সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে পিছু হটলো বিএনপি?
প্রকাশিত হয়েছে : ২ জানুয়ারি ২০১৫, ৮:৫১ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
৫ই জানুয়ারি একরফা নির্বাচনের এক বছর। নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি দিনটিকে কেন্দ্র করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কথা বলেছিল, বলেছিল কঠোর আন্দোলনের কথা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে তারা।
গাজীপুরে গত শনিবারের সমাবেশ যে কোনো মূল্যে সফল করার ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাবেশে খালেদা জিয়ার থাকার কথা ছিল। কিন্তু ছাত্রলীগ একই স্থানে একই সময়ে সমাবেশ ডাকার পর, ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। এরপর আর এগোয়নি। কারণ প্রতিবাদে-সমাবেশ ছেড়ে শুধুমাত্র রুটিন হরতাল পালন করেছে বিএনপি।
১৪৪ ধারা জারি করার পর থেকেই পরিস্থিতি আঁচ করা যাচ্ছিল। যদিও এর আগের সপ্তাহে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরার দিন ছাত্র ও যুবদল ‘শো-ডাউন’ করে তাদের ‘যোগ্যতার’ জানান দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সেই পর্যন্তই।
বছরের শেষ দিন সন্ধ্যায় খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। বিএনপি-র নেতা-কর্মীদের অনেকেই আশা করেছিলেন হয়ত তিনি কঠোর কোনো সরকারবিরোধী কর্মসূচি দেবেনে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ৫ই জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনের ঘোষণা দিয়ে ঐ দিন ঢাকায় সমাবেশ এবং ঢাকাসহ সারা দেশে কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি দেন।
বিএনপি-র এই কর্মসূচিতে আশাহত হয়ে পড়েছেন কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতা-কর্মী। তাঁদের কথা, ‘‘বার বার আমাদের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে বলে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নেতারাই পিছু হটেন। তাঁরা নিজেরা আন্দোলনের মাঠে থাকেন না। আর আন্দোলন করতেও দেন না।”
তবে বিএনপি-র কেন্দ্রীয় নেতাদের কয়েকজন মনে করেন, ‘‘খুব সহসাই সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে নির্বাচনের জন্য চাপ সৃষ্টি হবে। তাই এখনই চূড়ান্ত আন্দোলনে না গিয়ে সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করা ভালো।”
কিন্তু তৃনমূলের নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ মনে করেন যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব এবং নিস্ক্রিয়তা বিএনপি-কে পিছিয়ে দিচ্ছে। আন্দোলন গড়ে তোলার মতো সাহস বা সামর্থ্য কোনোটিই তাঁদের নেই।
ঢাকার কলাবাগান এলাকার যুবলীগ নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ জানান, ‘‘এভাবে বার বার হতাশ করলে আমাদের মন ভেঙে যাবে। তৃণমূলের মনোভাব কেন্দ্রীয় নেতারা বুঝছেন না। তাঁরা নিজেরা ভয় পাচ্ছেন মাঠে নামতে।’’
বিএনপি-র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান অবশ্য বলেন, ‘‘এটা পিছু হটা নয়। এটা আন্দোলনের কৌশল। একটি আইনি বাধাকে উপেক্ষা করে আন্দোলন করার সময় এখনো আসেনি।” তিনি বলেন, ‘‘অতীতে ১৪৪ ধারা ভাঙার নজির যে নেই, তা নয়। কিন্তু গাজীপুরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সামাবেশ করার পরিবেশ ও পরিস্থতি আজ নেই।”’
অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেন, ‘‘বিএনপি একটি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই ৫ই জানয়ারি কালো পতাকা মিছিল এবং সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। এতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা যদি হতাশ হন, তাহলে বুঝতে হবে চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য তাঁরা প্রস্তুত হচ্ছেন। আর ধাপে ধাপে সেই চূড়ান্ত আন্দোলন গড়ে উঠবে।”
বিএনপি-র আন্দোলন গড়ে তোলার সক্ষমতা আছে কিনা – এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সক্ষমতা থাকলেই সব সময় চূড়ান্ত আন্দোলন করা যায় না। ৫ই জানুয়ারির আগে থেকেই বিএনপি আন্দোলনে আছে। আর সেই আন্দোলন একমসয় চূড়ান্ত রূপ পাবেই।”
এদিকে বিএনপি-র এই ‘মাজুল’ কর্মসূচিতে উল্লসিত সরকারি দল। তারা ৫ই জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষা দিসব’ হিসেবে পালন করবে। ঢাকায় করবে সমাবেশ। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘নির্বাচনে অংশ না নেয়ার একটি ভুল সিদ্ধান্তে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সংসদ থেকে ‘মাইনাস’ হয়েছেন। এখন আরেকটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তিনি রাজনীতি থেকেও মাইনাস হতে পারেন। মাইনাসের ফর্মুলা আওয়ামী লীগের নয়। তাঁর ভুল সিদ্ধান্তের জন্য দেশের জনগণই তাঁকে মাইনাস করবে।”