কম্প্রেসার স্টেশন চালুর পরও চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪, ৯:৪২ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
বন্দর নগরী চট্টগ্রামের গ্যাস সংকট উন্নতির আশায় চট্টগ্রামবাসী বারবার ধরনা দিচ্ছিল কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) কর্তৃপক্ষের কাছে। আশুগঞ্জে কম্প্রেসার স্টেশন চালু হলেই গ্যাসের চাপ বেড়ে যাবে বলে তারা আশ্বস্ত করেছিল। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে কম্প্রেসার স্টেশনটি চালুও হয়। কিন্তু অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন না হওয়ায় এখন চট্টগ্রামের জন্য নতুন একটি গ্যাস পাইপলাইন বসানোর দাবি তুলেছেন ব্যবসায়ী ও আবাসিক গ্রাহকরা।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। অথচ স্বাভাবিক সময়ে সরবরাহ পাওয়া যায় ২০০-২২০ মিলিয়ন ঘনফুট। আশুগঞ্জে কম্প্রেসার স্টেশন বসানোর পর চট্টগ্রামে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে ২৩০-২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। কেজিডিসিএলের পক্ষ থেকে এ স্টেশন চালু হলে ৭০-৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস অতিরিক্ত পাওয়া যাবে জানানো হলেও বাস্তবে তা হয়নি।
কেজিডিসিএলের প্রকৌশল শাখার কর্মকর্তারা জানান, কম্প্রেসার স্টেশন চালু হলেও প্রকৌশলগত সমস্যার কারণে শুরুতে আশানুরূপ সরবরাহ বাড়েনি। চালুর পর প্রতিদিন ১০-১৫ মিলিয়ন ঘনফুট অতিরিক্ত গ্যাস পাওয়া গেছে। বর্তমানে সমস্যা কাটিয়ে ওঠায় সরবরাহ বেড়ে চট্টগ্রামে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ সর্বোচ্চ ২৫৮ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত উঠেছে। কিন্তু নতুন সংযোগ দেয়ার পাশাপাশি চাহিদার পরিমাণ প্রতিদিনই বাড়তে থাকায় সংকট তীব্র হচ্ছে।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে দুই মাসের মধ্যে গ্যাস সংকট কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট কাটেনি।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট মোকাবেলায় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো মিয়ানমার থেকে গ্যাস আমদানি, এলএনজি টার্মিনাল তৈরি করে গ্যাস সরবরাহ ও বাখরাবাদ থেকে সরাসরি চট্টগ্রামে একটি গ্যাস পাইপলাইন বসানোর দাবি করেছে। চট্টগ্রাম লোয়ার স্ট্রিম (ভাটি অঞ্চল) হওয়ায় আপার স্ট্রিম (উজান) থেকে গ্যাস সরবরাহে বেগ পেতে হয়। চট্টগ্রামের সঙ্গে দেশের উজানে থাকা বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রের বিদ্যমান পাইপলাইন পুরনো হওয়ায় সরবরাহ অনুযায়ী গ্যাস পাওয়া যায় না। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন পাইপলাইনের দাবি তুলেছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও সাধারণ গ্রাহকরা।
কেজিডিসিএলের তথ্যানুসারে, ২০০৯ সালের আগস্টে শিল্প, বাণিজ্যসহ বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরির গ্যাস সংযোগ বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। ২০১০ সালের ১৫ জুলাই আবাসিক গ্যাস সংযোগও স্থগিত করা হয়। পরে ২০১৩ সালের জুন থেকে নিষেধাজ্ঞা আংশিক প্রত্যাহার করা হলে আবাসিক পর্যায়ে গ্যাস সংযোগ দেয়া শুরু হয়। এতে আগের প্রায় সাড়ে চার লাখ গ্রাহকের সঙ্গে আরো এক লাখ নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়েছেন। তবে এখনো শিল্প-কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেয়া পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রামে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪২০-৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে সরবরাহ পাওয়া যায় ২৩০-২৫৮ মিলিয়ন ঘনফুট। গতকাল পাওয়া গেছে ২৫১ ঘনফুট গ্যাস। এরই মধ্যে আবাসিক পর্যায়ে প্রায় এক লাখ নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। ফলে গ্যাসের চাহিদাও বেড়েছে। পাইপলাইন পুরনো হওয়ায় কম্প্রেসার স্টেশন বসানোর পরও আশানুরূপ সরবরাহ না বাড়ায় নতুন পাইপলাইন বসানো ছাড়া উপায় নেই বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কেজিডিসিএলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (বিতরণ) প্রকৌশলী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘চাহিদার অর্ধেক গ্যাস দিয়ে বিপুল গ্রাহককে খুশি করা যাচ্ছে না। আশুগঞ্জে কম্প্রেসার স্টেশন চালু হওয়ায় সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। তবে সংকট এখনো কাটেনি। স্বল্প সরবরাহের মধ্যে সব শ্রেণীর গ্রাহকের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে গ্রীষ্মকাল এলে সরবরাহ ব্যবস্থার কিছুটা উন্নতি হবে বলে আশা করি।’
গ্যাস সংকট সমাধানের জন্য জাতীয় গ্রিড থেকে বাড়তি গ্যাস চেয়ে প্রতি বছরই চিঠি দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কেজিডিসিএল। তবে এ বিষয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। কিন্তু শীত মৌসুমে সরবরাহ কমে যাওয়ায় নগরীর অধিকাংশ এলাকায় সকাল ও রাতে গ্যাসের চাপ কমে যায়। ফলে দুর্ভোগের শেষ নেই চট্টগ্রামবাসীর।