বাংলাদেশে ছয় বছরে ইয়াবার ব্যবহার বেড়েছে ৭৭ গুণ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪, ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
বাংলাদেশে গত ছয় বছরে মাদক হিসেবে ইয়াবার ব্যবহার বেড়েছে ৭৭ গুণ। ইয়াবার প্রধান ক্রেতা তরুণরা। এমনকি তরুণীরাও পিছিয়ে নেই। চিকিৎসকরা বলছেন ইয়াবার সর্বনাশা ছোবলে শেষ হয়ে যাচ্ছে তরুণদের একাংশ।
বাংলাদেশে প্রধানত মিয়ানমার থেকে চোরাচালানির মাধ্যমে অবৈধ ইয়াবা আসে। তাই প্রায় প্রতিদিনই টেকনাফ, কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামের কোথাও না কোথাও ইয়াবা ধরা পড়ে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাবে গত ছয় বছরে ইয়াবা উদ্ধারের পরিমাণ বেড়েছে ৭৭ গুণ (সাত হাজার ৬২১ শতাংশ)। তাদের ‘বার্ষিক মাদক প্রতিবেদন, ২০১৩’ থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালে ৩৬ হাজার ৫৪৩টি, ২০০৯ সালে এক লাখ ২৯ হাজার ৬৪৪, ২০১০ সালে আট লাখ ১২ হাজার ৭১৬, ২০১১ সালে ১৩ লাখ ৬০ হাজার ১৮৬, ২০১২ সালে ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৩৯২ এবং ২০১৩ সালে ২৮ লাখ ২১ হাজার ৫২৮টি ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, ইয়াবার ব্যবহার বাড়ছে বলেই এই মাদক উদ্ধারের পরিমাণ বাড়ছে। সে হিসেবে গত ছয় বছরে ইয়াবা ব্যবহারের পরিমাণও ৭৭ গুণ বেড়েছে বলে মনে করছে সরকারি এই সংস্থাটি।
ইয়াবা উদ্ধারের এই হিসাব মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের। বিজিবি, র্যাব বা পুলিশের হিসাব এখানে নেই। সেই হিসাব যোগ করলে এর পরিমাণ বেড়ে তিনগুণ হবে।
র্যাব জানায় চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সারাদেশে কমপক্ষে দেড় কোটি পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। উল্লেখ্য দেশের ভিতরে পাচার হওয়া ইয়াবা যা ধরা পড়ে না তার পরিমাণ জানা সম্ভব নয়।
স্বাস্থ্যগত সমস্যা
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম জানান, ‘‘বাংলাদেশে এখন ইয়াবাসেবী তরুণের সংখ্যা ৪০ লাখের কম নয়। এথেকেই প্রতিদিন বাংলাদেশে ইয়াবা ব্যবহারের পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব।”
তিনি জানান, ‘‘এখন চিকিৎসা নিতে আসা মাদকসেবীদের ৮০ ভাগই ইয়াবা আসক্ত। এরা বয়সে তরুণ এবং অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল ঘরের সন্তান। তরুণীরাও এই মাদক গ্রহণ করছেন।” ডা. ইসলাম বলেন, ‘‘ইয়াবা সেবনে শরীরে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হয়। সেবনের পর প্রথমে মনে হয় শরীরে অনেক শক্তি এসেছে, সব ক্লান্তি কেটে গেছে। এটি একটি উত্তেজক মাদক। দীর্ঘমেয়াদে এটি পুরো স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রচণ্ড খারাপ প্রভাব ফেলে। স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কাঠামো ও কার্যক্রম নষ্ট করে দেয়। এ ধরনের মাদকের প্রভাবে অনেক সময় মানুষ বদ্ধ পাগলের মতো আচরণ করে (সাইকোসিস সিনড্রম)। এর ফলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের (স্ট্রোক) ঝুঁকিও তৈরি হয়।”
আলোচনার উদ্যোগ
বাংলাদেশে ইয়াবা আসছে শুধু মিয়ানমার থেকে। মিয়ানমারের মংডুতে বাংলাদেশ সীমানার ১০ কিলোমিটারের ভেতরে ইয়াবার কারাখানা আছে বলে জানা যায়। কক্সবাজার হয়ে আসা ইয়াবা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহণে কাজ করছে নিম্নবিত্তরা। সম্প্রতি কিছু স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং নারীও ইয়াবা পাচারের সময় ধরা পড়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানায়, শুধু দেশেই অভিযান চালালে হবে না। তাই মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার বন্ধে কূটনৈতিক মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।