কমলগঞ্জে চা বাগানে প্রাচীন বটগাছের নিচে বনদেবীর পূজা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪, ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ
জয়নাল আবেদীন ::
প্রাচীনতম বট গাছ এখনও চা শ্রমিকদের পূজা-অর্চনার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। সুদীর্ঘকাল থেকে চলে আসা অরণ্য সংস্কৃতির অংশ হিসাবে বনস্পতি বা বন দেবীর পূজা করে থাকেন চা শ্রমিকরা। বনে জঙ্গলে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে চা বাগানের শ্রমিকরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে কাজ করেন। বনদেবী পূজার মধ্যদিয়ে নিজেদের আরাধনা ও আত্মরক্ষার অংশ হিসাবে চা শ্রমিকরা ব্যাপক উদ্দীপনায় বন দেবীর পূজা পালন করে। তারই অংশ হিসাবে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর চা বাগানের তিনটি পৃথক স্থানে গতকাল ১৩ ডিসেম্বর শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় শমশেরনগর চা বাগানের বাঘিছড়া, বাংলাটিলা ও বাঘিছড়া নার্সারী টিলায় ঢোল বাজিয়ে, ধর্মীয় গান গেয়ে বন দেবীর আরাধনা করছে নারী চা শ্রমিকরা।
সরেজমিন দেখা যায়, বাঘিছড়া চা প্লান্টেশন এলাকার উচু টিলার উপরে প্রায় দেড় শতাধিক বছরের পুরানো বৃহদাকৃতির বট গাছের গোড়ায় লাল সালু কাপড় দিয়ে মুড়ে বাঘর উপর বন দেবী হিসাবে দূর্গার মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে নারী চা শ্রমিকরা পূজা অর্চনা করছে। এক দিকে চলছে চা শ্রমিকদের ভক্তি। অন্যদিকে আগত নারী চা শ্রমিকদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ। মাইকে ধর্মীয় গান। নানা বর্ণ ও ধর্মের অতিথিদের আপ্যায়নেরও ব্যবস্থা চলছে সমান তালে।
শমশেরনগর চা বাগানের ব্যবস্থাপকের বাংলোর পাশের টিলায় অস্থায়ীভাবে মণ্ডপ করে সেখানে বন দূর্গার মূর্তি স্থাপন করে চলছে পূজা অর্চনা। নারী শ্রমিকরা বাঘিছড়া চা প্লান্টেশন এলাকার নার্সারী টিলায়ও পূজা-অর্চনায় রয়েছেন।
চা বাগানের পুরোহিত দ্বীননাথ পণ্ডিত জানান, বাগানে মহিলা চা শ্রমিকরা পাহাড়ি উচুঁ-নিচু টিলায় ঝোঁপ জঙ্গলের মাঝে প্রতিদিন কাজ করে। চা শ্রমিকদের এ কাজে থাকে সাপ, বিচ্চু, বন্য জন্তুসহ নানান বিষাক্ত কীট পতঙ্গের আক্রমণ। চা শ্রমিকরা এমনিতেই প্রকৃতির মাঝে কাজ করে প্রকৃতির উপাসনা করে।এটি একটি অরণ্য সংস্কৃতি। যুগযুগ ধরে চা শ্রমকিদের মাঝে একটি বিশ্বাস আছে দূর্গা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রূপে থাকেন। এমনি তিনি বনে থাকেন বনের দূর্গা রূপে। তাই তারা বনের রাজা বাঘের মূর্তির উপর দূর্গার মূর্তি স্থাপন করে বিপদ নাশিনী হিসাসে বনদেবীর প্রার্থনা করে।
চা শ্রমিকরা মনে করেন বনদেবীকে খুশি না করলে বনে বিপদের মাঝে পড়তে হবে। তাই এ মৌসুমে বন দেবীর তুষ্টির জন্য পূজা অর্চনা করে কাজ শুরু করেন। তার ধারাবাহিকতায় গত শনিবার ভোর থেকে শমশেরনগর চা বাগানের তিনটি পৃথক স্থানে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় বন দেবীর পূজা উদযাপন করা হয়েছে।