কুলাউড়ার কর্মধায় নদীতে ডুবিয়ে শিশু হত্যা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪, ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ
কুলাউড়া প্রতিনিধি ::
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব বাবনিয়া গ্রামে গত ১৫ ডিসেম্বর সোমবার বিকেলে শাকিল (৫) নামক এক শিশুকে ফানাই নদীর পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করে কিশোর আতিক (১৩)। হত্যাকারী ইউপি সদস্যের আত্মীয় ও প্রভাবশালী হওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও শিশু শাকিলের চাচা তাহির কারীর যোগ সাজশে ৮০ হাজার টাকায় বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়। আর এলাকায় প্রচার করা হয় শিশুটি পানিতে ডুবে মারা গেছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, পূর্ব বাবনিয়া গ্রামের কাতার প্রবাসী ইব্রু মিয়া ও রহিমা বেগমের ছোট ছেলে ও নিজামিয়া কিন্ডার গার্টেনের প্লে গ্রুপের ছাত্র শাকিল গত সোমবার দুপুর আনুমানিক দুইটায় নিখোঁজ হয়। বিকেল ৫টায় তার লাশ পার্শ্ববর্তী ফানাই নদীতে ভাসতে দেখা যায়। নামপ্রকাশ না করার শর্তে এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, একই গ্রামের হাবিবুল্লার নাতি (মেয়ের পুত্র) আতিক দুপুরে সোনার আংটি চুরি করার সময় শিশু শাকিল তা দেখে ফেলে। শাকিল বিষয়টি সবাইকে বলে দেবে বলায় কিশোর আতিক ক্ষুব্ধ হয়ে বাড়ির পাশ্ববর্তী ফানাই নদীতে নিয়ে গলাটিপে এবং পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিহত শিশু শাকিলের গলায় দাগ ও জিহ্বা বের করা ছিলো। ঘাতক আতিক কর্মধা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার হেলাল আহমদের আত্মীয় হওয়ায় বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বিকেল থেকে প্রচারণা চালানো হয় শাকিল পানিতে ডুবে মারা গেছে। এনিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।
ঘটনার পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সহিদ বাবুল, মেম্বার হেলাল আহমদ ও নিহত শিশু শাকিলের চাচা মিলে বিষয়টি আপোষ নিষ্পত্তি চেষ্টা তদবির শুরু করেন। রাতে নিহতের পরিবারকে ৮০ হাজার টাকায় প্রদান করা হয় এবং একটি সাদা কাগজে বাড়ির লোকজনের স্বাক্ষর নেয়া হয়। শিশু শাকিলের মা রহিমা বেগমের স্বাক্ষর নেয়া হয় জোরপূর্বক। তবে বাড়ির অন্য ২-৩ জন লোক এই কাগজে স্বাক্ষর করেননি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
গতকাল ১৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বেলা ২টায় শিশু শাকিলের জানাজা শেষে গ্রাম্য কবরস্থানে দাফন করা হয়। এদিকে নিহত শাকিলের হন্তারক কিশোর আতিকের বাড়ির কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের মনু এলাকায়। তবে তার বাবার নাম জানা যায়নি।
ইউপি মেম্বার হেলাল আহমদ জানান, শিশু শাকিলের লাশ ফানাই নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ না করায় তারা প্রশাসনের অনুমতি স্বাপেক্ষে দাফন করেছেন।
কর্মধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সহিদ বাবুলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বিষয়টি সহকারী পুলিশ সুপার কুলাউড়া সার্কেল জুনায়েদ আলম সরকার ও কুলাউড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমানকে সংবাদকর্মীরা অবগত করলেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তবে তারা জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তারা অবগত নন। কেউ তাদের কাছে অভিযোগ করেনি। তারপরও সহকারী পুলিশ সুপার কুলাউড়া সার্কেল জুনায়েদ আলম সরকার বিষয়টি দেখছেন বলে জানান।