ভারত থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ
১শ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি, ৩৩ লক্ষ শ্রমিক বেকার হওয়ার আশঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ২ ডিসেম্বর ২০১৪, ৯:০১ পূর্বাহ্ণ
জয়নাল আবেদীন
ভারতের সংশ্লিষ্ট শুল্ক স্টেশনগুলোতে ওয়েইট ব্রিজ ও ওজন পরিমাপক যন্ত্র স্থাপন না হওয়ায় সিলেটের ৬টি শুল্ক স্টেশন দিয়ে প্রায় ৭ মাস ধরে কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। ফলে গত ৭ মাসে সরকার প্রায় ১০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ইটভাটাগুলোতেও ইট পোড়ানো নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কয়লা আমদানি শুরু না হলে সর্বস্বান্ত হওয়ার পাশাপাশি কয়লার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সারা দেশের প্রায় ৩৩ লাখ ইটভাটার শ্রমিকের বেকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে কয়লা আমদানিকারকরা জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেটের তামাবিল, সুতারকান্দি, ভোলাগঞ্জ, বড়ছড়া, চারগাঁও ও বাগলি শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে কয়লা আমদানি করা হয়ে থাকে প্রতিনিয়ত। এসব স্টেশন দিয়ে প্রতিবছর ভারত থেকে প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন কয়লা আমদানি হয়। ইটভাটা ছাড়াও চা-বাগান ও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে আমদানিকৃত এই কয়লা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গত মে মাসে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পরিবেশবাদী সংগঠন ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল অপরিকল্পিতভাবে কয়লা উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধে উচ্চ আদালতে রিট করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ মে থেকে সিলেটের সব শুল্ক স্টেশন দিয়ে কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। গত ৭ অক্টোবর ভারতের উচ্চ আদালত শর্ত সাপেক্ষে সাময়িক সময়ের জন্য কয়লা রফতানির অনুমতি দেয়। তবে বেঁধে দেওয়া শর্তের মধ্যে রয়েছে প্রতিটি শুল্ক স্টেশনে ওয়েইট ব্রিজের মাধ্যমে কয়লা পরিমাপ করে রফতানি করা। কিন্তু ভারতের শুল্ক স্টেশনগুলোতে ওয়েইট ব্রিজ না থাকায় কয়লা রফতানি শুরু করতে পারছেন না সে দেশের রফতানিকারকরা। এ অবস্থায় ওয়েইট ব্রিজ স্থাপন হওয়ার আগ পর্যন্ত পুরাতন নিয়মে কয়লা রফতানির অনুমতি চেয়ে ভারতীয় রফতানিকারকরা আবারও আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।
এ ব্যাপারে ইট প্রস্তুতকারক ও মালিক সমিতির কুলাউড়া উপজেলা শাখার সভাপতি আলহাজ ফয়েজ আহমদ জানান, ভারত থেকে কয়লা না আসার ফলে সিলেট বিভাগ তথা সমগ্র বাংলাদেশের ইটভাটার মালিকরা চোখে সরষে ফুল দেখছেন। কেননা সিলেটের কয়েকটি ইটভাটা ব্যতীত বেশির ভাগ ইটভাটায় এখন পর্যন্ত আগুন দেওয়া সম্ভব হয়নি। অথচ প্রতি ইটভাটার মালিক শ্রমিক, মাটিসহ বিভিন্নভাবে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছেন ইটভাটায়। কয়লা না পাওয়ায় ইট পোড়ানো শুরু করা যাচ্ছে না। অথচ প্রতি ইটভাটায় লাখ লাখ কাঁচা ইট প্রস্তুত করা হয়েছে ইতিমধ্যে। বিশেষ ব্যবস্থায় কিছু কিছু ইটভাটার মালিক কয়লার টনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা বেশি দিয়ে ক্রয় করে ইট পোড়ানো শুরু করলে শীঘ্রই কয়লা না পাওয়া গেলে তাও বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারি উদ্যোগে কয়লা আমদানির দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে এ শিল্পের লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়াসহ কোটি কোটি টাকার লোকসানে পড়বেন ইটভাটার মালিকরা। সরকার এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ইটভাটার মালিকরা চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
এ ব্যাপারে কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি সালাহ উদ্দিন আলী আহমদ জানান, আগামী ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে কয়লা আমদানি শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে কয়লা আমদানি শুরু না হলে ইটভাটার মালিকরা সর্বস্বান্ত হয়ে যাবেন। ইটভাটার মালিকরা ৬০-৬৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে আছেন এ সিজনে। কয়লার অভাবে তারা ইট পোড়াতে পারছেন না। আমদানি শুরু না হলে কয়লার সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্ট ইটভাটায় প্রায় ৩৩ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কয়লা আমদানি চালু থাকলে গত সাত মাসে সরকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় ১০০ কোটি রাজস্ব আদায় করতে পারত।
এছাড়া ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ঋণ নিয়ে এলসি খোলায় প্রতিদিনই সুদ দিতে হচ্ছে। সাত মাসে ব্যবসায়ীরা প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।