বাংলাদেশে গড় আয়ু বাড়ায় ‘চ্যালেঞ্জের মুখে বয়স্কদের স্বাস্থ্যসেবা’
প্রকাশিত হয়েছে : ৩ জানুয়ারি ২০১৫, ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ
হেলেথ ডেস্ক ::
বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়ছে বয়স্ক নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা। দেশে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষের বয়স এখন ৬০-এর বেশি। ২০৫০ সালে এই হার ২০ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু তখন এ চাপ অর্থনীতি টানতে পারবে না।
স্বাস্থ্যসহ সেবা খাতগুলোও এ মুহূর্তে এই চাপ টানতে সেভাবে প্রস্তুত নয়। ফলে বয়স্কদের বোঝা মনে হতে পারে। সরকার অবশ্য ইতিমধ্যেই বয়স্ক নাগরিকদের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ দিতে সন্তানদের বাধ্য করা হচ্ছে। এর জন্য সরকারি বেতন স্কেলে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণের খবর দিচ্ছে সরকার। আর কেউ এই দায়িত্ব পালন না করলে, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আইনও হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু এখন ৬৯ দশমিক ৪ বছর। ২০০৮ সালে যেখানে গড় আয়ু ছিল ৬৬ দশমিক ৮ বছর। ওদিকে ভারতের গড় আয়ু এখনো ৬৪ বছর। আর নেপালে ৬৯ বছর। যদিও চীনে গড় আয়ু ৭৩ বছর।
২০১২ সালের এই হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে গত বছরের মাঝামাঝিতে। প্রতি চার বছর অন্তর অন্তর এই হিসাব করা হয়। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে যে, চার বছরে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে ২ দশমিক ৬ বছর। বিশেষজ্ঞরা এর পিছনে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ বৃদ্ধি, শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতি এবং সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন সুবিধাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়কে উল্লেখ করছেন। এছাড়া গর্ভাবস্থায় মৃত্যু, মাতৃমৃত্যু এবং শিশু মৃত্যুর হার কমাটাও গড় আয়ু বাড়ার একটা বড় কারণ।
জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক নূরুন্নবী বলেছেন, গড় আয়ু বাড়ার ক্ষেত্রে শিশু মৃত্যুর হার কমে যাওয়ার একটা সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। শিশু মৃত্যুর হার কমাতে বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি করছে। তাই দেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের গড় আয়ু বাড়তে থাকায় বাংলাদেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা। এরও একটা প্রভাব ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে পড়তে পারে। তবে এখন থেকেই যে সরকার বয়স্কদের ব্যাপারে উদ্যোগ নিচ্ছে – সেটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন এই জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচ বছরের নীচে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি ১ হাজারে ২০০৮ সালে ছিল ৫৪ শতাংশ। ২০১২ সালের শেষে গিয়ে তা এসে দাঁড়ায় ৪২ শতাংশে। অর্থাত্ শিশু মৃত্যু বন্ধে বেশ ভালো করছে সরকার। অধ্যাপক এম নূরুন্নবীর কথায়, ‘‘আমাদের দেশে স্বাস্থ্যবীমা নেই। এছাড়া বয়স্কদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা দরকার হয়, সেই ব্যবস্থা এখনও সেভাবে গড়ে ওঠেনি।” এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বয়স্করা বেশিরভাই উপার্জনক্ষম নয়। ফলে বয়স্কদের জন্য স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে একটা সংকট দেখা দিতে পারে।
জরিপে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে প্রতি হাজারে মৃত্যুর হার ছিল ৬ শতাংশ। এই মৃত্যুর হার কমে এখন ৫.৩ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। মৃত্যুর হার শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি। গ্রামে মৃত্যুর হার ৫.৭ শতাংশ আর শহরে তা ৪.৬ শতাংশ। প্রতি হাজারে দেশে মাতৃমৃত্যুর হারও কমে এসেছে। ২০০৮ সালে যেখানে ছিল ৩.৪৮ শতাংশ, ২০১২ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ২.০৩ শতাংশে। তবে জরিপ অনুসারে, নারীদের শিশু জন্ম দেবার হারও কমেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা সহজতর হওয়া এবং শিক্ষা ও সচেতনতা বাড়ায় শিশু জন্মের হার কমে এসেছে।
আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠন বা এনজিও ‘পপুলেশন কাউন্সিল’ বাংলাদেশ শাখার পরিচালক উবায়দুর রব বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতে উন্নতি ঘটলেও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘‘দেশে এখনো অকালে গর্ভপাতের ঝুঁকি রয়েছে। তাই জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য বন্ধ্যাত্বকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এছাড়া শহরের গরিবদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। অধিকাংশ মানুষ এখনও শহরমুখি। তাই তাঁদের স্বাস্থ্যসেবা বাড়ানো প্রয়োজন। তাহলে হয়ত বয়স্ক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে।”
তাঁর মতে, গ্রামে পর্যাপ্ত চাকরির ব্যবস্থা করলে মানুষের শহরমুখি হওয়ার প্রবণতা কমবে। আর তাতে জনসংখ্য ভারসাম্যও প্রতিষ্ঠা হবে।