে ১৬২ রানে।
আর বিশ্বকাপ সূচনার এই জয়ে ৭১ রান করে ম্যাচসেরা হয়েছেন মুশফিকুর রহিম। বোলিংয়ে ৩ উইকেট নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
স্কোরবোর্ডে ৩ রান তুলতেই মাশরাফি-রুবেলের যৌথ আঘাতে ৩ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। সেই ধাক্কা সাময়িকভাবে সামলে উঠলেও ম্যাচজয়ের মতো রান তাড়া করতে পারেনি আফগান ব্যাটসম্যানরা। উইকেট হারিয়েছে নিয়মিত বিরতিতে।
মাশরাফির করা প্রথম ওভারের শেষ বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হন জাভেদ আহমাদি। পরের ওভারে বোলিং করতে এসে প্রথম বলেই আফসার জাজাইকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন রুবেল হোসেন।
নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসে আসগর স্তানিকজাইকে স্লিপে মাহমুদুল্লাহর ক্যাচ বানান মাশরাফি।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৬২ রানের জুটি গড়ে তোলেন নওরোজ মঙ্গল এবং সামিউল্লাহ শেনওয়ারি। তবে ২৩তম ওভারে মাহমুদুল্লাহ’র বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে স্কয়ার লেগে রুবেলের ক্যাচে পরিণত হন নওরোজ।
দলীয় ৭৮ রানে শেনওয়ারি রান আউট হয়ে ফিরে গেলে নাজিবুল্লাহকে নিয়ে জুটি গড়েন আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী। ১৩৬ রানের মাথায় সাকিবের টার্ন করা বল ভেতরে ঢুকলে এলবিডব্লুর শিকার হন নাজিবুল্লাহ। পরের ওভারে ৪৪ রান করা নবীকে ফিরিয়ে দেন মাশরাফি।
জয়ের সুবাস পাওয়া বাংলাদেশের শেষের কাজটুকু সারেন সাকিব আল হাসান আর তাসকিন আহমেদ।
সাকিব আল হাসান ৪৩ রানে নেন ২ উইকেট। তবে ৯ ওভার বল করে ২ মেডেনের পাশাপাশি ২০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সেরা বোলিং করেছেন মাশরাফি।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করে মুশফিক-সাকিবের দুই ফিফটিতে ৫০ ওভারে ২৬৭ রান তোলে বাংলাদেশ।
সকালে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। দেখে শুনেই ব্যাটিং শুরু করেন এনামুল হক এবং তামিম ইকবাল। প্রথম দশ ওভারে এই জুটি স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৩৮ রান।
১৫তম ওভারে মিরওয়াইজ আশরাফের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তামিম। মিরওয়াইজের পরের ওভারে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন এনামুলও। তামিম করেছেন ১৯ আর এনামুল ২৯।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫০ রান যোগ করেন সৌম্য সরকার-মাহমুদুল্লাহ। শাপুর জাদরানের বলে এলবিডব্লু হওয়া সৌম্য ফেরেন ২৫ বলে ২৮ রান করে। ৩ চারের পাশাপাশি গ্যালারিতে বল আছড়ে ফেলা বিশাল এক ছক্কা ছিল সৌম্যর ইনিংসে।
সাকিব ক্রিজে থিতু হওয়ার আগে আউট হন মাহমুদুল্লাহও। শাপুর জাদরানের বাঁ হাতি পেসে খোঁচাতে গিয়ে উইকেট কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ১১৯ রানের মাথায় চতুর্থ উইকেট পতনের পর সাকিবের সঙ্গে জুটি বাঁধেন মুশফিকুর রহিম।
একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রান করা এই জুটি প্রথমে ইনিংস মেরামতে মনোযোগ দেন। এরমধ্যে ব্যক্তিগত ২৩ রান করে ক্যারিয়ারের ৪ হাজার রান পূর্ণ করেন সাকিব আল হাসান। এটি বাংলাদেশের পক্ষে কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ।
সাকিব-মুশফিকের পঞ্চম উইকেট জুটিতে ১১৪ রান আসে। ৪৩ বলে ফিফটি করা সাকিব আউট হন ৬৩ রান করে। সাকিবের শিকারি হামিদ হাসানের বলে বোল্ড হন সাব্বির রহমানও।
শেষের দিকে মাশরাফি ছাড়া বাকি ব্যাটসম্যানরা রানই করতে পারেননি। শেষ ৫ ব্যাটসম্যানের মধ্যে মাশরাফির ১৪ ছাড়া বাকিদের ব্যাট থেকে এসেছে ৭ রান।
পঞ্চাশতম ওভারের শেষ বলে তাসকিন বোল্ড হলে ২৬৭ রানে অলআউট হয়ে বাংলাদেশ।
দলের পক্ষে ৫৬ বলে সর্বোচ্চ ৭১ রান করেছেন মুশফিকুর রহিম। সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে এসেছে ৫১ বলে ৬৩ রান।
আফগানিস্তানের হয়ে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন শাপুর জাদরান, মিরওয়াইজ আশরাফ, আফতাব আলম এবং হামিদ হাসান।
বাংলাদেশ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ২১ ফেব্রুয়ারি স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ:
৫০ ওভারে ২৬৭/১০ (মুশফিক ৭১, সাকিব ৬৩, এনামুল ২৯, সৌম্য ২৮, মাহমুদুল্লাহ ২৩; শাপুর ২/২০, মিরওয়াইজ ২/৩২, আফতাব ২/৫৫)
আফগানিস্তান:
৪২.৫ ওভারে ১৬২/১০ (মোহাম্মদ নবী ৪৪, সামিউল্লা শেনওয়ারি ৪২, নওরোজ মঙ্গল ২৭; মাশরাফি ৩/২০, সাকিব ২/৪৩)
ফল: বাংলাদেশ ১০৫ রানে জয়ী
ম্যান অব দি ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম