নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ অভিযানে গ্রেফতার পূর্ব পুলিশের জন্য ৯ নির্দেশনা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, ৭:১২ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে চলমান গ্রেফতার অভিযানের আগে ৯টি নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এই নির্দেশনা জারি করে। এরপর তা ডিএমপির বিভিন্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। সম্প্রতি কতিপয় ঘটনায় পুলিশের কিছু সদস্য গ্রেফতার বাণিজ্যে জড়াচ্ছেন। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ আসছে যে, গ্রেফতার অভিযানে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিরপরাধ ব্যক্তিরাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে এই কড়া নির্দেশনা জারি করা হলো।
নির্দেশনায় মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে হয়রানিমূলকভাবে গ্রেফতার না হন সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। মূল অপরাধীরা যাতে ছাড়া না পায় তার নিশ্চয়তা বিধানও করতে হবে।
এ ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, পুলিশের অন্যতম দায়িত্ব জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে পুলিশকে কাজ করতে হবে। পুলিশের কাজে নিরপরাধ কোনো মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, তা সর্বাগ্রে বিবেচনা করতে হয়। তাই কিছু বিষয়ের ওপর বিশেষভাবে খেয়াল রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, অবরোধ শুরুর পর সারাদেশে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার করা হয় বিএনপি-জামায়াতের অন্তত ১২ হাজার নেতাকর্মী। রাজধানীতে গ্রেফতার হয় সহস্রাধিক। তাদের মধ্যে ৭৪০ জন বিএনপির নেতাকর্মী, বাকিরা জামায়াত-শিবিরের।
পুলিশের নির্দেশনায় বলা হয়, নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি যাতে হয়রানিমূলকভাবে গ্রেফতার হয়ে থানায় সোপর্দ না হন এ বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা জরুরি। ব্লক রেইড বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট ঘটনাস্থল থেকে কোনো ব্যক্তিকে আটকের পর স্থানীয় ডিসি, এডিসি ও এসি যাচাই করে নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি না করার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। অন্যায়ভাবে বা কারও মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা যাবে না। প্রতিদিন থানা জিডি ও হাজত রেজিস্ট্রার পর্যালোচনা করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের থানায় নেওয়ার পর সঠিকভাবে রেজিস্ট্রারভুক্ত হয়েছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করবেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জিডি ও হাজত রেজিস্ট্রার ছাড়া যাতে গ্রেফতার হওয়া কোনো ব্যক্তি থানা-হাজত কিংবা অন্য কোনো কক্ষে অবস্থান না করে সে ব্যাপারটি ডিসি, এডিসি ও এসিকে জানাতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়মিত তদারকি করবেন। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কোনো দল কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ডিসিকে জানাতে হবে। ডিসি বিষয়টি অবহিত করবেন অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি অ্যান্ড প্রসিকিউশন) ও যুগ্ম কমিশনারকে (ডিবি)। বেআইনিভাবে কোনো ব্যক্তিকে যাতে ডিবি কার্যালয়ে অন্তরীণ করা না হয় তা অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি অ্যান্ড প্রসিকিউশন), যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) ও সংশ্লিষ্ট সব ডিসি নিশ্চিত করবেন। পুলিশের ভাবমূর্তি ও সরকারের সুনাম রক্ষা করতে হবে। চলমান সন্ত্রাসী ও নাশকতা দমন অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ডে কেউ জড়ালে বিভাগীয় কঠোর শাস্তি ও ক্ষেত্রবিশেষে ফৌজদারি আইনের আওতায় নেওয়া হবে। এমনকি যুগ্ম কমিশনার এবং তার চেয়ে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিজ নিজ অধীনস্থ ইউনিটে আকস্মিক পরিদর্শন করবেন। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানিমূলক গ্রেফতারের শিকার হচ্ছেন কি-না তা তদারকি করবেন।
পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, চলমান অবরোধ-হরতালের নামে সন্ত্রাসীদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের প্রতিহত করতে সর্বোচ্চ কঠোর হবে পুলিশ-র্যাব ও বিজিবি। মাঠপর্যায়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সেই ধরনের নির্দেশনা দেওয়া আছে। তবে নৈরাজ্যকারীদের প্রতিহত করতে গিয়ে যাতে নিরপরাধ কেউ পুলিশের অপেশাদার আচরণের শিকার না হন সেটিও নিশ্চিত করতে চান দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, জামায়াত-শিবির প্রভাবিত ১৫ জেলায় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ অভিযান চলছে। শিগগিরই আরও কয়েকটি জেলায় অভিযান চালানো হবে। পণ্য চলাচলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে মহাসড়কের আশপাশের জেলাগুলোতে দ্রুত গঠন করা হচ্ছে ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি’। এমনকি যেসব এলাকায় নাশকতা ও নৈরাজ্য বেশি হচ্ছে, সেখানকার জনপ্রতিনিধিদের নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা মোকাবেলা করার নির্দেশনা রয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে।