আবু মকসুদ-এর একগুচ্ছ কবিতা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪, ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ
দী ন হী ন দূ র দৃ শ্য
এক
দিগন্তের কাদা থেকে মানুষ উঠে এসে
আয়ত্ত করে পৃথিবীর অধিবিদ্যা
অতঃপর খনন কার্যে ব্যয়িত করে
জীবনের সমস্ত অর্জন
কাঁকড়া পাড়ায় চিলের আবির্ভাবে
অধীন পৃথিবী যায় গর্তের খোঁজে
গর্ত স্থায়ী আবাসে পরিণত হলে
মানুষের জানা হয় না চন্দ্রকথা
বিশ্রাম অন্তে হরিয়ালির কণ্ঠ গীতে
বিভোর পরিপাশ কাকের বাস্তবতা
অস্বীকার করতে পারে না, ভেজা বেড়ালিয়
মনোভাবে মেলে না হাতের প্রয়োগ
তার জন্য অন্তত শ্বাসের কষ্টটুকু সইতে হয়
শেষ বাসস্টপে অপেক্ষারা অপেক্ষায় বসে থাকলে
হৃদয়ের ভয় কেটে যায়, গভীর খাদে সাদা পতাকার উত্তোলন
আপাত মুক্তির পথ দেখালেও
শ্রেণিভেদ মনকে উদ্বেলিত করতে পারে না…
তবু অধিবিদ্যা লব্ধ মানুষ পাড়ি দেয়
কেউ কেউ পৌঁছেও যায়
দুই
একটা রাজহংসীর প্রেমে মন তোলপাড় হলে ভাবলাম… পুরাণ-কথা
পুনরায় ঝালিয়ে নেয়া যাক অথবা নেয়া যাক অবিশ্বাসীর দায় মুক্তি
যাচাইয়ের সুযোগ। গভীর অবলোকনে তার পালকের গতি মাপতে
থাকলাম এবং ভাবতে থাকলাম যে কোন মুহূর্তে কদলীবৃক্ষ থেকে ঝরবে
নহর, ওষ্ঠদ্বয় প্রসারিত হয়ে আপেলের রসে ভরবে হৃদয়। অতি উৎসাহী
মনে বরফ ঠান্ডা জলের বৃষ্টি হলে দেখলাম আদতেই হংসী সম্প্রদায় এক
বিভ্রান্ত জগতের বাসিন্দা, মনুষ্য পদার্পণেও এ জগতের কোন হেরফের
কস্মিনকালে হবে না।
বেলতলা এবং ন্যাড়ার ঘটনা মনে দাগ কাটছে না, ঘোড়ার দাপড়ানি
অসহ্যের মাত্রা ছাড়ালে পুনরায় হাতে নেই চিরুনি। পালিশে পালিশে হবে
মিহিদানা, মিষ্টান্ন ভক্ষণ অন্তে পরিতৃপ্তির ঢেঁকুর উঠবে ভেবে পিছু নেই
আরেক দুরন্ত হরিণীর। ক্লান্ত দৌড়বিদের তড়পানি বিদ্রূপ ছড়ালে হরিণীর
অদৃশ্য লেজ জানায় খেলা খুব জটিল, কুট এবং কৌশলে পারদর্শী না হয়ে
মাঠে নামা উচিত না। হরিণীর দেহবল্লভি নিমেষেই মিলিয়ে গেলে আমি
দেখি অলীক ধুঁয়া, গঞ্জিকা সেবনে খেলার আপাত সমাপ্তি ঘটে।
প্রেম ভালোবাসা সেও এক অলীক সম্ভাবনা অথবা নিজের রক্তের কাছে
আওড়ানো স্বগত সংলাপ।
তিন
অহেতুক পায়চারি অন্তে
গৃহ প্রবেশের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হলে
পথিক ভাবে নরকের দরজা কতদূর
বিপরীত চিন্তায় ওইখানে পৌঁছানোই শ্রেয়
দণ্ডায়মান মূর্তির ঘাড়ে এবং মাথায় পাখির বিষ্ঠা
গোড়ালির কাছে জমে আছে মানুষের মল
ঘরের মূর্তিমান অবস্থায় চেয়ে
শ্বাসরোধী দুর্গন্ধ সহনীয় হতে পারে
কুষ্ঠরোগীর পরিত্যাজ্য কাপড়ে মানুষের অনীহা
অসম্ভব ও পাড়া মাড়ানোর ভাবনা
ভয়ঙ্কর রক্তচক্ষু এড়াতে
দণ্ডিত মানুষ সজারুর কাঁটাকেও চিরুনি ভাবে
দড়ি বাঁধা ছাগল-ছানার কান্না
মনে তোলপাড় হলে ভাবি
এসে গেছে দুঃখ ভাসানের রাত্রি, ভোরে
ক্রিসেন্ট লেকে ভাসবে লাশ
কয়েকটি উৎপাতহীন রজনী
মুখোশের আড়ালে লুক্কায়িত একটা তিল
মনে উদয় হলে, উবে যায় সর্বনাশের ভাবনা
চেষ্টা করলে পুনরায় জলদস্যু হওয়া যেতে পারে…
চার
শুভ্র পাথরের দালানে সৌভাগ্যের প্রবেশ
বিস্ময়কর জানালায় তাকিয়ে
সমৃদ্ধির ব্যাপকতা অনুভব করি
উদ্যানে খোলা গায়ে খেলছে ধূসর নারী
তাদের দেহ নিঃসৃত বাতাসে আলুথালু পরিপাশ
নান্দনিক পায়ের ছাপ পেরুলেই
দেখি দাঁড়িয়ে আছে উৎকীর্ণ যুবা
চক্ষু যুগলে লেগে থাকা স্বেদ বিন্দু
দেখে- হতবিহবল হতে হতে
পাশ ফিরলেই দেখি সাজিমাটির মূর্তি শুষে
নিচ্ছে যৌবনের জৌলুস, লজ্জাবনত চোখ
আপসেই মুদে এলে ফিরি নিজস্ব সত্তায়
দালানের গায়ে লেপ্টে থাকা
আগাছা আমাকে স্মরণ করায় অস্তিত্বের তুচ্ছতা,
ক্ষুদ্রতা অতি ভয়ঙ্কর ভেবে পা বাড়াই
প্রাচীরের বাইরে মুক্তি কিংবা আবদ্ধতায়-
এ হিসাব মেলাতে মেলাতে উপলব্ধির উপকূলে পৌঁছাই
সমৃদ্ধি নাগালের বাইরেই থাকুক
একাকিত্বের ভারে ন্যুব্জ দালান
সকাল হলেই আত্মহত্যায় যায়
আমি প্রতিদিন বেঁচে থাকি, এ বেশ থাকা ।
পাঁচ
সৌন্দর্য বর্ণনা করবে বলে
তারা বেছে নিয়েছে
শব্দ সন্ত্রাসের পথ
খনন কর্মে দক্ষতা দেখাতে
পাঁজরে জমিয়ে রাখা
কুয়াশা খুঁড়েছে
বিলাসী জীবনে অনভ্যস্ত
বুকের পুরাতন কাহিনি ঝেড়ে
স্বপ্নের বাজারে পসরা সাজিয়েছে
তারা নিজেদের গতিবাজ ভেবেছে
এবং ছুটে পৌঁছে গেছে
তাদের প্রস্ফুটিত সৌন্দর্যে
প্রকৃতি মহিমা মণ্ডিত হলে
আমরা জানলাম-
অভিনেতার মুখোশেও
থাকে গভীর ত্যাগ কিংবা জানার আকাঙ্ক্ষা
ভালোবাসার সুতো জড়িয়ে,
বিশ্বাসের গভীরতায় পর্বত পাড়ি দেয়া সম্ভব
আর পর্বতের ওপারেই রয়েছে সত্য কিংবা সূর্য ঠাকুর…
ছয়
গোধূলির বাড়ির পাশে সন্ধ্যারা থাকে
রাতের পড়শি হুতুম পেঁচারা
ডানার তড়পানি নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হলে
আকাশের আলোর সাথে
পাল্লা দেয়া জোনাকিরা
বৃক্ষের আঁধার ছেড়ে
উড়াল দেয় খোলা ময়দানে
জোনাকির নিরুদ্বিগ্ন পাখা
ময়দানের মুক্ত বাতাসে ঠোকর খেলে
মনুষ্য প্রজাতি আমোদিত হয়
হুতুম পেঁচার ভয়ে পর্যুদস্ত মানব
অন্ধকারে আশাজাগানিয়া আলো
অবলোকন করে পুলকিত চিত্তে
পা বাড়ায় আত্মার গহীন গন্তব্যে
আধেক জীবন অন্ধকারে কাটিয়ে মানব আত্মা
ভোরের খিড়কির খোলার প্রত্যয়ী হলে
রবীবাবু তার করুণার ডালা নিয়ে উদয় হন
প্রভাতের দূর্বায় ঝিকিমিকি শিশির দেখে মানব আত্মা
জোনাকির আশাজাগানিয়া আলো বেমালুম ভুলে যায়
জোনাকির নেই কৃতঘ্নের দায়
সুখকর জীবনে
মানুষই বয়ে বেড়ায় আলোর অভিশাপ