তিতাস গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব খারিজ
প্রকাশিত হয়েছে : ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, ৯:০১ পূর্বাহ্ণ
অর্থ-বাণিজ্য ডস্কে ::
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। তাদের মতে, বর্তমান মূল্যহার বিবেচনায় নিলেও চলতি অর্থবছর (২০১৪-১৫) প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৩১৩ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রাজস্ব থাকবে। তাই তিতাসের গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রয়োজন নেই।
বিতরণ কোম্পানিগুলো পৃথক প্রস্তাব জমা দিলেও একই হারে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির আবেদন করে। আবাসিক খাতে সর্বোচ্চ ১২২ দশমিক ২২ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে তারা। আবাসিকে গ্যাসের দাম দুই চুলার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ৪৫০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়। এক চুলার ক্ষেত্রে প্রস্তাব করা হয় বিদ্যমান ৪০০ টাকার স্থলে ৮৫০ টাকা। এছাড়া আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে যারা মিটার ব্যবহার করেন, তাদের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট (এক হাজার ঘনফুট) গ্যাসের দাম ১৪৬ টাকা ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৩৫ টাকার প্রস্তাব করে তিতাসসহ অন্যান্য বিতরণ কোম্পানি। এর পর সবচেয়ে বেশি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে ক্যাপটিভ পাওয়ারে। এ খাতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১১৮ টাকা ২৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৪০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে তিতাসের প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি হয়। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবনে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি জানায়, কস্ট প্লাস ভিত্তিতে পরিচালনার জন্য বিতরণ আয় প্রতি ঘনমিটারে ২৯ পয়সা নির্ধারণই যথেষ্ট। যদিও বর্তমানে ঘনমিটারপ্রতি বিতরণ আয় ৫৫ পয়সা। পাশাপাশি পরিচালন, সুদ, সঞ্চালনসহ অন্যান্য খাত থেকে আরো ৪২ পয়সা আয় করে তিতাস। সব মিলিয়ে ঘনমিটারপ্রতি তিতাসের আয় বর্তমানে ৯৭ পয়সা।
বিইআরসির চেয়ারম্যান এআর খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে কমিশনের সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ, প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. মাকসুদুল হক ও রহমান মুরশেদ উপস্থিত ছিলেন। ভোক্তা প্রতিনিধি হিসেবে কথা বলেন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম, অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ।
তিতাসের প্রস্তাবে বেশকিছু অসঙ্গতিও তুলে ধরে মূল্যায়ন কমিটি। ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ডে (ডব্লিউপিপিএফ) অর্থ স্থানান্তর ও তা বণ্টন প্রক্রিয়ায় অস্পষ্টতা রয়েছে বলে জানানো হয়। কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভার খরচের হিসাব পৃথকভাবে অডিট রিপোর্টে দেখেনি কমিটি। গ্রাহক শ্রেণীভিত্তিক বিতরণ আয়ও দেখানো হয়নি নিরীক্ষিত বার্ষিক হিসাব প্রতিবেদনে। উল্লেখ করা হয়নি গ্রাহক শ্রেণীভিত্তিক গ্যাস ক্রয়-বিক্রয়ের পরিমাণ। পৃথকভাবে উল্লেখ নেই ন্যূনতম চার্জ ও গ্যাসের তাপন মূল্য থেকে আয়ের হিসাব।
মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মিটারবিহীন গৃহস্থালি শ্রেণীতে এক ও দুই চুলার সংখ্যা এবং মিটারযুক্ত গৃহস্থালির ক্ষেত্রে গ্যাস ভোগের পরিমাণ উল্লেখ নেই। এছাড়া ২০১৩-১৪ অর্থবছরে গৃহস্থালিতে অবৈধ গ্রাহকদের কাছ থেকে কোম্পানিটি ১৭ কোটি টাকা আয় করলেও গ্যাস বিক্রির আয়ে তা দেখানো হয়নি।
একই দিন বিকালে গণশুনানি হয় পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (পিজিসিএল) প্রস্তাব নিয়ে। শুনানিতে পিজিসিএলের বর্তমান মূল্যহার ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ বাড়ানোর পক্ষে মত দেয় কারিগরি কমিটি। কারণ বর্তমান বিবেচনায় চলতি অর্থবছর প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব ঘাটতি হবে ২৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
এদিকে দেশে গ্যাস ব্যবহারে বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, বৈষম্যের কারণে পণ্য উৎপাদন খরচে পার্থক্য হচ্ছে। এটা সমন্বয় হওয়া উচিত। বিইআরসি, বিতরণ কোম্পানি ও গ্রাহক— সব পর্যায় থেকেই দাম সমন্বয় প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে। বিজিএমইএ, রাজনৈতিক দল ও গ্রাহকদের পক্ষ থেকে গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দাবি উঠেছে।
এর আগে গত সোমবার গ্যাস সঞ্চালন চার্জ নতুন করে না বাড়িয়ে কমানোর পক্ষে মত দেয় কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। বিদ্যমান সঞ্চালন মূল্যহার ৩২ থেকে কমিয়ে ১৩ পয়সা করার কথা বলা হয়েছে। যদিও চলতি অর্থবছর এটি ৪৭ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয় গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)।
উল্লেখ্য, আজ বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি হবে। জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির প্রস্তাবের ওপর শুনানি হবে আগামীকাল।
সর্বশেষ ২০০৯ সালের আগস্টে সব ধরনের গ্যাসের দাম ১১ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়ায় বিইআরসি। এছাড়া ২০১১ সালে দুই দফায় সিএনজির দাম বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার ৩০ টাকা করা হয়। এর পর ২০১২-এর মে মাসে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে দেয়া পেট্রোবাংলার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় কমিশন।
বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৭৯ টাকা ৮২ পয়সা। নতুন প্রস্তাবনায় তা ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৮৪ টাকা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সার কারখানায় ৭২ টাকা ৯২ পয়সা থেকে ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ বাড়িয়ে ৮০ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১১৮ টাকা ২৬ পয়সা থেকে ১০২ দশমিক ৯৪ শতাংশ বাড়িয়ে ২৪০ টাকা ও শিল্পে ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা থেকে ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ বাড়িয়ে ২২০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আর সিএনজি স্টেশনে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে কোম্পানিগুলো। এতে গ্রাহক পর্যায়ে ৩০ টাকার পরিবর্তে প্রতি ঘনমিটারের দাম পড়বে ৪০ টাকা।