‘পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলতে থাকবে’ — খালেদা জিয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জানুয়ারি ২০১৫, ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
নিজ কার্যালয়ে টানা ১৬ দিনের ‘অবরুদ্ধ’ অবস্থা থেকে ‘মুক্ত’ হয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘সারা দেশে শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছি। কর্মসূচি চলছে। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তা চলতে থাকবে।’
গতকাল ১৯ জানুয়ারি রোববার দিবাগত রাত পৌনে তিনটায় খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ের দুই ফটক ও সামনের রাস্তা থেকে পুলিশ, জলকামান এবং দুটি প্রিজন ভ্যান সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর গতকাল বিকেলে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকের পর সন্ধ্যা সাতটায় সংবাদ সম্মেলন করে খালেদা জিয়া অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আবারও আহ্বান জানান।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অবরোধের মধ্যেও ঢাকাসহ জেলাভিত্তিক হরতাল ডাকা হতে পারে। এর অংশ হিসেবে আজ ২০ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় ৩৬ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে বিএনপি।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, সমাবেশের অনুমতি চাইলে সহযোগিতা করা হবে। অনুমতি দিলে কি সমাবেশ করবেন? জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেখুন, আমাদের একটি কর্মসূচি চলছে। এ মুহূর্তে আমাদের অন্য কোনো কর্মসূচি নেই।’
১৬ দিন পর ‘অবরুদ্ধ’ অবস্থা থেকে ‘মুক্ত’ হলেও খালেদা জিয়া গতকাল সারা দিন কার্যালয় থেকে বের হননি। দুপুরের দিকে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী ছাড়া আর কেউ তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি। ‘মুক্ত’ হওয়ার পর সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে এ জন্য স্বাগত জানান খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীনেরা যদি শুভবুদ্ধি প্রণোদিত হয়ে আমার কার্যালয় থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়ে থাকে, তাহলে আমি তাকে স্বাগত জানাই।’
খালেদা জিয়াকে কেন অবরুদ্ধ করা হয়েছিল, আবার ১৬ দিন পর অবরোধ তুলে নেওয়া হলো—এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, খালেদা জিয়াকে অবরোধ করা হয়নি। আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল, ইজতেমার সুযোগ নিয়ে নাশকতা হতে পারে। এ জন্য খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল।
কার্যালয়ের সামনে থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে অবরোধের মধ্যে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা জোরদার করতে বাড়তি বাহিনী দরকার। তাই সেখান থেকে তাদের সরিয়ে আনা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপনার কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এখন আপনি কী করবেন? জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, ‘না, এটা আমার অফিস। আমার অফিসে আমার কাজ আছে। আমি আমার কাজ করব। যেহেতু অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে, আমার যেখানে ইচ্ছা হবে সেখানে যাব। তখন বুঝব অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
৩ জানুয়ারি রাত থেকে খালেদা জিয়া নিজের রাজনৈতিক দপ্তর গুলশান-২-এর ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়িতে ‘অবরুদ্ধ’ আছেন। ৫ জানুয়ারি ‘একতরফা’ সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে দুই দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে পরিস্থিতি সংঘাতময় হয়ে ওঠে। ২০-দলীয় জোটের সমাবেশ ঠেকাতে ৪ জানুয়ারি সরকার ও সরকারি দল সারা দেশে অঘোষিত অবরোধ আরোপ করে। এর ফলে সহিংসতায় ৫ জানুয়ারি চারজনের মৃত্যু হয়। এর আগের দিন বিকেল থেকে রাজধানীতে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুলিশ।
এরপর খালেদা জিয়া যেকোনো মূল্যে ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করার ঘোষণা দিলে তাঁকে অবরুদ্ধ করে পুলিশ। ৫ জানুয়ারি বিকেলে ‘অবরুদ্ধ’ অবস্থায় খালেদা জিয়া ৬ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে লাগাতার অবরোধের ঘোষণা দেন।
অবরোধমুক্ত হলেও গতকাল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে জিয়ার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য যাননি খালেদা জিয়া। প্রতিবছরই তিনি সেখানে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
অবরোধের মধ্যে হরতাল
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরের অবরোধ পরিস্থিতিকে উৎসাহব্যঞ্জক বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা। তবে রাজধানী ঢাকায় অবরোধ কর্মসূচির প্রভাব না পড়ায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নাখোশ। এই অবস্থায় অবরোধকে আরও কঠোর করতে রাজধানী ঢাকাসহ অঞ্চলভিত্তিক হরতাল ডাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার থেকে ৩৬ ঘণ্টার হরতাল ডাকা হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। ঢাকা ও খুলনা বিভাগে বুধ ও বৃহস্পতিবার হরতাল ডাকা হতে পারে।
এ ছাড়া মহাসড়ককেন্দ্রিক জেলাগুলোকেও পর্যায়ক্রমে হরতাল আহ্বানের জন্য বলা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানায়। ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলা থেকেও হরতাল আহ্বান করা হতে পারে।