কুলাউড়ায় ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত, সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
প্রকাশিত হয়েছে : ৮ জানুয়ারি ২০১৫, ৩:৫০ পূর্বাহ্ণ
কুলাউড়ায় কুলাউড়ায় টিলাগাঁও ও মনু স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে আন্তনগর উদয়ন এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ ৭টি বগি লাইনচ্যুত, ২৫ জন আহত। সারাদেশের সাথে সিলেটের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ।
জয়নাল আবেদীন ও নাজমুল ইসলাম ::
কুলাউড়া উপজেলার মনু ও টিলাগাঁও স্টেশনের মধ্যবর্তীস্থানে ৩১৫ কিলোমিটারের ৬ নম্বর এলাকায় গত বুধবার গভীর রাত (আনুমানিক ২টায়) দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্রগ্রামগামী আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন। ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৬টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। দূর্ঘটনায় কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে। দুর্ঘটনার পর থেকে সারাদেশের সাথে সিলেটের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন মাস্টার মির্জা মো. শামসুল ইসলাম জানান, সিলেট থেকে রাত সাড়ে ১০টায় চট্রগ্রামের উদ্দেশ্য ছেড়ে আসে। মাইজগাঁও স্টেশনে আসার পর ট্রেনটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ত্রুটি সারিয়ে ৩ টায় কুলাউড়া স্টেশনে পৌঁছায়। কুলাউড়া স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার পর রাত আনুমানিক সাড়ে ৩ টায় টিলাগাঁও ও মনু রেলওয়ে স্টেশনের মাঝখানে দুর্ঘটনা কবলিত হয়। এতে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়। বগিগুলো হলো ৮৩০৯, ৮৪৯৭, ৯১৭১, ৭০১১, ২১৪৩ ও ৯৩৯৬। তবে দুটি বগি পার্শ্ববর্তী জমিতে ছিটকে পড়ে। এতে কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে।
আহতদের উদ্ধার করে কুলাউড়া ও মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত ট্রেনযাত্রী শাহাদাত হোসেন শুভ, সেলিনা খাতুন, রওসনা খাতুন, জয়নাল আবেদীন ও ট্রেনে কর্তব্যরত রেলওয়ে জিআরপি পুলিশ বোরহান জানান, ট্রেনটি মাইজগাঁও স্টেশনে আসার পর ইঞ্জিনের পেছনের বগিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। দুটি বগি মধ্যবর্তী স্থানে তার দিয়ে বেধে সচল করে চালানো হয়। মাইজগাঁও স্টেশন ছাড়ার পর থেকেই বগির যাত্রীরা আতংকে ছিলেন। দুর্ঘটনার আগে বিকট শব্দ করে লাইনচ্যুত হয়। এত ভয়ানক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার কোন কল্পনাই করেননি তারা। ট্রেনে অবস্থানরত বিভিন্ন গন্তব্যে কমপক্ষে ৫ শতাধিক যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হয়।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সিলেট, মৌলভীবাজার ও কুলাউড়া ৩টি ইউনিট, কুলাউড়া থানা পুলিশ, রেলওয়ে জিআরপি থানা পুলিশ দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে। কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, পুলিশ সুপার মো. তোফায়েল আহমদ, সহকারী পুলিশ সুপার জুনায়েদ আলম সরকার, অফিসার ইনচার্জ অমল কুমার ধর ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন। আজ ৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় একটি রিলিফ ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে যায় এবং ট্রেনটি উদ্ধার কাজে অংশ নেয়।
এদিকে দুর্ঘটনার পর শমসেরনগর ও শ্রীমঙ্গলে স্টেশনে চট্রগ্রাম ও ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন আটকা পড়েছে। অপরদিকে কুলাউড়া স্টেশনে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা কয়েকটি ট্রেন আটকা পড়ে আছে।
ট্রেনের চালক কবির ও কুলাউড়া জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গির হোসেন জানান, ট্রেনটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে। কোন নাশকতার ঘটনা ঘটেনি।
উর্দ্ধতন উপসহকারী প্রকৌশলী (মেকানিক) শ্রীপদ দত্ত ও উর্দ্ধতন সহকারী প্রকৌশলী (পথ) এরফানুর রহমান দুর্ঘটনার জন্য নাশকতার আশঙ্কা করেছেন। দুর্ঘটনায় রেললাইনের ২০ ফুট জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাজমুল হাসান জানান, এটা কোন নাশকতা নয়। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই দুর্ঘটনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।