লাইগেশনের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনায় উদ্বুদ্ধ করছেন ইউপি নারী সদস্যরা
প্রকাশিত হয়েছে : ৯ ডিসেম্বর ২০১৪, ১২:৪৯ অপরাহ্ণ
মহ্সীন মুরাদ ::স্থানীয় সরকারের আওতাধীন ইউনিয়ন পরিষদেগুলোতে কার্যক্ষমতার সঠিক ব্যবহার করছেন নারীরা। সামাজিক বিভিন্ন বাধা ঠেলে এখন উন্নতির দোরঘোরায় এসে পৌঁছেছেন তারা। এমনটা দাবি করেছেন ইউপি নারী সদস্যগণ। তারা বলেন, পূর্বে আমাদের এলাকায় সাধারণত পরিবার পরিকল্পনায় লাইগেশন সম্পর্কিত বিষয়টিই গ্রাম্য নারীদের কাছে অনেক জটিল ছিল। তারা মনে করত এটা জীবনের জন্য মহাক্ষতির একটা অংশ। কিন্তু বারবার তাদের বাড়িতে গিয়ে সেটাকে আমরা বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। ফলে বিভিন্ন জায়গায় লাইগেশনের মাধ্যমে অধিক সন্তান নেয়ার প্রবনতা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এতে করে নারীদের সুস্বাস্থ্যের যেমন অগ্রগতি হয়েছে তেমনি মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকিও কমেছে। সদর উপজেলার আমতৈল ইউনিয়নের নারী সদস্যদের সাথে আলাপে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি নারী উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছেন ইউপি নারী সদস্যরা। এতে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পুরুষ সদস্যরাও সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। তাই গ্রামের সকল স্তরের নারীদের পূর্বের তুলনায় অনেক উন্নতি হয়েছে। এ জন্য সরকারি উদ্যোগে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে নারীদের কল্যাণে ইউপি নারী সদস্যরা সুপরামর্শ দিয়ে থাকেন। ইউপি নারী সদস্যরা জানান, নারীদের সুস্থ থাকার জন্য স্যানিটেশন ব্যবস্থা দেয়া হয়। দম্পতিদের পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে জ্ঞানসহ গ্রামের অসহায় নারীদের মাতৃত্বকালীন সময়ে ভাতাও প্রদান করা হয়। এদিকে সদর উপজেলার সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন অফিস আদালত স্কুল কলেজে কর্মরত থাকা নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে অনেক কম রয়েছে। এ জন্য নারীদের শিক্ষিত হয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এদিকে ইউনিয়ন পরিষদে ১৯৯৬ সালে বিপুল সংখ্যক নারী দেশে জনসাধারণের কল্যাণের কাজ করার উদ্দেশ্য নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আজ পর্যন্ত তারা জনগণের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে কতটুকু সফলতা বয়ে আনতে পেরেছেন সেটা এখনো স্পষ্ট করে বলা যায় না। তবে পূর্বের তুলনায় নারীরা এখন অনেকটা এগিয়ে আছেন সেটা স্বীকার করেছেন বোদ্ধামহল।
ইউনিন পরিষদের উপর সাধারণ এক জরিপে দেখা গেছে, নারী সদস্যদের মধ্যে থেকে অনেকে ২০ হাজার টাকা থেকে লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ করে সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে মোট ৩৬ জন নারী সদস্য কাজ করে যাচ্ছেন। তারা সবাই নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের অধিকারী। এদের মধ্যে প্রতি একজন মহিলা সদস্যের আওতাধীন ৩টি ওয়ার্ড থাকে। ইউনিয়ন অফিসে পুরুষ সদস্যেদের সাথে সমানভাবে কাজ করার অধিকার রয়েছে নারী সদস্যদের। নারীরা কাজে ক্ষমতায় পূর্বের তুলনায় বর্তমানে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন।
সামাজিক বাধ্য বাধকতায় কিছুটা হলেও আটকে আছেন আমাদের দেশের নারীরা। এমন তথ্য দিয়েছেন আমতৈল ইউপি চেয়ারম্যান সুজিত দাশ। তিনি বলেন, নারীরা চাইলেই জনগণের স্বার্থে রাত বারোটায় ঘর থেকে বের হতে পারবে না। এটা আমাদের সামাজিক বাধা। তবে এগুলো মেনেও নারীদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবার পক্ষ থেকে তাদের সম্মান দিয়ে কাজের ক্ষেত্রে উদ্বোদ্ধ করতে হবে। পরিবার থেকে সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে। পরিবর্তনের শুরু হবে সেখান থেকেই। পরিবারে নারী স্বাধীনতা প্রদানের মাধ্যমে নারী উন্নয়ন সম্ভব।
সুজিত দাশ আরো বলেন, আমার ইউনিয়নে যখনই কোন মিটিং হয় সেখানে আমাদের পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি শতভাগ নারী উপস্থিত থাকেন এবং কাজে তারা আমাদের শতভাগ সহযোগিতা করেন। আমাদের ইউনিয়ন ২০১৪ সালে পরিবার পরিকল্পনার জন্য চ্যাম্পিয়ান হয়েছি। আমার বিশ্বাস আমার ইউনিয়নের নারী সদস্যরাসহ সকল নারীগণই আমাদের উপর সকল দিক থেকে সন্তুষ্ট রয়েছেন। নারীরা আগের তুলনায় এখন অনেকটা এগিয়ে আছে। আমরাও তাদের সমমান রাখার যতেষ্ট চেষ্টা করি।
মাতৃত্বকালীন ভাতা পেয়েছেন দেওয়াই-জগৎসী এলাকার শৈলেন্দ্র করের স্ত্রী ষষ্টি কর ও যদুর অলহা গ্রামের পৌরষ মিয়ার স্ত্রী সুজনা বেগম জানান, ইউপি মহিলা সদস্যের মাধ্যমে কিছুদিন আগে মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড পেয়েছেন। এতে তাদের অনেক উপকারে হবে। দরিদ্র স্বামী পরিবারের খরচ চালনার পাশাপাশি গর্ভকালীন সকল ঔষধ-পথ্য দিতে পারছেন না। এ টাকা পেলে তাদের অনেক কাজে আসবে।
ইউনিয়নের বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং কমিটি মধ্যে স্যানিটেশন পানি সরবরাহ পয়ঃনিষ্কাশন সভাপতি ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য, শিপ্রা রানী পাল বলেন, পরিবার পরিকল্পনার মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে আমরা কাজ করছি। এক্ষেত্রে আমরা অনেকটাই সফল হচ্ছি। বর্তমানে ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডে পুরোপুরি সফল। অনেক নারীর লাইগেশন করিয়েছি আমার হাতেই। তবে ৯ নং ওয়ার্ডে বর্তমানে কাজ করছি। আমরা পুরুষ সদস্য সহকারে সমন্বিত কাজ করি। তারা আমাদের যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল আলম খান জানান, নারীরা সরকারীভাবে সর্বক্ষেত্রেই সুবিধা পাচ্ছেন। ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য ও নাগরিক হিসাবেও তাদের ন্যায্য অধিকার ভোগ করছেন। নারী সম্পৃক্ত যেকোন কাজেই তাদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়। বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানেও ইউনিয়ন পরিষদ যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে।