রোববার থেকে ৭২ ঘন্টার হরতাল
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ

চলমান টানা অবরোধের মধ্যে আবার দেশব্যাপী ৭২ ঘণ্টার সর্বাত্মক হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। রোববার সকাল ছয়টা থেকে বুধবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত এই হরতাল চলবে বলে শনিবার দুপুরে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
বিবৃতিতে বলা হয়, জনগণের প্রত্যাশা ছিল ইতিমধ্যে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং জনদাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ঘোষণা দেবে।” কিন্তু সরকারের মধ্যে এ ধরনের কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত না হওয়ায় আবার হরতালের ডাক দিতে হয়েছে।
একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন, জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে এবং দেশব্যাপী ক্রসফায়ারের মাধ্যমে নেতাকর্মীকে হত্যা ও গুলি করে পঙ্গু ও আহত করা, দেশব্যাপী গণগ্রেফতারের প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে এই হরতাল পালিত হবে বলে বিবৃতিতে বলা হয়।
বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আইনি শাসনের শূন্যতা, বিচারিক নৈরাজ্য, পুলিশি তাণ্ডব ও রাষ্ট্রের সব অঙ্গের অবসায়নের মধ্য দিয়ে অবৈধ ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে উন্মাদনায় লিপ্ত আওয়ামী লীগ। ফলে জাতীয় জীবন অবরুদ্ধ, গণতন্ত্র বন্দী বাকশালি খাঁচায়।
ভয়ভীতি প্রদর্শন ও নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভখ্যাত গণমাধ্যমের চোখে পট্টি লাগিয়ে দিয়ে প্রকারান্তরে সরকার নিজেই অন্ধত্ববরণ করেছে দাবি করে সালাহ উদ্দিন সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রয়াস ব্যর্থ হতে বাধ্য।
সালাহ উদ্দিন বলেন, শাসকগোষ্ঠীর অন্ধপ্রতিহিংসা ও ক্ষমতালিপ্সার খেলায় দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র বিপন্নপ্রায়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সব পথ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বর্তমান সংবিধান মানবিক ও নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন করে একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। ক্রসফায়ারের মাধ্যমে দেশব্যাপী অব্যাহত গণহত্যা, গণগ্রেফতার, মামলা-হামলা ও চূড়ান্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে সরকার সারা বিশ্ব থেকে বাংলাদেশকে একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অঘোষিত গৃহবন্দিত্ব অবস্থায় খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে অভুক্ত রেখে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে সরকার। প্রতিহিংসার মাত্রাজ্ঞানহীন এমন নিষ্ঠুরতা ও বাড়াবাড়ি দেশের জনগণকে স্বভাবতই চরমভাবে বিক্ষুব্ধ করেছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক মহল ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। বিবৃতিতে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনকে এ ব্যাপারে যথাযথ ও দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হয়।
প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষমূলক অপরাজনীতি থেকে বেরিয়ে গণদাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দেশের শতকরা ৯০ ভাগ জনগণ নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চায়। প্রকৃত জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থাই রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারে। সমগ্র জাতি আজ সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রামে লিপ্ত। জনগণের ন্যায়সংগত আন্দোলন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত প্রায়।
বিবৃতেত বলা হয়, জনগণের প্রত্যাশা ছিল ইতিমধ্যে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং জনদাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ঘোষণা দেবে। কিন্তু এ ধরনের কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত না হওয়ায় আবারো একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে, দেশব্যাপী ক্রসফায়ারের মাধ্যমে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে হত্যা ও গুলি করে পঙ্গু ও আহত করার প্রতিবাদে, দেশব্যাপী বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীসহ নিরীহ জনগণকে গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে, জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র পূণঃরুদ্ধারের দাবিতে, বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ ও কুক্ষিগতকরণের প্রতিবাদে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অভুক্ত রেখে হত্যার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে, সাংবাদিক নির্যাতন ও সংবাদ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের প্রতিবাদে, জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে, অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে ২০ দলীয় জোটের উদ্যোগে চলমান অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি পুনরায় আগামীকাল ১৫ ফেব্রুয়ারী রোজ রোববার সকাল ছযটা থেকে বুধবার সকাল ছযটা পর্যন্ত দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল পালিত হবে।
চলমান অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি ঘোষিত ৭২ ঘণ্টার হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে ২০ দলীয় জোটের নেতা খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।