অধ্যক্ষ ড. মুফতী মুহাম্মদ কাফীলুদ্দীন সরকার সালেহী
শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ওলী আল্লামা ছাহেব কিবলা ফুলতলী (রহ.)
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জানুয়ারি ২০১৫, ৯:২২ পূর্বাহ্ণ
বাংলাদেশের মানচিত্রের উত্তর-পূর্ব কোণে সুলতানে সিলেট বাবা শাহজালাল (রহ.) এবং সূফী ফতেখাঁর পূণ্যময় ভূমিতে আলোর পরশ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রাণাধিক প্রিয় মুর্শিদ, অলীয়ে কামিল, রাহনুমায়ে শরীয়ত, ফখরে মিল্লাত, হাদিয়ে জামান, হামেলে কোরআন, আফতাবে হিদায়েত, মাহতাবে বিলায়েত, শামসুল ওলামা, রঈসুল কুররা, ফখরুল মুহাদ্দেসীন, শাইখুল মুফাসসিরীন, আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব কিবলা (রহ.)।
১৯১৩ সালে সিলেট জেলার পূর্ব দিকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে জকিগঞ্জ উপজেলাধীন বাদে দেওরাইল পরগণার ফুলতলী গ্রামে বাবা শাহজালাল (রহ.) এর অন্যতম সফরসঙ্গী শাহ কামাল (রহ.) এর বংশের অধস্থন পুরুষ আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) একটি সম্ভ্রান্ত ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তখন ব্রিটিশ শাসন চলছিল। পাকিস্তান-ভারত বিভাজিত হয়নি। আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) এর শ্রদ্ধেয় পিতা জনাব মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ চৌধুরী একজন যুগ শ্রেষ্ঠ ফকিহ ও মোজাদ্দেদী এবং নকশবন্দী তরীকার আলিম ছিলেন।
আল্লামা ছাহেব কিবলার (রহ.) শৈশব কাল থেকেই অতিব সতী-সাধবী মাতা এবং ধর্মপরায়ণ শ্রেষ্ঠ বুযুুর্গ পিতার সান্নিধ্য পাওয়ায় তাঁর জীবন শৈশব থেকে ইসলামী তাহযীব, তামাদ্দুন এবং বুযুর্গীর ধারায় গড়ে উঠে।
বাল্য জীবন
আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) এর বাল্য জীবন এবং কৈশোর জীবন ছিল বেদনাভরা জীবন। স্নেহময়ী মাতা শৈশবকালেই বিদায় নেন। তাঁর কৈশোর জীবনে পদার্পণের আগেই বুযুর্গ পিতা ইহলোক ত্যাগ করেন। বাল্যকালে শ্রদ্ধেয় পিতা-মাতাকে হারিয়ে ছাহেব কিবলা (রহ.) পিছিয়ে পড়েন নাই। শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং গোটা বিশ্বের মানুষের দোরগোড়ায় ইসলাম প্রচারের বিশাল এক মিশন সফল করার জন্য বাল্যকাল থেকে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের জ্ঞানের ভাণ্ডারে ব্যুৎপত্তি অর্জনের জন্য, পথহারা বিশ্বের মানুষকে পথ দেখানোর জন্য তিনি খালিস নিয়তে অজিফা আমল সহকারে কোরআন ও হাদিসের অতল সাগরে ডুবুরী সেজে মণি-মুক্তা আহরণে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর বাল্যকালটি ছিল জ্ঞানের ভাণ্ডার পূরণের কাল এবং ইলমে মারিফাত ও তাছাউফে নিমগ্ন হওয়ার প্রাথমিক কাল।
শিক্ষা জীবন ও কৃতিত্ব
বাংলাদেশে আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ইতিহাস অতীব প্রাচীন। তখন এদেশে কোন কওমী মাদরাসা বা তার সিলেবাস ছিল না। গভীর জ্ঞানার্জনের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় যখন প্রতিষ্ঠা হয়নি তখন এদেশের পীর বুযুর্গ, অলি আউলিয়া ঘরে ঘরে কোরআন পড়া চালু করেন। মক্তব এবং মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময়কালের দ্বীনি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে ফুলতলী মাদরাসার ব্যাপক সাড়া পড়ে। ছাহেব কিবলা (রহ.) এই বিদ্যাপীঠের অন্যতম ছাত্র ছিলেন। ইসলাম ধর্মের প্রত্যেকটি বিষয়ে তাঁর প্রচুর মেধা ছিল। তিনি ইলমে কিরাতের জগতে শ্রেষ্ঠ অলী এবং ক্বারী আল্লামা ইয়াকুব বদরপুরী (রহ.) এর নিকট শিক্ষা গ্রহণ করেন। মাওলানা হাফিজ আব্দুর রউফ শাহবাজপুরী করমপুরী (রহ.) এর নিকট এলমে কেরাতের পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করেন।
ইলমে কিরাত হলো ধর্মীয় ইবাদত বন্দিগীর মূল বিষয়। একজন মুসলমান মাত্রই সহিহ শুদ্ধভাবে ফরয এবাদত আদায় করতে হলে পবিত্র কোরআনের গঠন ও পাঠন সহিহ হওয়া একান্ত প্রয়োজন। পবিত্র কোরআনের শুদ্ধ কিরাত জানা ফরয বিধায় তিনি ইলমে কিরাতে পাণ্ডিত্য অর্জনের জন্য ‘আহলে লিছান’ তথা পবিত্র মক্কা নগরীর শ্রেষ্ঠ ক্বারীদের নিকট শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে ১৩৫১ সালে পবিত্র কাবা শরীফে গমন করেন এবং সেকালের যুগ শ্রেষ্ঠ ক্বারী আহমদ হেজাজী (রহ.) এর নিকট ইলমে কিরাতের সর্বশেষ সনদ অর্জন করেন।
ইলমে হাদিস, তফসির ও ফিক্হের জ্ঞান ভাণ্ডারে আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.)
ছাহেব কিবলা (রহ.) বাল্য জীবনে সূফী এবং বুযুর্গ পিতা এবং মমতাময়ী মাতা মোসাম্মৎ মাছুরা বিবি চৌধুরীকে হারালেও স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ১৯৩৮ সালে ইলমে জাহির এবং ইলমে বাতিনের জগতে জগৎ বিখ্যাত বুযুর্গ অল্লামা ইয়াকুব বদরপুরী (রহ.) এর সাহচর্যে জীবনকে সপে দেওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। এই মহান মুর্শিদ অলী, ছাহেব কিবলা (রহ.) কে আপন পিতা বা অভিভাবকের ন্যায় লালন করা শুরু করেন। তিনি তাঁকে আপন পুত্রের ন্যায় বিশ্ব জ্ঞান ভাণ্ডারের তথ্য দান করেন। তারই দিক নির্দেশনায় ভারতের সেকালের সুন্নী দ্বীনি মাদরাসা ‘রামপুর আলিয়া মাদরাসায়’ ভর্তি হয়ে ইলমে হাদিসের গভীর জ্ঞান অর্জনের জন্য সেথায় গমন করেন।
১৯৫৫ সালে ছাহেব কিবলা (রহ.) ‘মাতলাউল উলুম’ মাদরাসায় হাদিসের সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করেন প্রখ্যাত মোহাদ্দিস খলিলুল্লাহ রামপুরী (রহ.) এবং মাওলানা অজিউদ্দিন রামপুরী (রহ.) এর নিকট হাদিসের সনদ লাভে ধন্য হন।
আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) দেশের সাধারণ আলেমদের রীতিনীতির উপর প্রথমে ইলমে হাদিসের সর্বোচ্চ সনদ লাভের পর তিনি বিশ্বনন্দিত মহাগ্রন্থ আল কোরআনের তফসির বিষয়ক গভীর জ্ঞান আহরণের জন্য ভারত বর্ষের ধর্মীয় বিদ্যাপীঠগুলোতে চষে বেড়ান। শুধু ভারতের রামপুর আলিয়াতেই নয়, করমপুর এবং বদরপুরেও ইলমে তফসিরে তিনি আল কোরআনের উপরে অতুলনীয় জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হন। তিনি আল কোরআনের উপরে যুগোপযোগী তফসির ‘আত্ তানভীর আলাত তাফসির’ লিপিবদ্ধ করে গভীর সমুদ্রে পড়ে থাকা জ্ঞানভাণ্ডারকে জনসমক্ষে তুলে ধরেন। জ্ঞান সমুদ্রের এই সঞ্চিত ভাণ্ডার এবং ছাহেব কিবলা (রহ.) এর অসংখ্য মাহফিলের তফসির তাঁকে রইসুল মুফাসসিরীনের সম্মানীয় আসন অলংকৃত করার সৌভাগ্য দান করে।
ইলমে ফিক্হে ছাহেব কিবলা (রহ.)
ইসলামী শরীয়তের সিদ্ধান্ত মতে প্রতি ৪৮ মাইল তথা ৭২ কি.মি. অঞ্চলের মধ্যে একজন ফকিহ্ বা আলেম তথা মাসয়ালাহ মাসায়েল জানেন এমন একজন আলিম থাকা ফরযে কিফায়াহ্। আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) এর শ্রদ্ধেয় পিতা মাওলানা মুফতী আব্দুল মজিদ চৌধুরী (রহ.) ছিলেন একজন খ্যাতনামা ফকিহ্ বিধায় ছাহেব কিবলা (রহ.) পবিত্র কোরআন ও হাদিসের নির্যাস ইলমে ফিকহ্ েঅচিন্তনীয় জ্ঞান আহরণ করেন।
আকাইদ এবং আখলাক বিষয়ক জ্ঞান অর্জন
ঈমানের মূল স্তম্ভ হলো আকাইদ। আকাইদ ছাড়া ঈমান, যেমন পোশাক ছাড়া মানুষ। আকীদা হলো ঈমানের ভূষণ। আকীদা ব্যতিত মূল ঈমান এবং নেক আমল সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। আল্লামা ছাহেব কিবলাহ (রহ.) তার অর্জিত বিশাল জ্ঞানভাণ্ডারকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মূল ধারায় বাংলাদেশ, পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতসহ আমেরিকা, ইংল্যান্ড এবং ইউরোপের সর্বত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করে বিশ্ব মুসলিমকে মুক্তির দিশা দিয়েছেন। তিনি আকীদার উপরে অত্যন্ত শক্তিশালী পুস্তক ‘ফারাইদ ফিল আকাইদ’ রচনা করেন।
ছাহেব কিবলাহ (রহ.) ছিলেন অলিকূল শিরোমণি হযরত সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরলভী (রহ.) এর অকুতোভয় সৈনিক। হযরত শাহজালাল ইয়ামেনী (রহ.) এর আশির্বাদপুষ্ট সুন্নিয়তের সিপাহসালার এবং আল্লামা ইয়াকুব বদরপুরী (রহ.) এর একনিষ্ঠ অনুগামী এবং আউলিয়া কেরামের একজন সফল উত্তরসূরী ।
ইলমে তাসাউফ ও ছাহেব কিবলাহ (রহ.)
ইলমে জাহির ও ইলমে বাতিনের সমন্বিত রূপ হলো ইলমে তাসাউফ। ইসলাম ধর্মের সারাংশ হলো এই ইলমে তাসাউফ। যা ছাড়া মারেফতে ইলাহী, ইশকে রাসূল এবং ইবাদতের স্বাদ অর্জন করা আদৌ সম্ভব নয়। ইমাম মালেক (রহ.) বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি নিজের মধ্যে ইলমে শরীয়ত এবং ইলমে মারিফাত একত্রিত করলো সে প্রকৃত ঈমানদার। অন্যথায় সে জিন্দিক বা ফাসেক।
আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) ছিলেন ইলমে জাহির এবং ইলমে বাতিনের মিলন মোহনা। আল্লাহর প্রতি পূর্ণাঙ্গ আনুগত্য সৃষ্টির পাশাপাশি আধ্যাত্মিকভাবে তিনি আল্লাহর এতই কাছের বন্ধু ছিলেন যে, যখন তিনি ইবাদতে আত্মনিয়োগ করতেন তখন দুনিয়ার সবকিছু থেকে আলাদা হয়ে যেতেন। তিনি যেন তাঁর মহান প্রভুর সাথে মিলিত হচ্ছেন । হাদিস শরীফে এসেছেÑ
‘তুমি আল্লাহর এবাদত কর এমনভাবে যেন তুমি তাকে দেখতে পাচ্ছ, আর যদি তুমি তাকে দেখতে না পাও তবে এতটুকু তোমার মনে রাখতে হবে যে, তিনি তোমাকে দেখছেন।’
অনুরূপভাবে বিশ্বনবী (সা.) এর প্রেমের তিনি ছিলেন এক মূর্ত ছবি। তার মাথায় ছিল সবুজ রঙের মায়াবী পাগড়ী এবং মুখভরা মিষ্টি হাসি। তিনি ছিলেন সমকালীন ব্যক্তিদের মধ্যে একজন অতুলনীয় আখলাকের অধিকারী মহান ব্যক্তি। যার আচার-আচরণ গোটা বিশ্ববাসীকে মুগ্ধ করেছে। তিনি তাঁর ভক্ত এবং রুহানী সন্তানদের আপন ঔরসজাত সন্তানের মতই মনে করতেন। এজন্য আমল আকীদা তাহযীব ও তামাদ্দুন বিষয়ে তিনি তাদেরকে উপদেশমূলক বক্তব্য প্রদান করতেন যা শ্রোতাদের পাথেয় হিসেবে প্রতিটি মুহূর্তে কাজে আসত।
আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) যুগশ্রেষ্ঠ রাহনুমা আল্লামা ইয়াকুব বদরপুরী (রহ.) কে তার পীর ও মুর্শিদ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। আল্লামা বদরপুরী (রহ.) ইলমে তাসাউফ শাস্ত্রে চার তরীকাসহ তরীকায়ে মোহাম্মদীয়ার একজন সফল সিদ্ধ মুর্শিদ ছিলেন। তাঁর কামালিয়াতের সংস্পর্শে এবং বাবা শাহজালাল (রহ.) এর সঙ্গী শাহ কামাল (রহ.) এর অধস্থন বংশধরের একজন যোগ্য উত্তরাধিকার হওয়ায় আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) বংশের ঐতিহ্য, ঈমান আকীদা এবং সহীহ আমলের ধারাবাহিকতাকে পূর্ণ করে নিজেকে কামিল ইনসানে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যার কারণে তাঁর কামালিয়াত বিশ্বের সর্বত্র তাঁকে বিশ্বখ্যাত অলিতে পরিণত করেছে।
ইলমে তাসাউফে পরিপূর্ণতা লাভের অপর একটি ধারা
আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) আল্লামা বদরপুরী (রহ.) এর মাধ্যমে যেমন সৈয়দ আহমদ শহিদ বেরলভী (রহ.) এর রুহানী তাওয়াজ্জুহ লাভে সক্ষম হয়েছিলেন তেমনি বদরপুরী (রহ.) এর নসবী আওলাদকে পরিণয় সূত্রে পাওয়ার কারণে ইলমে তাসাউফসহ ইলমে দ্বীনের সার্বিক বিষয়ে সফলতার দ্বারসমূহ উন্মুক্ত হয়ে যায়। আল্লামা বদরপুরী (রহ.) এর সুযোগ্য জামাতা হিসেবে তিনি আপন পীর ও মুর্শিদের আধ্যাত্মিকতার সাগরে ডুব দিয়ে মণি-মুক্তা আহরণের সুযোগ লাভ করেন। আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) এর সফলতার মূল চালিকাশক্তি ছিলেন হযরত আল্লামা ইয়াকুব বদরপুরী (রহ.)। যার সফল তত্ত্বাবধানে তিনি ইসলামের সহীহ আকীদা এবং আমলগুলোর বাস্তব চিত্র স্বচক্ষে অবলোকন করার সুযোগ পেয়েছিলেন। যার কারণে তার কোন আকীদা বা আমল ভুল প্রমাণিত হয়নি। আজো সেগুলো বিশ্বের সকল মুসলমানের জন্য পথপ্রদর্শক ও পাথেয় হয়ে আছে।
আল্লামা ছাহেব কিবলাহ (রহ.) এর বর্ণাঢ্য জীবন
আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) একজন ইনসানে কামিল ছিলেন। তিনি ইলমে নবুয়তের দুটো ধারা তথা ইলমে জাহির এবং ইলমে বাতিন রপ্ত করে কামিল হয়েছিলেন। তাঁর কামালিয়াতে গোটা বিশ্ব উপকৃত হয়েছে।
আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) যেমন ইলমে জাহিরে কামিল ছিলেন তেমনি ইলমে বাতিনেও কামিল ছিলেন। তাঁর জীবনের দরস-তাদরীসে দুধের ভেতর থেকে যেমন ছানা, মাখন, ঘি বের হয় তেমনি করে হাদিস, তফসির, ফিকাহ্ এবং তাসাউফের তালিম থেকে তেমনি দ্বীনে হানিফ তথা বিশ্বনবী (স.) এর মহান দ্বীন ইসলামের শরীয়তের হুকুম, তরীকতের দিশা, মারেফতের রহস্য এবং হাকীকাতের সুউচ্চ মাকাম প্রকাশ পেত। যা তরীকত ও তাসাউফ বিহীন লোকদের থেকে কখনও আশা করা যায় না।
তিনি তাঁর তালিমী জীবন সুসম্পন্ন করে খেদমতের জীবনে প্রবেশ করেন। শুরু হয়ে যায় তার জ্ঞানভাণ্ডার থেকে অমৃত সুধা বিতরণের পালা।
ইলমে জাহির এবং ইলমে বাতিনের এই সিংহ পুরুষ ১৯৪৬ সালে বদরপুর সিনিয়র মাদ্রাসায় হাদিসের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তার শিক্ষাদানে আগত শিক্ষার্থীরা অপূর্র্ব সুধায় তৃপ্ত হতে থাকে। মাত্র চার বছরের মাথায় তাকে কর্মস্থল ছেড়ে নিজ বাড়ি ফুলতলী ফিরতে হয়। তিনি সুমহান আদর্শের অধিকারী আপন মুর্শিদ ও শ্রদ্ধাভাজন শ্বশুরের অনুমতি ও দোয়া নিয়ে দেশে ফেরেন। তখন সিলেট অঞ্চলে ইলমে হাদিসের খিদমতের জন্য বহু মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। কিন্তু অবাককাণ্ড যোগ্য পীরের যোগ্য শাগরিদ এবং মুরিদ যে মাদ্রাসায় যোগদান করেন সেই মাদ্রাসাতেই পঙ্গপালের মত জ্ঞান পিপাসুরা মধুমক্ষিকার ন্যায় মধু আহরণের জন্য তাঁর পদপ্রান্তে এসে হাজির হয়।
তিনি ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত সিলেটের কানাইঘাটে ‘গাছবাড়ী জামেউল উলুম আলিয়া মাদ্রাসায়’ ইলমে হাদিসের দরস প্রদান করেন। ১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত ‘সৎপুর দারুল হদিস কামিল’ মাদ্রাসায় পবিত্র হাদিসের দরস দেন। অতঃপর তিনি নিজ হাতে গড়া ফুলতলী কামিল মাদ্রাসাও ইলমে হাদিস, ইলমে তফসির, ইলমে ফিক্হ্ এবং ইলমে কিরাতের খেদমত অব্যাহত রাখেন। হাজার হাজার শিক্ষার্থী তার থেকে ইলমে হাদিসের এবং ইলমে কিরাতের সনদপ্রাপ্ত হয়ে কর্মজীবনে ফিরে যায়।
দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা
ছোট বড় আবাল বৃদ্ধ বণিতা মুসলমান নর-নারী মাত্রই পবিত্র কোরআন পড়া ফরযে আইন। নামাজের মত ফরয ইবাদাতটি বিশুদ্ধ কিরাত এবং সহীহ অর্থ বুঝতে সহিহ ও বিশুদ্ধ তিলাওয়াত প্রয়োজন। যে ঘরে কোরআনের তিলাওয়াত নেই সেই ঘর শয়তানের ঘর, সেই ঘর একটি নষ্ট ঘর। অনুরূপভাবে যে মানুষটি মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও কোরআন পড়া জানে না তার প্রতি নবী (স.) ধিক্কার দিয়েছেন এবং কোরআন কিয়ামত দিবসে তার বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে নালিশ করবে। এমনিতে নবী করীম (স.) মহান আল্লাহর দরবারে এই বলে নালিশ করবেন ‘হে আমার রব, আমার এই সম্প্রদায় কোরআনকে ফেলে রেখেছে, তিলাওয়াত করে নাই’।
এছাড়াও হাদিস শরীফে এসেছে ‘কতেক কোরআন পড়া মানুষ কোরআন পড়বে অথচ কোরআন তাদের প্রতি অভিশাপ দেবে’।
অর্থাৎ পবিত্র কোরআনের অভিশাপ থেকে রক্ষা করা, বিশ্বনবী (স.) এর অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়া এবং পবিত্র কোরআনের বিরোধীতা থেকে নাজাত প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে ছাহেব কিবলা (রহ.) ইলমে কিরাত তথা কোরআন পড়ার বিষয়টিকে স্ববিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন। তিনি এই কোরআনকে প্রত্যেকের ঘরে ঘরে পাঠের ব্যবস্থা হিসাবে ‘দারুল ক্বিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্ট’ নামে ইলমে কিরাত শিক্ষার আয়োজন করেন। যার ফলশ্রুতিতে আজ শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং সারাবিশ্ব তথাÑ ইউরোপ, আমেরিকা, গ্রেট ব্রিটেনের সর্বত্র দারুল কিরাতের আওয়াজ শুনা যায়।
ছাহেব কিবলা (রহ.) এর ‘দারুল কিরাত’ এর খেদমতটি তার জীবন্ত কারামত। তাঁর এই অবদানে আজ সারা পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ সহিহ শুদ্ধভাবে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করতে সক্ষম হচ্ছেন। তিনি এ ব্যাপারে তালিমী বোর্ড প্রতিষ্ঠা করে পূর্ণভাবে ক্বারী হবার সিলেবাস প্রণয়ন করেন। যার দ্বারা প্রতি বছর পবিত্র রামাদ্বানুল মোবারকে কোরআন নাজিলের এই মাসটিতে পবিত্র কোরআনের ক্বিরাত প্রশিক্ষণের বা চর্চার মাস হিসেবে দারুল কিরাত থেকে সনদপ্রাপ্ত ফারিগগণ দিগদিগন্তে ছড়িয়ে পড়েন এবং বিশ্বব্যাপী পবিত্র কোরআনের পঠন-পাঠন শুরু হয়ে যায়। আমার দেখা মতে বিশ্বের সর্বত্র এই ‘দারুল ক্বিরাত’ আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। শিশুসহ পুরুষ-নারী আবাল-বৃদ্ধ বনিতা কোরআনের পবিত্র ছোঁয়ায় আলোকিত।
দারুল ক্বিরাতের মাধ্যমে প্রতিটি মুসলমানের ঘরে স্থায়িত্ব লাভ করেছে পবিত্র কোরআনের তিলাওয়াত। এতে পূর্ণ হচ্ছে জীবন এবং সওয়াবে সমৃদ্ধ হচ্ছে এবাদত বন্দিগী।
তরীকতের আমল ও ছাহেব কিবলাহ (রহ.)
জাহিরি আমলকে ধরে রাখতে হলে তরীকতের শিক্ষা একান্ত জরুরি। তরীকত ছাড়া জাহিরি আমল তথাÑ নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত এর প্রতি মনোযোগী হওয়া যায় না। হলেও তা স্থায়ী হয় না। তরীকতের তালীম তরবিয়ত হচ্ছে, গাছের ফল আস¦াদন করা। ইবাদতে যদি স্বাদই পাওয়া না যায় তাহলে মানুষ তাতে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) এজন্য খানকাহ্র ব্যবস্থা করেন। যেখানে ক্লাসের দরসের ন্যায় ইলমে তাসাউফের দরস হবে। ইলমে মারিফাত, ক্বালবের হালত, অসুস্থ ক্বালবকে জিকিরের মাধ্যমে সুস্থ করে তোলাসহ বান্দার সাথে আল্লাহর সুমধুর সম্পর্ক এবং পিয়ারা নবী (স.) এর সাথে মুহব্বতের সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়।
আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) নিজ বাড়ী ফুলতলী ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মাহফিলে যতেœর সাথে খানকাহ আয়োজন করেছিলেন।
ছাহেব কিবলাহ (রহ.) এর সামাজিক খেদমত
আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) ছিলেন পিয়ারা নবী (স.) এর একজন একনিষ্ঠ অনুসারী। তিনি যদিও বিশ্বখ্যাত অলি ও মুর্শিদে বরহকই ছিলেন না বরং তিনি কখনও প্রতিবেশী, গবীর-দুঃখী, অনাথ, দুঃস্থদের ভুলতেন না। সমাজের গরীব মানুষদের জন্য বাড়ি নির্মাণ, ভাঙা বাড়ি মেরামত এবং পরিবারের সদস্যদের চাল, ডাল, পোশাক, পরিচ্ছদ এবং টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করা তার নিত্য দিনের আমল ছিল। কোন মৃত ব্যক্তির জানাযা শেষে শোকাহত পরিবারটির খোঁজখরব নিতেন। নিতান্ত গরীব হলে তাদের ঘরে নিয়মিত খাবার প্রেরণ করতেন। তাদের ভাঙা ঘরকে নতুন করে তৈরি করে দিতেন এবং যোগাযোগ অব্যাহত রেখে সেই পরিবারটির অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
তিনি শীতকালে শীতবস্ত্র বিতরণসহ অভাবে এবং দুঃখে গরীব দুঃখীদের পাশে দাঁড়াতেন। তাদের দুঃখে শরীক হতেন এবং দুঃখ ও বেদনা মোচনের ব্যবস্থা করতেন।
ছাহেব কিবলাহ (রহ.) এর দেশব্যাপী অবদান
বিগত বছরগুলোতে দক্ষিণাঞ্চলে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় সিডর বা ঘূর্ণিঝড় হলে তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িঘর, মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মাণের জন্য তার একদল সেবককে অর্থকড়ি দিয়ে পাঠিয়ে দিতেন। আজও সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসাগুলো তাঁর দানের স্বাক্ষর বহন করছে।
রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সাহায্য প্রদান
আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.)-এর সুযোগ্য উত্তরসূরীরা ২০১৩ সালে ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধ্বংস হলে চাপা পড়ে অনেক শ্রমিক মারা যায়। অসংখ্য মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে। আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) এর সংগঠন বাংলাদেশ আনজুমান আল-ইসলাহ জাতীয় প্রেস ক্লাবে ছাহেবজাদায়ে ফুলতলী, আনজুমানে আল-ইসলাহর সম্মানিত প্রেসিডেন্ট আল্লামা মুহাম্মদ হুছামদ্দীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শিক্ষামন্ত্রীসহ দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিগণের উপস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্তদের হুইল চেয়ার, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র এবং আর্থিক অনুদানের চেক প্রদান করা হয়।
লতিফিয়া এতিমখানা ও দুঃস্থ সেবা
বাংলাদেশ কেন উপমহাদেশের মধ্যে কোথাও লতিফিয়া এতিমখানার মত এতবড় এতিমখানা নেই। যেখানে দেড় হাজার এতিম, নুলা ও অনাথ ছিন্নমূল শিশুরা নিয়মিত তিন বেলা আহার করে, ফ্রি ঔষধ, চিকিৎসা, পোশাক-পরিচ্ছদ পেয়ে ইলমে দ্বীনের শিক্ষা গ্রহণ করছে। এখানে তাদের খত্না করা থেকে অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসা এবং অবসর সময়ে খেলাধুলার সব আয়োজন আছে।
এতিম, মেধাবী, ছিন্নমূল এবং অচল ও নুলাদের বিশাল আশ্রয়স্থল এই এতিমখানাটি। মহানবী (স.) এতিম ছিলেন। তিনি যেমন এতিমদের দরদ বুঝতেন, তিনি যেমন মদিনা মনোওয়ারায় এতিমখানা খুলে এতিমদের হাতে লৌহে মাহফুজের কোরআন তুলে দিয়ে ছিন্নমূল, বাপ-হারা, মা-হারা সন্তানদের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন। ঠিক একই রীতি অনুস্মরণ করে আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) ‘লতিফিয়া এতিমখানা’ গড়ে তুলে মহানবী (স.) এর সুমহান সুন্নতকে বাস্তবে রূপদান করেছিলেন। বর্তমানে তারই সুযোগ্য সন্তান, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন এবং বুযুর্গ, বর্তমান পীর, মুহতারাম বড় ছাহেব কিবলা আল্লামা মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী (মা.জি.আ.) এর স্বয়ং তত্ত্বাবধানে এবং তদারকিতে এতিমখানাটি পরিচালিত হচ্ছে। তিনি নিজ হাতে এতিম শিশুদেরকে গোসল করান। খাবার খাইয়ে দেন, নিজ দায়িত্বে খৎনা করান, সময়মত ঔষধ খাওয়ান, দেখলে মনে হয় যে, তিনি এ সকল শিশুর বাপ-মা দুটিই।
বড় ছাহেব কিবলা (মা.জি.আ.) এর এতিমের প্রতি খেদমত, দয়া এবং মায়া দেখে বলতে হয় ফুলতলী লতিফিয়া এতিমখানা, এতিম, দুস্থ, প্রতিবন্ধী এবং ছিন্নমূলরা তাদের প্রকৃত অভিভাবকের কাছে ফিরে এসেছে। যেমনটা মহানবী মোহাম্মদ (স.) এর মদিনায় এতিমখানার শিশুরা বলে উঠেছিল ‘আমরা এই এতিমখানায় এসে এমন অভিভাবক পেয়েছি যিনি আমাদের পিতার চেয়ে উত্তম এবং এখানে এমন একজন মা পেয়েছি, যিনি আমাদের মায়ের চেয়ে উত্তম’।
বিশ্বব্যাপী দ্বীনের খেদমতে ছাহেব কিবলাহ (রহ.)
আমি আজ থেকে বহুবছর ধরে ভারতসহ আমেরিকা, ইংল্যান্ড এবং ইউরোপ যাতায়াত করে থাকি। মূলত ছাহেব কিবলা (রহ.) এর ভক্তরাই আমাকে বার বার আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে যায়। আমি তাদের প্রতি সবিনয় কৃতজ্ঞ। বিশ্বের এই সফরে আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি যে, ছাহেব কিবলা (রহ.) সত্যিকার অর্থে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ অলি। নিম্নে তার খেদমতসমূহ তুলে ধরা হলোÑ
আমেরিকায় ছাহেব কিবলা (রহ.) : নিউইয়র্ক
আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) নিউইয়র্কে প্রথম অবতরণ করে গাড়িতে ওঠে ড্রাইভারকে বললেন যে পথে তারা নিতে চায় ড্রাইভার যেন ভিন্ন পথ দিয়ে নিয়ে যায়। ড্রাইভার তার কথার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ভিন্ন পথে গন্তব্যে পৌছে। পরে জানা গেল বাকি সাথীরা যারা ঐ পথে এসেছেন তারা আসার পথে দেখতে পেয়েছেন যে, এই পথে বড় ধরনের এক্সিডেন্ট হয়েছে। যে কারণে ঐ সাথীদের পৌঁছতে কয়েক ঘণ্টা বিলম্ব হয়েছে।
নিকটতম সঙ্গীদের বিবরণ
মাঝে মধ্যে ছাহেব কিবলা সন্ধ্যা বেলায় আটলান্টিক মহাসাগরের পাড়ে যেতেন। কিন্তু কখন যেন সাথীদের চোখের আড়াল হয়ে অদৃশ্য হয়ে যেতেন। কখনও কখনও নিউইয়র্ক শহরের রোজবেল্টে তিনি ঢুকলে তাঁকে আর পাওয়া যেত না। কারো কারো মতে তিনি হযরত খাজা খিজির এর সাথে একান্তে মিলিত হতেন।
তিনি নিউইয়র্কে মাদ্রাসাসহ অসংখ্য মসজিদ প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে আজ তাঁর ভক্তরা তাঁকে প্রতিটি মুহূর্তে খুঁজে ফিরে। যদিও তাঁর আমেরিকায় পাঁচবার যাওয়া হয়েছিল। তাঁর পরামর্শে নিউইয়র্কের অসংখ্য মসজিদের অনেক ইমাম নিয়োগ লাভ করেন। এতে উল্লেখ করার মতো মসজিদ পার্কচেস্টার, নর্থব্রঞ্চ, বাইতুল আমান এবং লতিফিয়া মসজিদ। এ ধরনের অনেক এমন মসজিদ আছে যা গীর্জা কিনে মুসলমানরা মসজিদ বানিয়েছেন। নিউইয়র্কের অধিকাংশ মসজিদ ও মাদ্রাসা ছাহেব কিবলাহ (রহ.) এর ভক্তদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিটি মসজিদে আছে দারুল কিরাত। ফুলতলী দরবার থেকে সনদপাপ্ত আলিমগণ এই জায়গাগুলোতে তালিম দিয়ে থাকেন। এই নিউইয়র্কে সার্বিকভাবে আন্জুমানে আল ইসলাহ নিউইয়র্কের দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে এস্টোরিয়ার গাউছিয়া জামে মসজিদের সম্মানিত খতিব হযরত মাওলানা জালাল সিদ্দিকী সাহেবকে মুরব্বী রেখে সার্বিক দায়িত্ব পালন করছেন ফুলতলী দরবারের একনিষ্ঠ ভক্ত ও অনুসারী, নিউইয়র্ক বাংলাবাজার জামে মসজিদের খতিব, হযরত মাওলানা আবুল কাশেম মো. ইয়াহ্ইয়া ছাহেব। আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) এর রূহানী তাওয়াজ্জুহ আমেরিকার মাটিতে এমনভাবে পড়েছে আজ সেখানে অধিকাংশ মুসলমান তারই অনুসারী।
মিশিগানে মাইকে আযান
আমেরিকা এবং কানাডার সীমান্তবর্তী স্টেট হলো মিশিগান। নিউইয়র্ক থেকে প্লেনে প্রায় দুই ঘণ্টার সফর। ডেট্টোয়েট থেকে এক ঘণ্টা গাড়ী চালালে হেমট্রমিক শহরে পৌঁছা যায়। এই শহরটি ইহুদি ও খ্রিস্টান অধ্যুষিত এলাকা। এখানে সীমিত সংখ্যক মুসলমান বাস করেন। এখানকার প্রায় ৮৫ ভাগ মুসলমানই হচ্ছে আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) এর ভক্ত।
হেমট্রমিক শহরে ছাহেব কিবলাহ (রহ.) তাশরীফ নিয়েছিলেন। এ শহরে তাঁর ভক্ত মুসলমানগণ বাঘা মুসলমান। ইসলামের তাহযীব, তামাদ্দুন এবং শিষ্টাচার রক্ষায় আমল-আখলাকে তারা মুর্শিদে বরহক আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) এর পূর্ণাঙ্গ অনুসারী। সেখানে বিশাল ‘আল ইসলাহ ইসলামী সেন্টার’ নামের একটি কমপ্লেক্স রয়েছে। এতে রয়েছে বিশাল ‘লতিফিয়া জামে মসজিদ’। এখানে দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্টও আছে। এর অধীনে ছাহেব বাড়ির সনদপাপ্ত ক্বারী এবং আলিমগণ এখানে তালীম-তরবীয়তের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এখানে লতিফিয়া হিফজ্ মাদ্রাসাও আছে। ছাহেব কিবলার ভক্তবৃন্দ প্রতি নামাযের ওয়াক্তে সবাই এই মসজিদে একত্রিত হয়ে নামায আদায়ের চেষ্টা করেন। এই আনজুমানে আল ইসলাহ্ কমপ্লেক্সটি মূলত হেমট্রমিক মিশিগান মুসলিম বসবাসকারীদের মিলন কেন্দ্র। অমুসলিম মুল্লুকে এতবড় কমপ্লেক্স আমার নজরে আর পড়ে নাই। গত কিছুদিন পূর্বে এই মসজিদ সংলগ্ন একটি বিশাল বিল্ডিং ক্রয় করা হয়েছে। যাতে এই মসজিদটি সংযুক্ত হবে এবং কয়েক হাজার মুসল্লী একত্রিত হয়ে এক ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করতে পারবেন। এখানে দারুল কিরাতে কমবেশী সকলের ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করে থাকে।
এই পুরো কমপ্লেক্সটির আধুনিকায়নসহ সার্বিক বিষয় ছাহেব কিবলা (রহ.) এর রূহানী তাওয়াজ্জুর মধ্যে অব্যাহত আছে। এই কমপ্লেক্সটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) এর একনিষ্ঠ ভক্ত সিলসিলায়ে ফুলতলীর গৌরব জনাব আলহাজ আব্দুল মুতলিব, তিনি বর্তমানে এই কমপ্লেক্সটির সভাপতি। তার সেক্রেটারী সহ অন্যান্য সদস্যগণ সকলেই আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) এর একান্তই ভক্ত এবং আত্মনিবেদিত প্রাণ। আমার বহুবার সেখানে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। মিশিগানে ছাহেব কিবলা (রহ.) এর সর্ববৃহৎ কারামত হলো মিশিগানের মসজিদের মাইকে আযান দেয়ার ব্যবস্থা।
সারা আমেরিকার কোথাও মাইকে আযান নেই। আযান হয় মাটির নিচে, ব্যাজমেন্টের মসজিদে অথবা মসজিদের ভেতরে। সরকারিভাবে শব্দ দূষণের নামে বাইরে এ আযান দেয়া নিষেধ কিন্তু মিশিগানের এই শহরটি ব্যতিক্রমধর্র্মী। এখানে ছাহেব কিবলাহ (রহ.) এর ভক্তবৃন্দ জনাব মোহাম্মদ আবদুল মুতলিব সাহেবের নেতৃত্বে সিনেটে এই বলে দরখাস্ত করেন যে, পাশের গির্জায় ঘণ্টা বাজিয়ে যখন খ্রিষ্টানদের গির্জায় ডাকা যায়, তখন কেন আযান দিয়ে মুসলমানদের মসজিদে ডাকা যাবে না? ‘কল টু প্রেয়ার’ শিরোনামে তারা তাদের দাবি পূরণের আবেদন করেন। সিনেট মুসলমানদের আবেদনটি বিবেচনা না করে সুপ্রীম কোর্টের রায়ের জন্য পাঠিয়ে দেন। ইতেমধ্যে বিষয়টি নিয়ে দেশ বিদেশে সাড়া পড়ে যায়। আমেরিকার মসজিদে মাইকে আযানের বিষয়টি নিয়ে মিশিগানের এই আনজুমানে আল-ইসলাহ কমপ্লেক্সটিতে বিদেশি সাংবাদিকদের ভিড় জমে উঠে। কেননা মসজিদের বাইরে সুউচ্চ মিনারায় আযানের আওয়াজ, কানাডা, রাশিয়া, ইংল্যান্ড, ইউরোপের কোন দেশে নেই। অতএব, বিষয়টি একটি বিরোধপূর্ণ বিষয়। পাদ্রীরা প্রকাশ্যে ঘণ্টা বাজিয়ে খ্রিষ্টানদের তাদের চার্চে একত্রিত করা বৈধ হলে মুসলমানদের আযানে দোষ কোথায়? বিষয়টি অদৃশ্য শক্তির মহড়ায় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। ছাহেব কিবলা (রহ.) এর নিকট ভক্তদের নিকট এটি বড়ই চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ছাহেব কিবলা (রহ.) বলেছিলেনÑ ‘তোমাদের এখানে বহুকিছু হবে’। তাঁর এই অনুপ্রেরণা মিশিগানে মাইকে আযানের বিষয়টি শক্তিশালী করে তোলে। সুপ্রীমকোর্ট বিষয়টি সুরাহা না করে জনগণের রায়ের উপরে ছেড়ে দিয়েছিল। ভোটাভোটির মাধ্যমে জনগণ রায় দিবে মসজিদের মিনারে আযান হবে কি না? ভোটের তারিখ ঘোষিত হলো। হেমট্রমিক শহরে প্রায় আট দশ হাজার ইহুদী ও খ্রিস্টানদের বাস। মুসলমান ভোটার সেই তুলনায় মাত্র চার/পাঁচশত জন। এই ভোটে মসজিদের মিনারে মাইকে আযান দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
জনাব আলহাজ আব্দুল মুতলিব সাহেব আমাকে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললেন, মহান আল্লাহর প্রতি সার্বিক ভরসা রেখে নবী কারীম (স.) এর অসীলা গ্রহণ করে এবং ছাহেব কিবলা (রহ.) এর রূহানী তাওয়াজ্জুহ কামনা করে ভোটের রাতে আমরা সবাই আনজুমানে আল ইসলাহ কমপ্লেক্স মসজিদে এসে সারারাত দোয়া-দুরূদ পড়তে থাকি। গভীর রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে আমরা সবাই কান্নাকাটি এবং রোনাজারি শুরু করলাম। ফজর পর্যন্ত কান্নার রোল থামে নাই। মহান আল্লাহর দরবারে আমাদের একটিই আবেদন ছিল।
‘হে আল্লাহ! তুমি তো সবই পার। তুমি তো বদর যুদ্ধে ৩১৩ জন সাহাবীকে যাদের হাতে অস্ত্র সামগ্রী ছিল অপ্রতুল। নয় জনে মিলে একটি লাঠি ছিল তারপরেও তুমি তাদেরকে বিজয়ী করেছ। আমরা তো তোমার সুমহান ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনিটি আকাশে মেঘের উপরে তুলতে চাই। ঘরের বাতায়নে জানালা দিয়ে তোমার মহান পবিত্র নামটি তোমার বান্দাহদের কানে পৌঁছাতে চাই। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে বদর যুদ্ধের ন্যায় সাহায্য করে বিজয়ী কর।’
শবগুজারী, রোনাজারী শেষে পরদিন আমরা ভোটে অংশগ্রহণ করি। বিরতিহীনভাবে ৯-৫টা ভোটাভোটি চলল। রাতে ১১টায় ভোটের ফলাফল ঘোষণা শুরু হলো। এক পর্যায়ে ঘোষকের কণ্ঠে বেজে উঠল সুমহান ঘোষণা, বিজয়ের ঘোষণা, আল্লাহ নামের জয়ের ঘোষণা যে ‘মুসলমানগণ ১৮৭০ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন’।
এই বিজয়ী ঘোষণা শুনে আমরা সেজদাহ পড়ে গেলাম। আমাদের বিশ্বাস হলো এখানে নবী (স.) এর উছিলায় আল্লাহর অলী আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) এর পূর্ণ রূহানী তাওয়াজ্জুহ রয়েছে। আজও সেই মিশিগানের হেমট্রমিক শহরে মসজিদের সুউচ্চ মিনারায় খোলা মাইকে আযান হচ্ছে।
নিউ জার্সিতে ছাহেব কিবলার মিশন
নিউইয়র্কের পাশ্ববর্তী স্টেট নিউ জার্সি। ছাহেব কিবলা (রহ.) প্রথমে নিউইয়র্ক গেলে এই অঞ্চলের এয়ারপোর্টে প্লেন থেকে অবতরণ করেন। নিউ জার্সিতে ছাহেব কিবলা (রহ.) এর বিশাল এক মসজিদ এবং দারুল কিরাতের মিশন কাজ করছে। সেখানে মসজিদ আরো প্রশস্থ হচ্ছে এবং প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন হযরত মাওলানা শরীফুদ্দিনের নেতৃত্বে সেখানে দারুল কিরাতসহ খানকাহ্ এবং আনজুমানে আল ইসলাহর কাজ আরো দ্রুত এগিয়ে চলছে।
নিউইয়র্কের পার্কচেস্টার মসজিদে ছাহেব কিবলা (রহ.)
এখানে একটি বিশাল নয়নাভিরাম একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মসজিদটিকে অপূর্ব সাজে সাজানো হয়েছে। ছাহেব কিবলার ভক্তদের দ্বারা এখানে খ্যাতনামা আলেমে দ্বীন আঞ্জুমানে আল ইসলাহ এর অন্যতম সদস্য জনাব মাওলানা মইনুল ইসলাম সাহেব ইমামতি এবং খুতবার মাধ্যমে যোগ্য কমিটির নেতৃত্ব মসজিদটি পরিচালিত হচ্ছে।
পেনসেলভেনিয়া ও ফিলাডেলপিয়ায় ছাহেব কিবলা (রহ.) এর খেদমত
এ স্টেটে আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) এর একজন অতিভক্ত মানুষ রয়েছেন। যার নাম জনাব আলহাজ ডা. আব্দুল মালিক। তিনি অতিথিপরায়ণ এবং একজন মাটির মানুষ। সরল, সহজ, ধর্ম প্রেমিক এবং পিয়ারা নবী (স.) এর আশিক। তার ইসলামী বক্তৃতা অসংখ্য আলেমের চেয়ে সুন্দর। তিনি গভীর জ্ঞানের অধিকারী, ইসলামী চিন্তাবিদ। তার পুরো পরিবারটি ইসলামী তাহজিব, তামাদ্দুন ও শিষ্টাচারে পরিপূর্ণ। আমি তাঁর বাড়িতে বহুবার অবস্থান করেছি। আমি কাছে থেকে দেখেছি তিনি একজন বড় মাপের ছাহেব কিবলার আশেক এবং একজন আত্মনিবেদিত প্রাণ। তিনি রাশিয়ায় লেখাপড়া করা মানুষ এবং বড় মানের ডাক্তার। বেশ কয়েকটি মসজিদের সভাপতি। তিনি ফজরের নামাজের সময় হলে তাঁর বাড়ি থেকে বিশ ত্রিশ মাইল দুরত্বের সেই মসজিদগুলোতে নিজে গাড়ি চালিয়ে ফজরের নামাযে অংশগ্রহণ করে। তিনি বিন সালেম মসজিদসহ অসংখ্য মসজিদে দারুল কিরাত প্রতিষ্ঠাসহ ছাহেব কিবলার আদর্শ প্রচারে কাজ করে যাচ্ছেন।
সারা আমেরিকার কোন স্টেট নেই যেখানে ছাহেব কিবলা (রহ.) এর ভক্ত অনুরক্ত এবং দারুল কিরাত নেই। তিনি দারুল কিরাতের মাধ্যমে পবিত্র কোরআনকে দেশ-বিদেশের মাটিতে প্রত্যেক মুসলিমের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন। এটা তার আর একটি জীবন্ত কারামত।
ইংল্যান্ডে ছাহেব কিবলা (রহ.)
গোটা ইউরোপ তথা সারা যুক্তরাজ্য জুড়ে যে অলীর একক নাম, যার রূহানী তাওয়াজ্জুহ হতে গ্রেট ব্রিটেনে সর্বত্র আনজুমানে আল ইসলাহ এবং দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্ট কাজ করে যাচ্ছে সেই ক্ষণজন্মা ব্যক্তিটি শতাব্দীর অন্যতম অলী, তার নাম ‘শামসুল ওলামা আল্লামা ছাহেব কিবলা ফুলতলী (রহ.)’। গোটা ইউকে জুড়ে তাঁর খিদমতের একটি চিত্র নিম্নে তুলে ধরা হলো :
লন্ডনে দারুল হাদিস লতিফিয়া কামিল মাদ্রাসা
আল্লামা ছাহেব কিবলাহ (রহ.) এর ইসলাম প্রচারের সুদূর প্রসারী খেদমতের জ্বলন্ত প্রমাণ লন্ডনের বেথনাল গ্রিন এলাকার সর্ববৃহৎ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান। ‘দারুল হাদিস লতিফিয় কামিল মাদ্রাসা’।
আমার এই মাদ্রাসায় যাওয়া এবং বক্তৃতা দেবার সুযোগ হয়েছে। এই দ্বীনি প্রতিষ্ঠানটি দেখে আমি অভিভূত হয়েছি যে, অমুসলিম দেশে কি করে এতবড় প্রতিষ্ঠান করা যায়? ভাবতে অবাক লাগে। বাংলাদেশে কামিল শ্রেণির সিলেবাস অনুস্মরণ করে ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষা লেভেলের সাথে সামঞ্জস্য বিধায়ন করে এই সর্বোচ্চ দ্বীনি প্রতিষ্ঠানটি তীব্র গতিতে এগিয়ে চলছে।
এখান থেকে ইশায়াতে দ্বীন তথা ইসলাম প্রচারের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে এই দারুল হাদিস লতিফিয়া কামিল মাদ্রাসার সুযোগ্য অধ্যক্ষ হলেন আল্লামা মুহাম্মদ নজমুদ্দীন চৌধুরী ছাহেবের বড় ছেলে, ছাহেব কিবলা (রহ.) এর প্রিয় নাতী মাওলানা মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী। এখানে দারুল কিরাত, দ্বীনি শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর সহ আধুনিক শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। সারা ইউকের মুসলিম সন্তানেরা এই দ্বীনি প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করে নিজ নিজ এলাকার খিদমত আনজাম দিচ্ছেন।
এই লতিফিয়া দারুল হাদিস মাদ্রাসাটিতে দরস দিচ্ছেন আন্জুমানে আল ইসলাহ ইউকে এর প্রেসিডেন্ট সর্বজন শ্রদ্ধেয় আল্লামা মাওলানা আবদুল জলিল সাহেব।
লল্ডনের ব্রিকলেন মসজিদ ও ইসলাম প্রচার
এই মসজিদখানা মূলত একটি অমুসলিম উপাসনালয় ছিল। এটি এখন ইউকে রাজধানী লন্ডনের একটি বৃহত্তর অন্যতম জামে মসজিদ। এখানে আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) বহুবার বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এই মসজিদের বর্তমান ইমাম ও খতিব হলেন যুগশ্রেষ্ঠ আলেমে দ্বীন আল্লামা ছাহেব কিবলাহ (রহ.) এর হাতেগড়া যোগ্য আলেমে দ্বীন দারুল হাদিস লতিফিয়া কামিল মাদ্রাসার সুযোগ্য মুহাদ্দিস মুনাযিরে আযম হযরতুল আল্লামা নজরুল ইসলাম সাহেব। তিনি ইউকে-এর লন্ডন ভিত্তিক চ্যানেল আই ও অন্যান্য স্যাটেলাইট চ্যানেলের ধারাভাষ্যকার। তার সাথে মেহমান হয়ে লন্ডন ‘চ্যানেল আই’ তে আমার বহুবার লাইভ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়েছিল। আমি দেখেছি এই মর্দে মোজাহিদ আলেমে দ্বীন নিরলসভাবে ইউকে তে ছাহেব কিবলা (রহ.) এর উত্তরাধিকারী হিসাবে আন্জুমানে আল ইসলাহ এবং দারুল কিরাত ইউকের খেদমত করে যাচ্ছেন। তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী।
এ ধরনের প্রখ্যাত আলেমদেরকে জায়গামত বসিয়ে দিয়ে আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) তাঁর মিশনকে জিন্দা রেখে গেছেন। বর্তমানে হযরত মাওলানা নজরুল ইসলাম ব্রিকলেন জামে মসজিদের খতিব ও লতিফিয়া উলামা সোসাইটি ইউকের প্রেসিডেন্ট, মসজিদ কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে আছেন আলহাজ মাওলানা আতাউর রহমান চৌধুরী। দারুল হাদিস লতিফিয়া নর্থওয়েস্ট ওল্ডহ্যাম ইনস্টিটিউট ব্রিটেনের বিখ্যাত শহর ওন্ডহ্যামে ছাহেব কিবলা (রহ.) এর নামে তারই অনুমতিতে দারুল হাদিস লতিফিয়া ইনস্টিটিউটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি প্রতিষ্ঠানটি খোলা থাকা অবস্থায় পরিদর্শনে গিয়ে নিজকে হারিয়ে ফেলেছি। ছাহেব কিবলা (রহ.) এর ছোট ছাহেবজাদা আল্লামা মুহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে এবং জনাব আলহাজ মোসাব্বির সাহেবের তদারকিতে এই প্রতিষ্ঠানটি দ্বীনি শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। এটি দারুল কিরাত, কম্পিউটার ল্যাবসহ সরকারি লেভেলের শিক্ষার সাথে মিল রেখে একটি আধুনিক জ্ঞান চর্চা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ছাহেব কিবলা (রহ.) এর সুযোগ্য নাতী মাওলানা সালমান আহমদ চৌধুরী প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করছেন। এখান থেকেও ছাহেব কিবলা (রহ.) এর মিশন চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
টিপটন জালালিয়া এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট
রানিং কাউন্সিলর জনাব আলহাজ আহমদুল হক সাহেব আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.)’র একজন অতিশয় ভক্ত মানুষ। এই মানুষটির নেতৃত্বে টিপটনে গড়ে উঠেছে এক নয়নকাড়া ধর্মীয় শিক্ষালয় ‘জালালিয়া এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট।’
‘জালালিয়া একুকেশনাল ইনস্টিটিউট’ এই বিদ্যাপীঠটি দেখে আমি অবাক হয়েছি। ছাহেব কিবলা (রহ.) এর রূহানী তাওয়াজ্জুহ, তাঁর জীবনে তিনি বহুবার গ্রেট ব্রিটেনে আগমন এবং যে অতুলনীয় খেদমতসমূহ তিনি করে গেছেন তার শুকরিয়া আদায় করে শেষ করার মত নয়। সেখানে আমল আকীদার পরিপুষ্ট মানুষগুলোকে এমন স্থানে নিযুক্ত করে গেছেন যারা ছাহেব কিবলা (রহ.) সাথে বিন্দু পরিমাণ বিশ্বাস নষ্ট করেন নাই বরং ছাহেব কিবলা (রহ.) এর লাগানো বাগানের মালি হিসাবে তাঁরা তাতে সেবা দিয়ে চলেছেন। ছোট বৃক্ষ চারাকে পানি দিয়ে যেমন বড় করতে হয়। কাউন্সিলর জনাব আহমদুল হকসহ সকল ভক্ত এভাবে ছাহেব কিবলা (রহ.)-এর মিশন দারুল কিরাতকে ইউকে-এর ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন। টিপটন জালালিয়া এডুকেশনাল ইনস্টিটিউটের মাথায় যে চাঁদ ফলক রয়েছে তাতে সোনালী অক্ষরে শোভা পাচ্ছে ‘আন্জুমানে আল ইসলাহ’। কোথাকার পতাকা কোথায় উড়ছে। টিপটনের এই মাদ্রাসাটি দ্বীনি এবং আধুনিক শিক্ষায় সমৃদ্ধ। জনাব মাওলান এম এ কাদির আল হাসান এর সুযোগ্য প্রিন্সিপাল।
কভেন্ট্রি শাহজালাল জামে মসজিদ
সুবিশাল এই মসজিদটিও আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলার খাস দোয়ার বদৌলতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনতলা বিশিষ্ট সুরম্য এই মসজিদে এক সাথে হাজার খানেক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদে মহিলা মুসল্লিদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদের নিচ তলায় রয়েছে একটি কমিউনিটি সেন্টার। মসজিদ কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন আলহাজ মোতাচ্ছিম আলী সিতু মিয়া। এদিকে আমি লন্ডন সিটিতে গেলে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (র.) সমাজসেবা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা কামরুল ইসলামের বাসায় অবস্থান করি। তার বাসায় থেকে আমি লন্ডনের বায়তুল আমান জামে মসজিদ, ইস্টটন জামে মসজিদ, পপলার জামে মসজিদ, এনফিল্ড জামে মসজিদে গিয়েছি। সেখানে নামাজ পড়েছি এবং নামাজ পড়িয়েছি। অন্যান্য মসজিদের মধ্যে রয়েছে আক্সব্রিজ জামে মসজিদ। এই মসজিদে ইমামের দায়িত্বে আছেন ছাহেব কিবলার আদর্শে উজ্জীবিত আরেক মর্দে মুজাহিদ হাফিয করিমুল ইসলাম। এছাড়া ম্যানচেস্টার শাহজালাল জামে মসজিদেও আমি গিয়েছি। এসবই ছাহেব কিবলার অবদান। অন্যেিদক লন্ডনের বেগেনহাম ইসলামি সেন্টারে খানকাহে লতিফিয়া ইউকের উদ্যোগে প্রতি বৃহস্পতিবার জিকির মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় এবং বার্ষিক দুই দিনব্যাপী খানকাহর আয়োজন করা হয়। এ খানকাহ পরিচালনা করেন সুফি কারী মো. আব্দুল মুনতাকিম সাহেব। সেই খানকায়ও আমিও অংশগ্রহণ করেছি।
কভেন্ট্রি ফুলতলী ইসলামিক সেন্টার
সারা ইউকে তে ছাহেব কিবলা (রহ.) এর সাড়া জাগানো মিশন হলো ‘কভেন্ট্রি ফুলতলী ইসলামিক সেন্টার’। এখানে দারুল কিরাতসহ অত্যাধুনিক মানের একটি হিফজখানা রয়েছে এবং এতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থাও রয়েছে। এখানে মিশরসহ বিদেশি মেহমান এবং বড় ছাহেব কিবলাসহ অন্যান্য ছাহেবজাদাদের আরামগাঁহও রয়েছে। এই দ্বীনি প্রতিষ্ঠানটি বর্তমান মহীরুহ্ অবস্থা ধারণ করেছে। এখানে একসাথে ৫০০ মানুষ একত্রিত হয়ে সভা, সেমিনার এবং দ্বীনি আলোচনা এবং মাহফিল অনুষ্ঠানের সুযোগ রয়েছে।
এই প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল ইউকে বংশদ্ভূত ইংলিশ স্পিকার, ছাহেব কিবলা (রহ.) একনিষ্ঠ ভক্ত জনাব মাওলানা আবুল হাসান ছাহেব। সেন্টারের উপদেষ্টা মৌলভী মো. মকবুল আলী ও মো. এমাদ উদ্দিন ছাহেবও খুবই অতিথিপরায়ণ। এই সেন্টারটি বর্তমান ইউকে তে সিলসিলায়ে ফুলতলীর প্রচার এবং প্রসারের প্রাণকেন্দ্র।
আমি এখানে প্রতিবছর যাই এবং অবস্থান করি। সত্যিকার অর্থে এখানে ছাহেব কিবলা (রহ.) এর জন্য জীবন উৎসর্গকারী ভক্ত ও সিপাহসালার রয়েছেন যারা গোটা ইউকে এবং ওয়ার্ল্ডওয়াইড ছাহেব কিবলা (রহ.)’র মিশন নিয়ে কাজ করছেন। এই ফুলতলী ইসলামী সেন্টার কভেন্ট্রি আরো শক্তিশালী করার জন্য আত্মনিবেদিত প্রাণ ৭ জন তাজা যুবক ‘সিলসিলা ইসলামিক সোসাইটি ইউকে’ প্রতিষ্ঠা করে ছাহেব কিবলা (রহ.) এর রূহানী সন্তান হিসেবে গোটা ইউকে এবং স্কটল্যান্ডে দারুল কিরাতসহ আনজুমানে আল ইসলাহর সকল কাজ আনজাম দিয়ে যাচ্ছেন। এই ৭ যুবক তাদের উপার্জনের সিংহভাগ অর্থ এই পথে ব্যয় করে ছাহেব কিবলা (রহ.) তথা আল্লামা ইয়াকুব বদরপুরী (রহ.) এবং বাবা শাহজালালের উত্তরসূরী ও সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরলভী (রহ.) এবং তাঁর তরিকায়ে মোহাম্মদীয়াকে প্রচার করে চলেছেন।
ইউকে তে ছাহেব কিবলা (রহ.)-এর মিশনকে জিন্দা করতে যারা নিবেদিত প্রাণ তারা হলেনÑ আলহাজ মাওলানা আবুল হাসান, আলহাজ মোজাহিদ খান, আলহাজ রেজাউল হক মোখতার, আলহাজ গোলাম কিবরিয়া, মাওলানা খাইরুল হুদা খান, আলহাজ জসিম উদ্দিন, আলহাজ হাফিজ সাব্বির আহমদ।
উল্লেখিত সাতজন যুবক আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) এর মিশন প্রচার করতে আল্লাহর পথে জীবন দিতে প্রস্তত। এরা আনজুমানে আল ইসলাহ এর পরীক্ষিত বন্ধু এবং সিলসিলার একনিষ্ঠ খাদিম। ওয়েস বার্মিচ লতিফিয়া ফুলতলী কমপ্লেক্স
আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) ইউকে- এর মাটিতে বার বার কদম রাখার কারণে দিন দিন সেখানে ইসলাম ধর্মের চর্চা বেড়েই চলেছে। আজ গোটা ইংল্যান্ডের কোথায় ছাহেব কিবলা (রহ.) মিশন বাদ নেই। যথাÑ কারডিপ, লোটন, টিপটন, মানচেস্টার, অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ, হাইড, রেডিং, ওল্ডহ্যাম, নর্থহাম্পটন, মিল্টন কিংস, ওয়ালসল, পোস্টমাউথ, প্লে মাউথ, নিউ কাসেল, লজেলস, আসটন, কিথলি, ব্রাডফোর্ডসহ সারা ইউকে ফুলতলী সিলসিলার সাড়া পড়েছে। আজ সর্বত্র এই সিলসিলার দ্বীনি খেদমত বিরাজমান। ইদানীং কালে ব্রিটিশ সরকার খুশি হয়ে ইংল্যান্ডের বৃহত্তর শহর বার্মিংহ্যামের অদূরে ওয়েস বার্মিচে এক্স সান্ডওয়েল কলেজ ভবনকে জমিসহ এক পাউন্ডের বিনিময়ে মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ডের অর্থ সমমান জায়গা ও বিল্ডিং ‘লতিফিয়া ফুলতলী কমপ্লেক্সে’ এর নামে উৎসর্গ করেছেন। বর্তমানে মুফতিয়ে আযম আল্লামা গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির চেয়ারম্যান। অপর দুইজন সদস্য হলেন যথাক্রমে বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব আলহাজ নাসির আহমদ ও কাউন্সিলর আলহাজ আহমদুল হক। আর এই লতিফিয়া ফুলতলী কমপ্লেক্স এর প্রজেক্ট কমিটির চেয়ারম্যান হলেন আর এক নিবেদিত প্রাণ মুজাহিদে মিল্লাত টিভি ব্যক্তিত্ব মাওলানা কাদির আল হাসান।
বার্মিংহ্যাম আলম রক জামে মসজিদ
বার্মিংহ্যামে আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) বহুবার গমন করেছেন। এই মসজিদ থেকে ছাহেব কিবলা (রহ.)-এর মিশন নিয়ে সিলসিলায়ে ফুলতলীর খিদমত করে চলেছেন আলম রক মসজিদের প্রেসিডেন্ট জনাব আলহাজ মো. গয়াস মিয়া এবং ফুলতলী দরবারের একান্ত অনুসারী ও ভক্ত উক্ত মসজিদের সেক্রেটারি জনাব আলহাজ মাহবুবুর রহমান চৌধুরী রুহুল সাহেব। এদিকে বার্মিংহাম নজেলস বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার-এর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন আলহাজ নাসির আহমদ, খতিবের দায়িত্বে আছেন মাওলানা হুসামুদ্দীন আল হুমায়দী।
স্কটল্যান্ডে ছাহেব কিবলা (রহ.)
লন্ডন থেকে প্রায় ৫০০ মাইল দূরে স্কটল্যান্ডের আবাডিন, ইউকে-এর অঙ্গভূক্ত একটি রাজ্য। গোটা শহরটি গ্রানাইড পাথর দ্বারা তৈরি। এখানে ছাহেব কিবলা (রহ.)-এর মিশন নিয়ে কাজ করছেন মৌলভীবাজারের সৈয়দ বংশের একজন খ্যাতনামা ব্যক্তি জনাব আলহাজ সৈয়দ ফারুক আহমেদ। তিনি সেখানে ‘সৈয়দ শাহ মোস্তফা’ নামে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমি সেখানে বেশ কয়েকবার গিয়েছি। আমি সেখানে জুমুআ’র খুতবাসহ নামাযও পড়িয়েছি।
এখানে ছাহেব কিবলা (রহ.) এর প্রতি নিবেদিত প্রাণ হিসাবে আরেকজন ব্যক্তি বাস করেছেন তিনি হলেন আলহাজ চন্দন মিয়া। তিনি তার মরহুমা কন্যা সুমীর নামে ‘সুমী মহসিনা এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকে’ করে ছাহেব কিবলা (রহ.)-এর সিলসিলা অনুযায়ী বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে আর্থিক অনুদান দিয়ে সেবা করে যাচ্ছেন।
ইউরোপের সর্বত্রই ছাহেব কিবলা (রহ.) এর নাম
ইটালি, রোম, মিলান, ভেনেজিয়া, প্যারাডো, সুইজারল্যান্ড, জার্মান, স্পেন, ফ্রান্স, পর্তুগাল, মাদ্রিদ, এথেন্সসহ সর্বত্র ছাহেব কিবলা (রহ.) প্রতিষ্ঠিত আনজুুমানে আল ইসলাহ’র কমিটি রয়েছে এবং দিন দিন দারুল কিরাত প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।
সত্যিকার অর্থে আল্লামা ছাহেব কিবলা (রহ.) ছিলেন শতাব্দীর অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ অলী এতে কোন সন্দেহ নেই। তাঁকে হারিয়ে আজ গোটা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত। এমন একজন ক্ষণজন্মা ব্যক্তির প্রয়োজন সর্বযুগে ছিল। মহান আল্লাহ তায়ালার মহান দরবারে ফরিয়াদ তিনি যেন তাঁর মাজারকে নূরের আলোতে জ্যোতিময় করে দেন এবং জান্নাতের আ’লা মাকাম দান করেন।
ভারত উপমহাদেশে আল্লাহর আশীর্বাদ হয়ে বিশ্বনবী মুহাম্মদ (স.)-এর একনিষ্ঠ জীবন উৎসর্গকারী ক্ষণজন্মা যে কয়েকজন পীর-মাশায়েখ, ওলী-আউলিয়া, দ্বীনের মুবাল্লিগ, হাদী এবং মুর্শিদে কামিল এ ধরায় তাশরীফ এনেছেন, তাদের অন্যতম পথিকৃৎ রাহনুমা হলেন সকল সুন্নী আলেম-ওলামা, সাধারণ জনগণ এবং অসংখ্য পীরের ঊর্ধ্বতন পীর, মুজাহিদে মিল্লাত, রাহনুমায়ে শরীয়ত
ছাহেব কিবলা (রহ.)’র রাজনৈতিক জীবন
১ জমিয়তে উলামায়ে হিন্দে যোগদান
২ আসাম গর্ভমেন্ট এর বিরোধীতা
৩ নেজামে ইসলামে যোগদান
৪ আনজুমানে আল ইসলাহ গঠন
৫ কারাবরণ
৬ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া গঠন
৭ সুন্নিয়াতকে কায়েমের জন্য জীবন বাজি
৮ নাস্তিক মুরতাদ বিরোধী আন্দোলন
৯ রাষ্ট্রীয়ভাবে ফতুয়া বন্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলন
১০ বাবরী মসজিদের ভাঙ্গার প্রতিবাদে আন্দোলন
১১ শাহজালালের দরগায় বোমা বিস্ফোরণের প্রতিবাদ
১২ ঐতিহাসিক লংমার্চ
১৩ আলেমদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় ছাহেব কিবলা (রহ.) এর ভূমিকা
প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন
১ দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্ট্র
২ লতিফিয়া এতিখানা
৩ বাদে দেওরাইল ফুলতলী আলিয়া মাদ্রাসা
৪ হযরত শাহজালাল দারুস সুন্নাহ ইয়াকুবিয়া কামিল মাদ্রাসা
৫ লতিফিয়া কমপ্লেক্স
৬ বাংলাদেশ আন্জুমানে মাদারিসে আরাবিয়া
৭ লতিফিয়া কারী সোসাইটি
৮ ইয়াকুবিয়া হিফজুল কুরআন বোর্ড
অধ্যক্ষ : নেছারিয়া কামিল মাদরাসা, ঢাকা।