কৃষি ব্যাংকের লোকসান ৭০০ কোটিতে দাঁড়াচ্ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪, ৭:৫১ পূর্বাহ্ণ
কৃষি ব্যাংক বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করে কম সুদে ঋণ দেয়। এছাড়া কৃষিঋণের চেয়ে বাণিজ্যিক ঋণে বেশি মনোযোগী হওয়ায় বড় ধরনের লোকসানে পড়ছে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ব্যাংকটি বড় ধরনের সংকটে পড়েছে বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করছেন।
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক ::
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা কমলেও বেড়ে চলেছে লোকসানের পরিমাণ। সুদহার কমানোর ফলে অতিরিক্ত লোকসানে পড়তে যাচ্ছে ব্যাংকটি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ব্যাংকটির সম্ভাব্য লোকসান ধরা হয়েছিল ৫০০ কোটি টাকা। সুদহার ১৩ থেকে ১১ শতাংশে কমিয়ে আনায় লোকসান বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। এতে ২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত লোকসানে পড়তে হবে ব্যাংকটিকে।
এ বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম বলেন, কৃষি ব্যাংক মুনাফা করতে পারে না। বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করে কম সুদে ঋণ দেয়ার কারণে তারা লোকসানে পড়ে। এক্ষেত্রে সরকার মূলধন জোগানের মাধ্যমে ব্যাংকটির ঘাটতি পূরণ করে। সুদহার কমানোর ফলে কৃষি ব্যাংক আরো ক্ষতির মুখে পড়বে। অন্য সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেও একই পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।
জানা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ব্যাংকটির নেট লোকসান ছিল ৩৮৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫১৭ কোটি টাকায়। অন্যদিকে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ব্যাংকটির লোকসানি শাখার সংখ্যা ছিল ১৭১। গত অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ১৬৫টিতে। চলতি অর্থবছরে এ সংখ্যা ১৪৯-এর মধ্যে নিয়ে আসার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে গত অর্থবছরে শ্রেণীকৃত ঋণে নগদ আদায়ে ব্যাংকটির বড় সফলতা থাকলেও এ বছর উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ নেই। গত অর্থবছর এ খাতে ১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা নগদ আদায় হলেও এ বছর কমিয়ে লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ব্যাংকটির শ্রেণীকৃত ঋণ ছিল ৪ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল ৪ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর ব্যাংটির শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা।
শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ের মাধ্যমে লোকসান কমানোর ওপর জোর দিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। গত সপ্তাহে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর এমডিদের সঙ্গে ব্যাংকিং বিভাগের সচিবের বৈঠকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। বৈঠকে বলা হয়, কৃষি ব্যাংককে সরকার সহায়তা দিচ্ছে এবং দিয়ে যাবে। তবে এ সহায়তা কেবল কৃষিঋণের ক্ষেত্রে। ঝুঁকি নিয়ে বাণিজ্যিক ঋণ দিয়ে ব্যাংক লোকসানে পড়লে তার দায়ভার সরকার নেবে না। বৈঠকে ঋণদানের ক্ষেত্রে আরো বেশি সচেতনতা অবলম্বন ও ঋণ আদায়ে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
কৃষি ব্যাংকের রয়েছে মূলধন ঘাটতিও। গত জুনের হিসাবে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি ছিল ৫ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। এ ঘাটতি পূরণে ব্যাংকটি এরই মধ্যে ৬ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার মূলধন সহায়তা চেয়েছে। তারা বলেছে, মূলধনের অভাবে ব্যাংকটি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারছে না। ওই অর্থ পাওয়া গেলে তারা শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারবে।
তবে এত বড় অঙ্কের মূলধন ঘাটতি পূরণে একমত নয় ব্যাংকিং বিভাগ। তারা মনে করে, কৃষি ব্যাংক কৃষিঋণের চেয়ে বাণিজ্যিক ঋণে বেশি মনোযোগী হওয়ায় বড় ধরনের লোকসানে পড়েছে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ব্যাংকটি বড় ধরনের সংকটে পড়েছে। ব্যাংকটি গ্রামীণ কৃষিতে অর্থায়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হলেও বেশি মুনাফার আশায় অকৃষি বাণিজ্যিক ও বৈদেশিক বাণিজ্যে অর্থায়ন করেছে। ফলে বেড়েছে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ও লোকসান। তাই তাদের ঋণ আদায়ের মাধ্যমে ঘাটতি মেটাতে হবে।