আজ ৬ ডিসেম্বর কুলাউড়া মুক্ত দিবস
প্রকাশিত হয়েছে : ৬ ডিসেম্বর ২০১৪, ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ
নাজমুল ইসলাম ::
আজ ৬ ডিসেম্বর শনিবার মৌলভিবাজারের কুলাউড়া মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে এই উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত হয়। সারাদেশের মত কুলাউড়ায়, সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্র-যুবক, শ্রমিকসহ সবাই সাহসী ভূমিকা নিয়েছিল।
সারা বাংলায় পাকিস্তানী সামরিক জান্তারা অত্যাচার নিপীড়ন শুরু করলেও কুলাউড়া থানায় তাদের প্রথম আগমন ঘটে ৭ মে ১৯৭১ সালে। মৌলভীবাজার থেকে কুলাউড়া ঢুকার পথে কাপুয়া ব্রিজের কাছে গতিরোধ করতে অকুতোভয় বীর সৈনিক মোজাহিদ সদস্য জয়চণ্ডী ইউনিয়নের মো. আকরাম ওরফে আছকির মিয়া ও হাবীব উদ্দিন। পাক সেনা ও দুদলের মধে গুলি বিনিময় চলতে থাকে, এক পর্যায়ে তারা দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীন হন। এই দুই জনই বীর সন্তান হলেন কুলাউড়া থানার প্রথম শহীদ।
৫ এপ্রিল থানার জয়চন্ডী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে রাজাকার সহযোগে পাক সেনারা ২২ জন গ্রামবাসীকে ধরে এনে ও ২৪ মে, ১৪ জুন মীরবক্সপুর গ্রামে গিয়ে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীকে হত্যা করে একই গ্রামে গিয়ে নিধনযজ্ঞ চালায়। এই উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধারা যেসব স্থানে অপারেশন চালায় এর মধ্যে উপজেলার দত্তগাঁও, চাতলাপুর চা বাগান, চাতলাপুর আলীনগর ফাঁড়ি, পাইকপাড়া, মনু রেল স্টেশন, পৃথিমপাশা বরমচাল, জুড়ী, বাজার সহ চাবাগান, ফুলতলা চা বাগান এলাকা, মনু রেলস্টেশন লাইন কর্মধা এলাকা উলেখযোগ্য।
নভেম্বর শেষপ্রান্তে এবং ডিসেম্বর প্রথম দিকে ভারত ও বাংলাদেশ চুক্তি হওয়াতে যৌথ মিত্র বাহিনী মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লে যুদ্ধের গতি তীব্রভাবে বেড়ে যায়। থানার সবচেয়ে বড় ও সর্বশেষ অপারেশন হয় গাজীপুর চা বাগানে। উক্ত চা বাগানে যুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। নেতৃত্বে ছিলেন মেজর আব্দুল ওয়াহিদ মোগল। প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এক ব্যাটালিয়ান সৈন্য বাগানে অবস্থান করছিল। অপরদিকে গাজীপুরের বিপরীতে চোঙ্গাবাড়ী। সেখানে মুক্তি বাহিনীর ক্যাম্প ছিল।
নভেম্বর শেষ দিকে গাজীপুর মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন এম এ মোমিত আসুক। সাগরনাল চা বাগানে প্রথম এসে অবস্থান নেয় তারা। উক্ত স্থানে মিলিত হন ধর্মনগর থেকে আগত কর্ণেল হর দয়াল সিংহের নেতৃত্বে ভারতীয় সেনা বাহিনী ৬৭ রাজপুর রেজিমেন্টের বিরাট একটি দল। তারাও বাগানে অবস্থান নেয়। ৩০ নভেম্বর কাকুরা চা বাগান অবস্থানকারী ৭৫ জন রাজাকার ও ৫ জন পাকিস্তানী সৈন্য ধরা পড়ে। ১ ডিসেম্বর কাকুরা চা বাগান থেকে গাজীপুর চা বাগান এলাকার দিকে মিত্র বাহিনীরা অগ্রসর হলে পাক সেনাদের সাথে পাল্টা গুলি বর্ষণ চলতে থাকে। ২ ডিসেম্বর রাত যুদ্ধ হয়। ৩ ডিসেম্বর ৪/৫ গোর্খা রেজিমেন্ট কর্নেল হারকিলের নেতৃত্বে একটি দল সাহায্যে এগিয়ে আসে। পেছনে ৯৯ মাইল্টেল ব্রিগেডের আর্টিলারী সহায়তায় রাতেও প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। তবুও গাজীপুর চা বাগান এলাকা দখল মুক্ত সম্ভব না হওয়াতে ৪ ডিসেম্বর যুদ্ধের পরিকল্পনা বদলে ফেলা হয়। পিছন দিক থেকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা নেন, হারকিল। সে অনুযায়ী এম এ মোমিত আসুক ও মোহন লাল সোম পিছনে আসার দায়িত্ব গ্রহণ করে রাত ১২টায় সম্মিলিত বাহিনী পাকিস্তানী বাহিনীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শেষ দিকে লস্করপুর গ্রামে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনী এ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। উক্ত যুদ্ধে প্রায় ২৫০ জন পাক সৈন্য প্রাণ হারায়। জীবিতরা সবাই পালানোর চেষ্টা।
৫ডিসেম্বর গাজীপুর চা বাগান এলাকা মুক্ত হয়। ঐ দিনই সন্ধ্যার দিকে সম্মিলিত বাহিনী কুলাউড়ায় পৌঁছে, এ রাতেই সব পাকিস্তানী সৈন্য ব্রাহ্মণবাজারের দিকে সড়ক পথে কুলাউড়া ত্যাগ করে। এভাবেই ৬ ডিসেম্বর কুলাউড়া শত্রুমুক্ত হয়। থানার আকাশে ওড়তে থাকে লাল সবুজ স্বাধীনতার পতাকা।
সারা বাংলায় অসংখ্য মুক্তযোদ্ধাদের ন্যায় কুলাউড়া থানায় বিভিন্ন স্থান থেকে অংশ গ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় ৪৫০ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে পাওয়া এই বাংলাদেশ স্বাধীন।