আ ফ্রি কা র ক বি তা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ নভেম্বর ২০১৪, ৮:১১ পূর্বাহ্ণ
আ ফ্রি কা র ক বি তা
অনুবাদ : চরু হক
লিওপল্ড সেডর সেঙ্ঘর-এর কবিতা
পরিদর্শন
অন্তরঙ্গ আধো অন্ধকার এক বিকালের স্বপ্ন দেখি আমি
আমার উপর দিয়ে সারাজীবনের ক্লান্তি ভ্রমণ করে গেছে
ভ্রমণ করে গেছে সারাবছরের ক্ষয়, একযুগের পরিচয়
গ্রামে অগভীর সমুদ্রের উপর যে দিগন্ত ঝুলে থাকে
সেই দিগন্তের মৃতদের শোভাযাত্রার মতো…
একই সূর্য এখানে যা কেবল মরীচিকায় ভরা
সেই একই আকাশ যেখানে কেবল গোপন উপস্থিতি
একই আকাশ মৃতদের আহ্বানে ভীত সন্ত্রস্ত থাকে
এবং হঠাৎ মৃত্যু চুপিসারে এগুতে থাকে আমার দিকে।
আমি তোমার নাম ধরে ডাকবো
নায়েত, আমি তোমার নাম ধরে ডাকবো, আহ্বান করবো নায়েত,
দারুচিনির মতো অপূর্ব তোমার নাম নায়েত
এ তো সেই সুগন্ধী যার মধ্যে ঘুমিয়ে আছে লেবু বাগান
তোমার নাম যেন প্রস্ফুটিত কফি শাখার স্বচ্ছতায় স্নাত
এর সাথে মিল পড়ে সাভানার, মধ্যদিনের পৌরুষভরা সূর্যালোকে
প্রস্ফুটিত করে নিজেকে।
এ যেন কোনো শিশিরের নাম
তেঁতুল গাছের ছায়ার থেকেও স্নিগ্ধ
সমস্ত দিনের রৌদ্রতাপ যেখানে নীরব হয়ে গেছে
সেই ছোট্ট গোধূলির চেয়েও মনকাড়া।
নায়েত, সোনালি মুদ্রা এক, জ্বলজ্বলে কয়লা
আমার রাত্রি তুমি, আমার সূর্য!
আর আমি সেই বীরপুরুষ যে এখন তোমার নাম
উচ্চারণের জন্য এখানে এসেছে,
ইলিসার রাজকন্যা, নিষ্ঠুর নিয়তি যাকে নিশ্চিহ্ন করেছে
ফিটা নগরী হতে।
তোমার কৃষ্ণ মুখমণ্ডল
তোমার দু-হাতের মধ্যে ধরে রেখেছো যোদ্ধার কৃষ্ণ মুখমণ্ডল
যেন ভাগ্যতাড়িত কোনো গোধূলি
পাহাড় ছায়ায় দাঁড়িয়ে তোমার চোখের উপকূলে আমি সূর্যাস্ত দেখি
আবার কখন যে দেখতে পাবো আমার আপনভূমি,
তোমার মুখমণ্ডলের স্বচ্ছ নীল আকাশ?
তোমার কালো বুকের টেবিলে কবে বসতে পারবো আবার?
আবছায়ায় খেলা করছে মিষ্টি ভাবনার বাসাগুলো
অনেক আকাশ আমি দেখবো হয়তো-বা
মিলবো অনেক চোখের তারার সাথে,
অনেক ওষ্ঠ আমি পান করে নেবো
যা নাকি লেবুর চেয়েও তাজা…
ঘুমোবো অনেক কেশদামের নিচে যা আমাকে রক্ষা করবে ঝড়-ঝাপটা থেকে
কিন্তু প্রতি বছর যখন বসন্তের স্পর্শ এসে জ্বালিয়ে দেবে প্রতিটি শিরাকে
আমি তখন নতুন করে কাঁদবো আমার বাড়ির জন্য
কাঁদবো তৃষ্ণার্ত সাভানার উপর তোমার অঝোর চোখের বৃষ্টির অপেক্ষায়।
[লিওপল্ড সেডর সেঙ্ঘর (Léopold Sédar Senghor) এর জন্ম ১৯০৬ সালে সেনেগালে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন বাদাম ব্যবসায়ী এবং রোমার ক্যাথলিক। ডাকারে লাইসে থেকে তিনি বেশ সাফল্যের সাথে অধ্যয়ন শেষে ১৯২৮ সালে প্যারিসের লাইসে লুইস ল্য গ্র্যান্ডে গমন করেন। প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এখানে তিনি আইমে সেজোয়ার ও ডামাসের সঙ্গে পরিচিত হয়ে নেগ্রিচ্যুড (Négritude) নামে এক সাংস্কৃতিকি আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৬০ সালে তিনি সেনেগালের প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হন এবং ১৯৮১ সালে সেই পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। আফ্রিকান সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সারা বিশ্বে প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ২০ ডিসেম্বর ২০০১ সালে তিনি মারা যান।]
ক্রিস্টফার ওকিগবো-এর কবিতা
আহুতি
তালবনের ঢাক ঢোলের গর্জনের ভেতর
জেগে উঠেছে আত্মারা
আমি ভ্রমণ করেছি
আমার পেন্টাগন নিয়ে
ভ্রমণ করেছি বিশালতায়,
প্রাচুর্যের পদরেখা ধরে।
তালবনে
জেগে উঠছে আত্মারা
ঢাক ঢোলের তীক্ষ্ণ গর্জনের
গহীন অন্তরালে।
চোখগুলো খুঁজছে তারাদের
সৈকতের দিকে চেয়ে আছে চোখ দুটি
চেয়ে আছে, বিশালতার দিকে
আকাশের অন্তরঙ্গতার পাশে
নক্ষত্ররা ঝরতে থাকবে সেখানে ।
যে গোপন কথাটি আজো বলা হয়নি কারো কানেই
সে কথাটি আমি রোপণ করেছি
সৈকতের এই বালিতে
তাই চুরচুর করে ফেলছে আমাকে
পাথরে আছড়ে পড়া লবণশুভ্র ফেনা
আর সমুদ্রতরঙ্গ
চিংড়ি আর শামুকের আয়োডিন গন্ধ
লবণের শূন্যতার ভেতর
সরল আর স্বদেশী।
কার গোপন বাণী আমি রোপণ করেছি
এই সৈকতের বালুকাবেলায়
এই বৃষ্টির ছায়ায়
এই রৌদ্রতাপিত সমুদ্রতীরে,
নারী ও পুরুষের মাথার উপর।
প্রস্তাবনা
ইডোটো, মা আমার,
তোমার সামনে আমি
উলঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে,
জলের মতো তোমার উপস্থিতি
যেন বেসামাল আশ্চর্য কিছু
শিমখেতের উপর ঝুঁকে
আমি হারিয়ে গিয়েছি
তোমার পুরাণকাহিনির মধ্যে।
তোমার ক্ষমতার নিচে
আমি দাঁড়িয়ে আছি খালি পায়ে
প্রহরীশব্দগুলোকে ধরে আনতে
স্বর্গদুয়ার থেকে
আমার কান্নার অতলতা চিরে।
কামনার ফুল
ফুলগুলোও অশ্রু বিসর্জন করতে লাগলো
যে নীরব হয়ে গেছে চিরতরে তার জন্যে,
তার আগমন
উদ্যাপিত হচ্ছে মৃদু আলোয় নীরব ঘণ্টাধ্বনিতে
স্বর্গের তর্ক বিতর্ক শেষ করে
আবার আসবেন যিশুখ্রিস্ট
আবার আসবেন তিনি।
ধৈর্যের আঙুলগুলো
তালকুঞ্জকে নিবেদন করবে
সবুজ শান্তির গান
তার পাঁচ আঙুলের কারুকার্যে…
[ক্রিস্টফার ইফিকান্ডু ওকিগবো (Christopher Ifekandu Okigbo) ১৬ আগস্ট ১৯৩০ সালে নাইজেরিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ইউমাহিয়ার সরকারি কলেজে এবং ইবাদান এর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পড়াশুনা করেন। সেখানে তিনি প্রচুর ক্লাসিক রচনা পড়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ঐ বছরই সেপ্টেম্বর মাসে যুদ্ধক্ষেত্রে তার অকাল মৃত্যু হয় । তার কবিতা এতই শক্তিমান আর প্রাণস্পর্শী যে নাইজেরিয়ার অনেক তরুণ কবিই তার সৃষ্টির দ্বারা প্রবলভাবে আন্দোলিত ও প্রভাবিত। বাংলায় তরজমাকৃত কবিতাগুলো ক্রিস্টফার ওকিগবোর স্বর্গদুয়ার (১৯৬১) কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।]