সিপ্রোফ্লক্সাসিন ট্যাবলেটে ওষুধ কোম্পানিগুলোর গলাকাট মুনাফা
প্রকাশিত হয়েছে : ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট সিপ্রোফ্লক্সাসিনে অস্বাভাবিক মুনাফা করছে ওষুধ কোম্পানিগুলো। প্রতি পিস ট্যাবলেট তৈরিতে মোট খরচ পড়ে ১ টাকা ৫২ পয়সা। কিন্তু ভোক্তাদের তা কিনতে হচ্ছে ১৫ টাকায়। সে হিসাবে প্রতিটি ট্যাবলেটে কোম্পানিগুলো ৯৮৭ শতাংশ মুনাফা করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওষুধ কোম্পানিগুলোর অতি মুনাফাপ্রবণতার কারণে ঠকতে হচ্ছে ভোক্তাদের। তবে কোম্পানিগুলো বলছে, ওষুধের মূল্য নির্ভর করে কাঁচামাল ও গুণগত মানের ওপর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ট্যাবলেট তৈরিতে মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয় ‘অ্যাকটিভ সিপ্রোফ্লক্সাসিন’। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি সিপ্রোফ্লক্সাসিনের কাঁচামাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬৫০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় প্রতি কেজি কাঁচামালে ৫০০ মিলিগ্রামের ২ হাজার ট্যাবলেট তৈরি করা যায়। এ হিসাবে প্রতিটি ট্যাবলেট তৈরিতে কাঁচামাল বাবদ ব্যয় হয় ১ টাকা ৩৩ পয়সা থেকে ১ টাকা ৪০ পয়সা। এছাড়া ফয়েলিং, লেবেলিং, প্যাকেজিংসহ খরচ পড়ে ৫ পয়সা, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মেশিনারি খরচ ১০ পয়সা এবং কোম্পানির যৌক্তিক লাভ ২ পয়সাসহ একটি ট্যাবলেটে মোট খরচ পড়ে ১ টাকা ৫২ থেকে ১ টাকা ৫৯ পয়সা। কিন্তু বাজারে প্রতিটি ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। তবে দু-একটি কোম্পানি দাম কমিয়েও বিক্রি করছে এ ট্যাবলেট।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের পরিচালক (বিপণন) মিজানুর রহমান জানান, ওষুধের দাম নির্ভর করে মূলত কাঁচামাল, গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস (জিএমপি) ও গুণগত মানের ওপর। বাজারে ৮-১০ ধরনের কাঁচামাল পাওয়া যায়। কে কোন কাঁচামাল ব্যবহার করছে, সেটা বলা মুশকিল। তবে ওষুধের দামের পার্থক্য সারা বিশ্বে আছে।
রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকার ঔষধের দোকানে অ্যালবিয়ন ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের তৈরি প্রতিটি সিপ্রোফ্লক্সাসিন ট্যাবলেট ৩ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রিস্টল ফার্মা লিমিটেডের তৈরি ট্যাবলেটও। অথচ স্কয়ার, বেক্সিমকো, ইনসেপ্টা, এসিআই, একমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির প্রতিটি ট্যাবলেট ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের ওষুধ শিল্প ও ওষুধনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্ব ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রতিটি সিপ্রোফ্লক্সাসিন ট্যাবলেট তৈরিতে ১ টাকা ৫০ পয়সার বেশি খরচ হয় না। একটি মেশিনে প্রতি ঘণ্টায় ১ লাখ ও দৈনিক ৮ লাখ ট্যাবলেট তৈরি করা যায়। প্রতি ট্যাবলেটে মেশিনারিজসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় পড়ে ৩-৫ পয়সা। প্যাকেজিং, লেবেলিং ও অন্যান্য ব্যয় হয় আরো ৫ পয়সা। তবে দেশে ওষুধের দাম কমাতে হলে সরকারকে ভূমিকা নিতে হবে। সরকারের নজরদারির অভাবে কোম্পানিগুলো মোটা অঙ্কের মুনাফা করছে বলে তিনি মনে করছেন।
বেক্সিমকো ফার্মার একজন কর্মকর্তা জানান, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ট্যাবলেটের মূল্য নির্ভর করছে কাঁচামাল, কোম্পানির মেশিনারিজ, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতনসহ মোট ব্যয়ের ওপর। প্রতিটি সিপ্রোফ্লক্সাসিন ট্যাবলেটের ভ্যাট, মার্কেটিং, প্যাকেজিং খরচ পড়ে ৫-৬ টাকা এবং কাঁচামালে ৫ টাকা খরচ হয়। সে হিসাবে কোম্পানির লাভ খুব বেশি থাকে না। ওই কর্মকর্তার যুক্তি হলো, প্রতি কেজি কাঁচামাল ২ হাজার ৭০০ থেকে ১০ হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়। এ কারণে ব্যয় বেড়ে যায়।
তবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন, ওষুধের বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে না থাকায় কোম্পানিগুলো মোটা অঙ্কের মুনাফা করছে। এ কারণে দেড়-দুই হাজার টাকার ওষুধ ১০ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। ওষুধের মূল্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করলে দাম অর্ধেকে নেমে আসবে। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হচ্ছে, যেসব কোম্পানির ওষুধ ৩-৪ টাকায় পাওয়া যায়, সেগুলো খেয়ে মানুষের রোগ নিরাময় হচ্ছে। তবে কেউ যদি মানহীন বা খারাপ ওষুধ তৈরি করে, তাহলে সেসব কোম্পানির ওষুধ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কারখানা বন্ধ করে দেয়া উচিত।
ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানান, তিন-চার বছর আগে প্রতিটি সিপ্রোফ্লাক্সাসিন ট্যাবলেটের মূল্য ছিল ১০ টাকা। এক বছর পর তা বাড়িয়ে ১২ টাকা করা হয়। গত বছর দুই দফায় ৩ টাকা বাড়িয়ে দাম ১৫ টাকা করা হয়। কোনো কারণ ছাড়াই ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রতি বছরই ট্যাবলেটের মূল্য বাড়াচ্ছে। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো উৎপাদন খরচের চেয়ে বিপণনে বেশি খরচ করছে। এ কারণে দামও বাড়ছে।