সরকারের কাছে খালেদার ৭ দফা প্রস্তাব
প্রকাশিত হয়েছে : ১ জানুয়ারি ২০১৫, ৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে একটি নতুন নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের কাছে সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। গতকাল ৩১ ডিসেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় তাঁর গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
পূর্বদিক ডেস্ক ::
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে একটি নতুন নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের কাছে সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছেন।
গতকাল ৩১ ডিসেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় তাঁর গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের পর তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রহসন। শতকরা ৯৫ জনের বেশি ওই নির্বাচন বর্জন করে। যারা নতুন ভোটার হয়েছিল তারও ভোট দিতে পারেনি। জনগণকে এড়িয়ে ক্ষমতায় বসার কারণে জনগণের প্রতি সরকারের কোন দায়বদ্ধতা নেই।”
বেগম জিয়া দাবি করেন, “স্বাধীন এই দেশের মালিকানা এখন আর জনগণের কাছে নেই। আওয়ামী লীগ সংবিধান পরিবর্তন করে দেশে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করেছে। এতে জনগণের উপর স্বৈরশাসন চেপে বসেছে। জাতীয় সংসদ বিরোধীদলশূন্য হয়ে পড়েছে। এরকম অগণতান্ত্রিক একটি সরকারের দেশ পরিচালনার কোন অধিকার থাকতে পারে না।”
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সব দলকে নিয়ে আরও একটি নির্বাচন দেবেন। এরমধ্যে এক বছর পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে সব দলই একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে আসছে।”
নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে খালেদা জিয়া যেসব প্রস্তাব দেন সেগুলো হল:
১. জাতীয় সংসদের নির্বাচন অবশ্যই একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে হবে। যাতে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সকল পক্ষের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সুযোগের সমতা নিশ্চিত হয়।
২. নির্বাচন ঘোষণার আগেই প্রতিদ্বন্দ্বী সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ, দক্ষ, যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। যাতে, জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর প্রয়োজনীয় সংশোধন করা যায়। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠ পর্যায় থেকে পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করা যায়। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তব্যে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা যায়। সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী আইন ও বিধিমালার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়। এবং ভোটার তালিকার ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করা সম্ভব হয়।
৩. নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হবে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর সম্মতিক্রমে গঠিত নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
৪. নির্বাচনের উপযোগী শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে তারিখ ঘোষণার পরপরই বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করতে হবে।
৫. নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরুর আগেই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষপাতদূষ্ট ও বিতর্কিত হিসাবে চিহ্নিত সদস্যদের সকল গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে প্রত্যাহার এবং কর্তব্যপালন থেকে বিরত রাখতে হবে।
৬. সকল রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাসমূহ প্রত্যাহার করতে হবে।
৭. বর্তমান সরকারের আমলে বন্ধ করে দেয়া সকল সংবাদপত্র ও স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল খুলে দিতে হবে। মাহমুদুর রহমানসহ আটক সকল সাংবাদিককে মুক্তি দিতে হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘প্রস্তাবগুলো মেনে নিয়ে জাতীয় সঙ্কট নিরসনের আহ্বান জানাচ্ছি। এ বিষয়ে আমরা জনমত গঠনের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ঘোষণা করছি এবং ঐক্যবদ্ধভাবে একটি জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে সকল গণতান্ত্রিক দল, শক্তি ও ব্যক্তির প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে ২০ দলীয় জোট নেত্রী বলেন, “বাংলাদেশ এখন আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলো শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চরম অবনতি হয়েছে। গুম-খুন অপহরণ অবাধে চলছে। বাংলাদেশ এখন আতঙ্কের জনপদের নাম।”
র্যাব ও পুলিশের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এদের কোনো কোনো কর্মকর্তা আচরণ এখন দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করছে। র্যাব সরকারের ভাড়াটিয়া খুনি হিসেবে কাজ করছে। তাই র্যাব বিলুপ্ত করতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারসহ শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।