বড়লেখায় আমন ধানের বাম্পার ফলন : ন্যায্য মূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা
প্রকাশিত হয়েছে : ৩ ডিসেম্বর ২০১৪, ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ
এ.জে লাভলু, বড়লেখা :: বড়লেখায় আমনমাঠে পাকা ধানের সোনালি হাসি। অগ্রহায়ণের উজ্জ্বল রোদে সেই হাসি আরও ঝলমল করে উঠছে। গ্রামবাংলার আকাশে-বাতাসে এখন নতুন ধানের গন্ধ, গ্রামে গ্রামে নবান্নের সাজ সাজ রব। মাঠে মাঠে কৃষকেরা কাস্তে নিয়ে ধান কাটার উৎসবে নেমে পড়েছেন। শীতের সকাল থেকে শুরু করে পড়ন্ত বিকেল পর্যন্ত মাঠে-মাঠে ধান কাটার চিরাচরিত দৃশ্য এখন উপজেলার সর্বত্র। ধান মাড়াই, বাছাই আর শুকানোর কাজে মেতে উঠেছেন এখানকার সব কৃষক পরিবার। অতীতের চেয়ে লক্ষ্যমাত্রার অধিক। জমিতে সোনা রাঙ্গা আমন ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূল থাকায় এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এতে কৃষকের মন ভরছে ঠিকই। কিন্তু তা বেশিক্ষণ তাঁদের পক্ষে ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, তাঁদের উৎপাদন খরচ তার বেশি সেটাই উঠছে না। ১২ ডিসেম্বর বুধবার উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে ও কৃষকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বড়লেখা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর প্রায় ৮ হাজার ৬১৭ হেক্টর জমিতে আমন ফসল চাষাবাদের সরকারি লক্ষ্যমাত্রা ছিল। চাষাবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৩৩ হেক্টর বেশি জমিতে। এ বছর ধানের উৎপাদনও ভালো হয়েছে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছিল স্থানীয় ও উচ্চ ফলনশীল মিলিয়ে ধানে প্রায় ৩৮৭৭৬.৫ টন। ধানে পোকার আক্রমণ না হওয়া, জমিতে সুষম সার ব্যবহারে কৃষকের দক্ষতা বৃদ্ধির কারণে উৎপাদনে এই সুফল মিলেছে বলে কৃষি অফিস জানিয়েছে। একই কথা কৃষকেরও। সম্প্রতি বিভিন্ন মাঠ ঘুরে ভালো ফসল দেখা গেছে। যেদিকে চোখ যায়, আমন ধানের পাকধরা বিস্তৃত সোনালি রঙের ঢেউ। অনেকে উৎসবের আনন্দে ধান কাটতে শুরু করেছেন। যখনই উৎপাদন খরচ ও ধানের বাজারমূল্যের প্রসঙ্গটি আসছে, তখনই তাঁদের মন ভারী হয়ে যায়।
উপজেলার নিজবাহাদুর এলাকায় কিছু পতিত জমি দেখিয়ে কয়েকজন কৃষক জানালেন, ধান উৎপাদন করে প্রকৃত খরচটাই তোলা যায় না বলে অনেকে চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। ভবিষ্যতে এ রকম পতিত জমির পরিমাণ বাড়তে পারে। মাঠে ধান কাটতে আসা কৃষক খছরুল ইসলাম, মাসুক আহমদ, কামাল উদ্দিন বলেন, ‘অখন (এখন) যে অবস্থা। গিরস্তি খরি (চাষ করে) জমি বেচি বেচি (বিক্রি করে) খাওয়া লাগব। এখনো নতুন ধানের দাম জানছি না। যদি আগের দাম থাকে, তাইলে ভিক্ষা করতে অইব (হবে)। খছরুল ইসলাম জানান, তাঁর এক কিয়ার (বিঘা) জমিতে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন এই এক কিয়ার জমি থেকে খরচের টাকা তোলাই কঠিন হয়ে পড়বে। ধান চাষ নিয়ে অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। তিনি বলেন, ‘এবার ফলন ভালো অইছে। কিন্তু কৃষকেরা দাম পাইয়ার (পাচ্ছি) না। এক কিয়ার জমিতে খরচ অয় (হয়) চাইর থাকি (থেকে) পাঁচ হাজার টাকা। ধান পাইয়ার তিন হাজার টাকার। ভাগিউলেও (বর্গচাষি) জমি নেয় না। এখন আমাদের যে কী উপায় অইব (হবে), বুঝিয়ার না।’ জানা গেছে, প্রতি মণ ধান উৎপাদন করতে খরচ হয় ৫’শ টাকা থেকে ৬’শ টাকা। প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৭’শ টাকা থেকে ৭’শ ৫০ টাকায়। দাম বেড়ে গেলে কৃষকের এই হতাশা হয়তো কিছুটা লাঘব হবে।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, বড়লেখায় আবাদকৃত জমির মধ্যে এবার ৫ হেক্টর জমিতে নতুন জাতের ব্রি ধান-৫৬ চাষ করা হয়েছে। ব্রি ধান-৫৬ আষাঢ়ের শেষ দিকে রোপন করে আশ্বিনে কাটা যায়। রোপন থেকে শুরু করে ১০০ দিনের মধ্যে ওই ধান কাটা যায়। ধানে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এবার ব্রি ধান-৪৯ এ ভালো ফলন পাওয়া গেছে। ব্রি ধান-৫৬ আগাম পাকে বিধায় কাটার পর সহজেই আলু, গম বা রবি শস্য চাষ করা যায়। এবার ব্রি ধান-৫৬ এর বাম্পার ফলনে কৃষকরা আগামীতে এই জাতের ধান চাষ করতে আগ্রহী হবেন বলে আশাবাদী কৃষি কর্মকর্তারা।
বড়লেখা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা দেবল সরকার জানান, এবার উপজেলায় রোপা আমনের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮৬১৭ হেক্টর। কিন্তু আবাদ হয়েছে ৮৬৫০ হেক্টর, যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৩ হেক্টর বেশি। ‘যথেষ্ট ভালো ফসল হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন ভালো হয়েছে। বলতে পারি, উৎপাদন সরকারি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।’