ফ কি র ই লি য়া স – এ র এ ক গু চ্ছ ক বি তা
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪, ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ
প্রান্তিক পক্ষশক্তি
আমিও অনেকটা টিপসই জানা মানুষ। বৃদ্ধাঙুলের রেখায় যে কালো কালি
লেগে থাকে তার দিকে তাকিয়ে চিনি আঁধারের পরিচয়। জানি, নিরক্ষর
নদীদের জন্মঠিকানা। পাহাড়ের আত্মদানের ইতিহাস।চূড়ার অতীত জীবনী।
যারা কিছুই জানে না বলে দাবি করে, তারা কিছুটা হলেও জানে গৃহপ্রবেশের
কৌশল। আমি এ বিশ্বাস স্থাপন করেছি পাতাদের হাতে হাত রেখে। দক্ষিণের
মৃদুহাওয়ায় নিঃশ্বাস নিতে নিতে তাকিয়েছি দূরের সমুদ্রপাথরের দিকে। অবেলায়।
আমি কি কখনও বেলাচিহ্নের পূজারি ছিলাম! কখনও কি চেয়েছি একহাতে
খুলে দেখতে তোমার দেয়া ঘামে ভেজা প্রেমপত্র! অথবা রুমালের ছায়া
পাচার করে আমি কী চেয়েছি, গড়ে তুলতে ভোগের লাল-নীল দালান!
কেউ আমার পক্ষে দাঁড়াক, তা আমার কাম্য ছিল না। আমার কণ্ঠে—
কণ্ঠ মিলিয়ে সুর তুলে উড়ে যাক কোনও হলদে পাখি, তা-ও চাইনি
আমি। তারপরও আমার পক্ষে দাঁড়িয়েছিল চাঁদ আর তার প্রতিবেশিরা।
জন্মের বিধান পড়ে
জন্মের বিধান পড়ে এই নদী চিনেছে সাকিন
আমি তার সাথী হয়ে দিয়েছি তো সেই পথ পাড়ি
তবুও বনের পাখি উড়ে গেছে সব সঙ্গ ছাড়ি
আমি তার অপেক্ষায় থেকে থেকে হয়েছি প্রবীণ।
যুগের লেখক হয়ে যে আকাশ ছায়া পেতে থাকে
তার পাশে তারাগুলো একা হয়ে নগ্ন শরীরে
কী মায়ায় আঁকে মুখ-কররেখা, জলভূমি ঘিরে
ভালোবাসা ভুল নয়, মাটি তাই নাম লিখে রাখে।
আবার ভূমিষ্ট হবো, সমতল মেঘ এলে কাছে
এমন প্রত্যয় নিয়ে গোলাপের একক বাগান
কুঁড়ির আঁচড় দেখে বৃষ্টিও করে জল দান
বাসন্তী রঙের মায়া এভাবেই তরুশাখে নাচে।
যে বিধান ছাপ রাখে মহাকালে, উত্তর সনদে
আমি তার রূপকল্পে মিশে যাই প্রতি পদে পদে।
হে পরিব্রাজক
চারপাশে ভিড় করে আছে অগণিত ক্লাউন ও কিলার!
কোনদিকে যাবে, কোন পথ তোমার হবে হে পরিব্রাজক!
কোন সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে তুলবে হাত—
কেউ কি আছেন! আমাকে একটু পার করে দেবেন পথ।
চারপাশে জমে আছে বরফ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ। হাতুড়ি হাতে
যে শিশু ইট ভাঙে, শাবল হাতে যে নারী তুলে মাটির দেয়াল
তাদেরও সাধ্য নেই, নেই ভেঙে দেবার শক্তি এই অচলায়তন
এই প্রাচীন গ্রহের মমি— যে গ্রহ পাথর হয়ে বসে আছে
আমাদের মানচিত্রের উপর।
জমে আছে কালো ধোঁয়া, তামা ও শীশা ধুয়া জল। জমে আছে,
স্বপ্নের করোটি।
জমে আছে কালোচিলের থাবা। নখরের দাগ। আর এই ক্ষতের
পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে কেউ মনসুখে বাজাচ্ছে বাঁশি!
পাঠের আনন্দ নিয়ে ভাসে নদী। ছানিপড়া চোখের ভেতর
যে ঘুম জমে আছে, তা আমাকে দেখতে দেয় না অনেক
কিছুই। তবু তাকাই – বৃষ্টির আলো এসে ঝাপটা দেয়
শিমুল শাখায়। আবার বসন্ত এলে যে পাখি ফিরবে ঘরে,
আমি তার অপেক্ষায় থাকি।
প্রেম, প্রতীক্ষার অণুসূত্র জানে। ভ্রূণ জানে জন্মের গন্তব্য।
আমার দেখার প্রান্তে সেই গন্তব্যের মায়াজাল ছড়িয়ে
থাকে- আমি তাকে বলি সংসার, আমি তাকে বলি ছায়া।
তুমি ছায়াবীথি হও।
নিকষিত টলটলে জলের মতো ভাসাও আমাকেও,
এখানে সমুদ্র ছিল, সেকথা সবাই জানুক
এই আকাশ দেখুক নবায়নের হলুদ কঙ্কাল।
সুরমা নদীর জলে
ভালোবাসা পাথর হয়ে ভাসে। ভাসে পদ্ম হয়ে। আহা! দক্ষিণমুখি মেঘ,
কী এক রোদমাখা সেতু পেরিয়ে তুমি কেবলই যাও কবি দিলওয়ারের
বাড়ি। ‘ক্বীনব্রিজে সূর্যোদয়’- দেখে যে পথিক গৃহের সন্ধানে ফিরে, আমি
তার ছবি তুলে রাখি। না, ক্যামেরায় নয়- ক্যানভাসে এঁকে রাখি সবুজের মুখ।
সুরমা নদীর জলে ছায়া জমা রেখে আমি একদিন সেই পাথর খুঁজেছিলাম।
ঘুড়ির গৌরব বুকে নিয়ে, উড়েছিলাম অজানা সাকিনে। তারপর ফিরেছি কবে!
কবে আমি জালালি কৈতর দেখে শিখেছি কবিতার বাকবাকুম- আজ সেই
দৃশ্যই আমাকে পাঠ শেখায় পুনরায়। বার বার হয়ে উঠি পঠিত মেঘের মোহর।
পদচিহ্নাবলী
সে দৃশ্য আবার ফিরে আসুক। সে সমতল ভূমির মন লিখে
রাখুক নাগরী হরফে তাদের পদচিহ্নাবলী। আর যারা পদাতিক
পাতার আড়ালে বার বার লুকিয়েছে নিজেদের কৃতিদিন-স্মৃতিরাত,
প্রভাত হবার আগে জেগেছে চৈতন্যে। বনকে ভালোবেসে সেজেছে
পুষ্পে, নদীকে ভালোবেসে বয়ে গেছে নৈঋতে। দিতে কিছু মন আর
নিকষিত কালের কদম, হিজল-জারুল ফুলে সাজানো বাসরে। ফিরে এসে
বলেছে- সোহাগী আমার! দ্যাখো এই পুষ্ট ধানদুধে আগামীর সঞ্চিত সম্ভার।