শাস্তির বিধান অপরিবর্তিত রেখেই খসড়া চূড়ান্ত হচ্ছে ‘সড়ক পরিবহন আইন’
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
অবশেষে সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। তবে দুর্ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির বিধান অপরিবর্তিতই রয়ে গেছে। নতুন যুক্ত হয়েছে ক্ষতিপূরণ ও লাইসেন্সের পয়েন্ট কাটার শর্ত।
আইনটি সম্পর্কে জনমত যাচাই করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এর পর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করা হবে। পরে তা চূড়ান্ত করে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। এর পর আইনটি সংসদে উত্থাপন করা হবে।
খসড়া আইনের তথ্যমতে, বিপজ্জনকভাবে যানবাহন চালানোর জন্য সড়ক দুর্ঘটনায় কারো মৃত্যু হলে চালককে তিন থেকে সাত বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আর ১৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে। বিদ্যমান আইনেও দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য চালকের একই শাস্তি রয়েছে। এক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারদের কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ও লাইসেন্সের বিপরীতে আট পয়েন্ট কাটার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি কমপক্ষে তিন বছরের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে যানবাহন চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের শর্তও প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিপজ্জনকভাবে যানবাহন চালানোর কারণে কেউ আহত হলে চালকের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। এটিও বিদ্যমান শাস্তির অনুরূপ। তবে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১ লাখ টাকা ও লাইসেন্সের পাঁচ পয়েন্ট কাটার শর্ত যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি তিন বছর বাধ্যতামূলক যানবাহন চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিধান রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। জনমত যাচাই, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের মতামত ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার পর এটি চূড়ান্ত করা হবে। এর আগ পর্যন্ত পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। তাই আপাতত শাস্তির বিধান বাড়ানো হয়নি। সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনে শাস্তির বিধান বাড়ানো যেতে পারে।
বিআরটিএর তথ্যমতে, ১৯৩৯ সালের ভারতীয় মোটরযান আইন কিছুটা পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রণয়ন করা হয়েছিল ‘দ্য মোটর ভেহিকলস অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩’। এর অধীনেই দেশের পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণ হয়ে আসছে। বর্তমানে এ খাতে অনেক পরিবর্তন আসায় বিদ্যমান আইনে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ফলে নতুন পরিবহন আইন প্রণয়নে দাতা সংস্থাগুলো চাপ দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কেস প্রকল্পের আওতায় পরিবহন আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়। ২০১১ সালে ‘সড়ক পরিবহন ও চলাচল আইন’ নামে খসড়া চূড়ান্ত করা হলেও পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের চাপে তা আবার পরিবর্তন করা হয়। এক্ষেত্রে কমানো হয় বিভিন্ন শাস্তির বিধান। এর ভিত্তিতে সড়ক পরিবহন আইন খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বেশকিছু বিধান বাদ দেয়া হয়েছে। ২০১১ সালের খসড়ায় ২২টি অধ্যায় থাকলেও বর্তমানে তা ১৫তে নামিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া ২০১১ সালের খসড়া আইনে ৩৭২টি ধারা থাকলেও বর্তমানে তা কমিয়ে ২৪২টি করা হয়েছে।
জানা গেছে, পরিবহন আইনে লাইসেন্স ছাড়া যানবাহন চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ১৮ বছরের কম বয়সী কেউ লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য হবে না। তবে ভারী যানবাহন চালানোর জন্য ন্যূনতম বয়স ২১ বছর হতে হবে। আর পেশাদার চালকের ক্ষেত্রে ৬০ ও অপেশাদার চালকের ক্ষেত্রে ৬৫ বছরের অধিক বয়সী ব্যক্তি লাইসেন্স নিতে পারবেন না। তবে লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে শাস্তি আগের মতোই রয়ে গেছে।
আইনের আওতায় চালকদের লাইসেন্সের বিপরীতে পয়েন্টের ব্যবস্থা রাখা হবে। আইন ভঙ্গ করলে বা দুর্ঘটনা ঘটালে শাস্তির পাশাপাশি লাইসেন্সের কিছু পয়েন্ট কাটা হবে। এভাবে পুরো পয়েন্ট কাটা হয়ে গেলে চালকের লাইসেন্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। তখন তিনি আর কোনো যানবাহন চালাতে পারবেন না।
বিদ্যমান মোটর ভেহিকল অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩-এ শাস্তির পরিমাণ ছিল খুব সামান্য। রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় কী কী কাজ অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, তার সংখ্যাও সীমিত ছিল। নতুন খসড়া আইনে তা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। প্রত্যেক অপরাধের ক্ষেত্রেই দণ্ড প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।
নতুন আইনে চোরাই গাড়ি, যন্ত্রাংশ, গাড়ির জাল নম্বর রাখা ও ব্যবহার, গাড়ির ডকুমেন্ট জালিয়াতি, রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স সংগ্রহে মিথ্যা সাক্ষ্য ও ভুয়া কাগজপত্র দেখানো হলে জরিমানা ও কারাদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ট্যাক্স আরোপ করার জন্য পৃথক ট্যাক্স অফিসার নিয়োগ, দুর্ঘটনা ঘটিয়ে দ্রুত পলায়নকারী গাড়িচালকদের বিরুদ্ধে শাস্তি, ইন্স্যুরেন্স পলিসির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা, ইন্স্যুরেন্স ছাড়া চলাচলকারী গাড়ির মালিকদের দায় ও ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবিত আইনে আরোপিত ট্যাক্স নির্ধারিত সময়ে পরিশোধে বাধ্যবাধকতা, ট্যাক্স পরিশোধ করা না হলে গাড়ি আটক, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট স্থগিত রাখা ও সড়ক ব্যবহারের জন্য লেভি আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে। চলন্ত অবস্থায় সেলফোন ও ইয়ারপ্লাগ ব্যবহার, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, সিটবেল্ট না বাঁধা, নির্দিষ্ট সীমার অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, হাইওয়ে কোড ও সিগনাল অমান্য করায় বিভিন্ন রকম শাস্তির প্রস্তাব করা হয়েছে।
আইনের অধীনে সরকার চাইলে জেলা অনুযায়ী বা যে কোনো এলাকার জন্য গাড়ির সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দিতে পারবে। কোনো প্রতিষ্ঠান, দফতর, পরিবার বা ব্যক্তির ক্ষেত্রেও সরকার একই ধরনের ক্ষমতা সংরক্ষণ করবে।
খসড়া আইন প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক জানান, ২০১১ সালে প্রণীত খসড়ায় বেশকিছু জটিলতা থাকায় তা পরিমার্জন করা হয়েছে। পরিবর্তিত নতুন আইনটি দ্রুত চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। প্রয়োজনে এক্ষেত্রে আরো পরিবর্তন আনা যাবে।