এশিয়া এনার্জির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার
প্রকাশিত হয়েছে : ৯ ডিসেম্বর ২০১৪, ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক ::
এশিয়া এনার্জি লাইসেন্স পায় ফুলবাড়ীতে সমীক্ষা পরিচালনার জন্য। দুই বছর মেয়াদি এ লাইসেন্সের কার্যকারিতা ২০০৬ সালেই শেষ হয়ে গেছে। এর পর তা আর নবায়ন হয়নি। তার পরও ফুলবাড়ীতে কয়লা উত্তোলনের লাইসেন্স পেতে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে কোম্পানিটি। এজন্য স্থানীয় জনগণকে প্রভাবিত করার চেষ্টাও করছে তারা। এসব কর্মকাণ্ডকে অবৈধ উল্লেখ করে এশিয়া এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার।
জ্বালানি বিভাগের তথ্যমতে, দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে সমীক্ষা ও কর্মপরিকল্পনার জন্য দুই বছরের লাইসেন্স পায় এশিয়া এনার্জি। ২০০৪ সালের ২৮ জানুয়ারি দেয়া ওই লাইসেন্সের মেয়াদ ২০০৬ সালের ২৭ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি) প্রদত্ত এ লাইসেন্স আর নবায়ন করা হয়নি। সমীক্ষা জমা দেয়ার পর সরকারও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেনি। ফলে ২০০৬ সালের পর থেকে এশিয়া এনার্জির সঙ্গে বিএমডির কোনো সম্পর্ক নেই। তার পরও ফুলবাড়ী নিয়ে নানা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে কোম্পানিটি।
জ্বালানি বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দিক এ প্রসঙ্গে জানান, ‘এশিয়া এনার্জিকে শুধু সমীক্ষা পরিচালনার অনুমোদন দেয়া হয়েছিল, যার মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদন ছাড়াই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদের কার্যক্রমের আইনগত দিক যাচাই করে দেখছি। এর পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সূত্র জানায়, এশিয়া এনার্জি করপোরেশন বাংলাদেশ লিমিটেডের মূল প্রতিষ্ঠান জিসিএম রিসোর্সেস। লন্ডন স্টক মার্কেটে কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত। শেয়ারের অব্যাহত দরপতনের মুখে পড়ে বাংলাদেশে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এরই অংশ হিসেবে এশিয়া এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গ্যারি এন লাই জ্বালানি বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনকে না জানিয়েই সম্প্রতি ফুলবাড়ী সফরে যান। সেখানে স্থানীয়দের ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়েন এ কর্মকর্তা।
জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এশিয়া এনার্জি নানা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের কয়লা খনি নিয়ে তারা লন্ডনে শেয়ার ব্যবসা করছে। অথচ তাদের কোনো বৈধতা নেই। প্রতি বছর লাইসেন্স নবায়ন ফি পরিশোধ করা হচ্ছে বলে দাবি করছে কোম্পানিটি। যদিও তাদের জমা দেয়া টাকা নিচ্ছে না বিএমডি। কারণ এশিয়া এনার্জির সঙ্গে কোনো ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা না করতে বিএমডিকে নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে জ্বালানি বিভাগ।
এশিয়া এনার্জি বলছে, ১৯৯৮ সাল থেকে বাংলাদেশে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এ পর্যন্ত ৬ কোটি ডলারের মতো বিনিয়োগ করেছে তারা। সরকারের সঙ্গে চুক্তির আওতায় যাবতীয় শর্ত মেনে প্রতি বছর লাইসেন্স ফিও জমা দেয়া হচ্ছে। চুক্তি ও খনি নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় রয়েছে বিএমডি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে গ্যারি এন লাই জানান, ‘খনি ইজারাসহ কয়লা অনুসন্ধানের লাইসেন্স আছে আমাদের। এছাড়া উত্তরাঞ্চলে কয়লা অনুসন্ধান ও খনি খননে সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। লাইসেন্স, খনি ইজারা ও চুক্তি— সবই হয়েছে বিএমডির মাধ্যমে। আমরা আমাদের কার্যক্রম অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাব।’
জানা যায়, এশিয়া এনার্জি পরিচালিত সমীক্ষার ভিত্তিতে ২০০৪ সালেই কয়লা উত্তোলনের লাইসেন্সের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে স্থানীয়দের আন্দোলনের কারণে এখন পর্যন্ত তা দেয়নি সরকার। মহাজোট সরকারের আমলে এশিয়া এনার্জির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জ্বালানি বিভাগকে সুপারিশ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। পাশাপাশি তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটিও দীর্ঘদিন ধরে এশিয়া এনার্জিকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে আসছে।
বিএমডির এক কর্মকর্তা জানান, তারা কোথায় কীভাবে ফি জমা দিচ্ছে, তা বিএমডির জানা নেই। ২০০৬ সালে দুই বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এশিয়া এনার্জির সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি বিএমডি।
লন্ডনের হ্যামিলটন প্যালেসে জিসিএম রিসোর্সের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে আজ। এ সভা সামনে রেখেই এশিয়া এনার্জির প্রতিনিধি দল ফুলবাড়ী সফর করে বলে জানা যায়। বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করা ও প্রতিষ্ঠানের লোকসান ঠেকাতে ফুলবাড়ী নিয়ে কার্যক্রম দেখাতে চায় তারা। জনমত তৈরির জন্য স্থানীয় পর্যায়ে নানা ধরনের কর্মসূচিও নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গঠনের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের কাছে নানা সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে তারা।
এর আগে ২০১১ সালে কয়লা উত্তোলন ও ফুলবাড়ী কয়লাখনির সম্ভাবনার কথা জানিয়ে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ারের দর বাড়াতে সক্ষম হয় প্রতিষ্ঠানটি। এর পর ২০১২ সালের মার্চ থেকে কোম্পানির শেয়ারের দরপতন শুরু হয়। ফুলবাড়ী কয়লাখনির দায়িত্ব নেয়ার মাধ্যমে শেয়ারবাজারে প্রভাব ফেলতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। যদিও সর্বশেষ কার্যদিবসে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে এ শেয়ারের দর ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ২৫ পেনি।
উল্লেখ্য, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের প্রতিবাদে এবং এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ীতে জনতার বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালায়। এতে তিনজন নিহত হন। এর পর প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় প্রতিষ্ঠানটি। যদিও প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে এশিয়া এনার্জি।