জরুরি অবস্থা জারির মতো পরিস্থিতি কেউ সৃষ্টি করতে পারেনি— সংসদে শেখ হাসিনা
প্রকাশিত হয়েছে : ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে জরুরি অবস্থা জারি করার মতো পরিস্থিতি এখনো কেউ সৃষ্টি করতে পারেনি।
সংসদ নেতা শেখ হাসিনা গতকাল ৪ ফেব্রুয়ারি বুধবার সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে এ কথা বলেন। এ–সম্পর্কিত সম্পূরক প্রশ্নে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানতে চান, যাঁরা টক শোতে অংশ নিয়ে উসকানি দিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জরুরি অবস্থা দেওয়ার মতো অলীক-অলৌকিক স্বপ্ন যাঁরা দেখছেন, তাঁরা দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে চান। কিন্তু আমাদের রক্ত থাকতে তা হতে দেব না। ইমার্জেন্সি (জরুরি অবস্থা) লাগবে কেন? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। এ ধরনের সন্ত্রাস কীভাবে দমন করতে হয় আমরা জানি। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে।’
জরুরি অবস্থার অতীত প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একসঙ্গে রাষ্ট্রপ্রধান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ায় ইয়াজউদ্দিন সাহেব ইমার্জেন্সি দিতে পেরেছিলেন। এখন ইমার্জেন্সি দিতে হলে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিত পাঠাতে হবে। তখন রাষ্ট্রপতি ইমার্জেন্সি জারি করতে পারবেন। কিন্তু আমরা সুশাসন দিতে পারি। পরিস্থিতি নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছি। সুতরাং ইমার্জেন্সি দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা টক শো করেন, তাঁদের বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া কে দেবেন? তাঁদের টার্গেট তো আমি। কিছু লোক আছেন, গণতান্ত্রিক পন্থা তাঁদের ভালো লাগে না। অসাংবিধানিক পন্থা এলে তাঁরা ভালো থাকেন, তাঁদের গুরুত্ব বাড়ে। তাই তাঁরা ব্যস্ত থাকেন অসাংবিধানিক পন্থা আনা যায় কি না। ওই স্বপ্ন দেখে লাভ হবে না। আমরা দেশকে আর অসাংবিধানিক পন্থায় ঠেলে দেব না। জনগণ এটা চায় না। কেউ এটা করতে চাইলে জনগণ রুখে দেবে। সংবিধানেও অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা দখলের ক্যাপিটাল পানিশমেন্টের (সর্বোচ্চ শাস্তি) বিধান রয়েছে।’
সরকারি দলের আবদুল মতিন খসরুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হরতালের মধ্যেও পরীক্ষা হতে পারত। কিন্তু আমার কাছে শিক্ষার্থীর জীবন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কোনো হিতাহিত জ্ঞান নেই। কারণ, তিনি যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ভুল করেছেন, সেই ভুলের খেসারত তিনি নিজে দিচ্ছেন না। দিতে হচ্ছে দেশের জনগণকে। তিনি এ ধরনের মানসিক বিকৃতির মধ্যে চলছেন। শিশুদের মারতে দ্বিধা করবেন না উনি। পরে পরীক্ষা হলেও শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে পাস করতে পারবে।’
সানজিদা খানমের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, নাশকতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা যাতে জামিন না পান, সে বিষয়ে সরকারি আইনজীবীদের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কিছু মানুষ আছেন, তাঁরা এ অবস্থার জন্য রাজনীতিকে গালি দেন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত তো রাজনীতি করছে না। রাজনীতিকে কেন গালি দেওয়া হচ্ছে?
নাসিমা ফেরদৌসীর নির্ধারিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ হতে বিএনপি-জামায়াত কোনো কারণ ছাড়াই অবরোধ-হরতালের নামে নিরীহ মানুষের ওপর বোমা নিক্ষেপ করে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারছে। বাস, ট্রেন আর লঞ্চে আগুন দিয়ে সরকারি-বেসরকারি সম্পদের ক্ষতি করছে। কিন্তু জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সহিংসতার সঙ্গে জড়িত এবং এর হুকুমদাতাদের আইনের আওতায় আনতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নাশকতার পরিকল্পনকারী ও মদদদাতাদের তালিকা করে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা সম্ভাব্য নাশকতাকারীদের অবস্থান শনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করছে।
প্রশ্নোত্তর পর্বের আগে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়।