জনসভায় বাধা এলেই বিএনপির হরতাল!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪, ২:২৭ অপরাহ্ণ
বিএনপিকে আগামীকাল ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে এবং আগামী ৫ জানুয়ারি ঢাকায় জনসভা করার অনুমতি দেওয়া না হলে আগামী ৫, ৬ ও ৭ জানুয়ারি ৭২ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি আসতে পারে।
বিএনপির অন্য একটি সূত্র মতে, কাল ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরের জনসভাকে কেন্দ্র করে গোলমাল হলে ২৯ ডিসেম্বর থেকেও হরতাল শুরু হতে পারে।
ঢাকা ও গাজীপুরে পরস্পরকে মোকাবিলার প্রস্তুতি চলছে দুপক্ষের মধ্যেই। অবশ্য সরকারকে ‘ডিফেন্সিভে’ ফেলতে কৌশলী অবস্থান থেকে ছাত্রলীগকে ছাড় দিয়ে গাজীপুরের জনসভা দু-এক দিন পিছিয়ে দেওয়ার আলোচনাও বিএনপিতে আছে। আবার ১৪৪ ধারা জারি হলেও বিএনপি জনসভা পিছিয়ে দিতে পারে।
এদিকে আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার অনুমতি পেয়েছে। একই দিন তিনটি স্থানে জনসভা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করলেও বিএনপিকে এখনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি ৩ জানুয়ারি বিএনপির জনসভার অনুমতিও এখনো মেলেনি।
আওয়ামী লীগকে জনসভার অনুমতি দেওয়ার কথা জানানো হলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ‘নয়াপল্টন ও শাপলা চত্বর- এই দুটি স্থানেও জনসভার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে আবেদন করা আছে। দেখা যাক সরকার কী করে।
ফখরুল আরো জানান, যেকোনো মূল্যে তাঁর দল গাজীপুর ও ঢাকায় জনসভা করবে। তিনি বলেন, দুই স্থানেই বিএনপি অনেক আগে থেকে অনুমতির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু সরকার পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার জন্য একই দিন জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছে। এ অবস্থায় নৈতিক ও যৌক্তিক কোনো অর্থেই বিএনপি তার কর্মসূচি পিছিয়ে দেবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, দেশে সংঘাত হলে তার দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। কারণ বিএনপি সংঘাতের অনুমতি নয়, জনসভার অনুমতি চেয়েছে।
জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান জানান, জালেম সরকারের পতন আন্দোলনে তাঁর দল সব সময় বিএনপির পাশে আছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ২০ দল ঠিকমতো মাঠে নামলে ওরা পারবে না। তবে আমরা সহিংসতা চাই না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। সরকার চায় ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে। তাই মনে করি, নির্বাচন দিলে আওয়ামী লীগ সরকারের সম্মানজনক বিদায় হবে। আর গায়ের জোর করতে চাইলে সরকার নিজের পায়ে কুড়াল মারবে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের মতে, আওয়ামী লীগের উসকানিতে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।
খারাপ কী হতে পারে জানতে চাইলে নোমান বলেন, ‘আমাদের দেশে যা হয়, ঘটনা যেদিকে যাওয়ার সেদিকেই যাবে। তবে পরিস্থিতি ইচ্ছা করলে সরকার ভালো করতে পরে। বিএনপির কর্মসূচি পেছানোর সুযোগ নেই।
মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল কাইউম বলেন, বিএনপির পিছু হটার আর সুযোগ নেই। কর্মসূচি পালিত হবে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন অবশ্যই গাজীপুরে যাবেন। এর কোনো বিকল্প নেই।
যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, “গাজীপুরে যাওয়ার ব্যাপারে ‘ম্যাডাম’ এখনো অটল আছেন। আমরা যাবই।” তিনি বলেন, সবদিক থেকে সরকার উসকানি দিচ্ছে। এর দায়দায়িত্ব সরকারকেই ভোগ করতে হবে।
সূত্র মতে, গতকাল পর্যন্ত বিএনপি গাজীপুরে জনসভা করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দলটির নেতা-কর্মীরা প্রস্তুতির বিষয় নিয়ে ঢাকা ও গাজীপুরে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেকোনো মূল্যে খালেদা জিয়া গাজীপুরে যাওয়ার ব্যাপারে অনড়। নেতা-কর্মীদের তিনি প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। এদিকে ছাত্রলীগ গতকালও লাঠিসোঁটা নিয়ে মহড়া দিয়েছে জনসভাস্থলে।
রাজনৈতিক সূত্রগুলোর মতে, ওই জনসভার ওপরই দেশের পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনা-প্রবাহ নির্ভর করছে। জনসভা নির্বিঘ্নে করতে পারলে ঢাকায় বিএনপির পরবর্তী কর্মসূচি ৩ ও ৫ জানুয়ারির কর্মসূচিও শান্তিপূর্ণভাবে হবে। আর বাধা দেওয়া হলে কঠোর কর্মসূচি আসবে। ২৯ তারিখ থেকেই হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। বিএনপি নেতাদের ভাষায়, ওই রকম পরিস্থিতিতে সংকটের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি রাজপথেই হবে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠতে পারে বলেও আভাস পাওয়া গেছে।
এদিকে অন্য একটি সূত্রের দাবি, ছাত্রলীগ জনসভা করতে চাওয়ায় কিছুটা কৌশলী অবস্থান নিয়ে গাজীপুরের জনসভা দু-এক দিন পিছিয়ে দেওয়ার আলোচনাও দলটির মধ্যে আছে। সে ক্ষেত্রে ২৭ ডিসেম্বর তারা ছাত্রলীগকে ছেড়ে দিয়ে ২৮ অথবা ২৯ ডিসেম্বর জনসভার ঘোষণা দিতে পারে। আর শেষ পর্যন্ত জনসভা করতে না দেওয়া হলে হরতালের পথেই যাবে দলটি।
বিএনপি নেতাদের মতে, জনসভা এক দিন পিছিয়ে দেওয়া হলে ‘ডিফেন্সিভে’ পড়ে যাবে ক্ষমতাসীনরা। ফলে পরবর্তী জনসভায় বাধা দেওয়ার নৈতিক শক্তি তাদের থাকবে না। পাশাপাশি পিছিয়ে দেওয়ার পরে জনসভায় বাধা দেওয়া হলে জনগণের মধ্যে সরকারের মুখোশ উন্মোচিত হবে; প্রমাণ হবে তারা পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করছে।
সূত্র মতে, একইভাবে ঢাকায় জনসভা করার ব্যাপারেও কৌশলী অবস্থান নিতে পারে বিএনপি। এর আগে ২০১১ সালেও একই ধরনের কৌশল নিয়ে শেষ পর্যন্ত নয়াপল্টনের সামনে জনসভা করার অনুমতি পেয়েছিল বিএনপি। অবশ্য এসব বিষয় এখনো কিছু নেতার আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। নির্দিষ্ট দিনে জনসভা করার বিষয়ে খালেদা জিয়া অটল আছেন বলেই জানা যাচ্ছে।
একতরফা নির্বাচনের এক বছর পূর্ণ হবে আগামী ৫ জানুয়ারি। ওই দিনই কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে সরকারকে বড় ধরনের ‘বার্তা’ দিতে চায় বিএনপি। উদ্দেশ্য হলো সরকারকে চাপে ফেলা; যাতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ একটি সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচন দিতে তারা বাধ্য হয়।