বাঙালি-রোহিঙ্গা বিয়ে থামানো যাচ্ছে না
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ নভেম্বর ২০১৪, ৭:০১ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
বাঙালি-রোহিঙ্গা বিয়ে থামছে না । স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনেকে বলেছেন, বাংলাদেশের আইনকে পাশ কাটিয়ে রেজিস্ট্রেশন না করে গোপনে এ ধরনের বিয়ে হচ্ছে।
তবে কিছুদিন আগে বিয়ে করেছেন, এমন এক দম্পতির বক্তব্য হচ্ছে, রেজিস্ট্রেশন না করলেও স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতেই তারা বিয়ে করেছেন। তারা বিয়ের ক্ষেত্রে আইনী কোনো বাধা বা নিষেধাজ্ঞা মানতে রাজি নন।
প্রশাসন বলেছে, মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে আসা রোহিঙ্গাদের বৈধতা বা নাগরিকত্ব না দেওয়ার জন্য তাদের সাথে বাংলাদেশিদের বিয়ের ব্যাপারে সরকার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
বাঙালি এবং রোহিঙ্গার মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ সরকার। আমরা সেটা মানিনি। এটা বাংলাদেশ সরকার অন্যায় করেছে।
বাঙালি যুবক জাকির হোসেন, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের অনিবন্ধনকৃত একটি ক্যাম্পের তসলিমার সাথে তার পরিচয় থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে।
শেষ পর্যন্ত মাস খানেক আগে তারা যখন বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন বাঙালি, রোহিঙ্গার বিয়ের ক্ষেত্রে সরকারের নতুন নিষেধাজ্ঞার খবর আসে। তবে তারা বিয়ে করেছেন বাংলাদেশের আইনকে পাশ কাটিয়ে।
জাকির হোসেন বলছিলেন, “দেখা-সাক্ষাৎ হওয়ার পর সম্পর্ক হয়েছে এবং তারপর আমি ওনাকে বিয়ে করলাম।এখন বাঙালি এবং রোহিঙ্গার মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ সরকার। আমরা সেটা মানিনি। এটা বাংলাদেশ সরকার অন্যায় করেছে। কেনো রোহিঙ্গারা কি মানুষ নয়। কেন বিয়ে করা যাবে না। সেজন্য আমরা সরকারের নিষেধাজ্ঞা না মেনে বিয়ে করেছি।”
তিনি উল্লেখ করেছেন, “সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা কাজী অফিস বা আদালতে গিয়ে বিয়ে করতে পারিনি।কাবিনানামাও করা যায়নি। আমরা নিজের বাড়িতে মৌলভী ডেকে এনে একটা স্ট্যাম্প এর উপর স্বাক্ষর করে বিয়ে করেছি। দেনমহর হিসেবে একভরি সোনা ধরে নিয়ে, তার কতটা বাকি রাখছি। সেটা এই স্ট্যাম্পেই লিখে দিয়েছি।”
হিন্দু এবং মুসলমানের মধ্যে বিয়ে হচ্ছে। সেখানে আমি রোহিঙ্গা ,বাঙালিকে বিয়ে করলে সমস্যা কোথায়।
মোছা. তসলিমা বলছিলেন,“আমার আগে একটা বিয়ে হয়েছিল। আমার জামাই বর্মার কারাগারে বন্দী। আমি সীমান্ত পারি দিয়ে আসার পর স্বামীর জন্য দু’বছর অপেক্ষা করেছি। কিন্তু তিনি বন্দী থাকায় আমার দুই শিশু নিয়ে কি করবো। তাই এখানে একজন বাঙালিকে বিয়ে করেছি।”
উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিবন্ধনকৃত কুতুপালং ক্যাম্পের উল্টোদিকের গ্রামে বদিউল আলমের বাড়ি। গ্রামের অন্যদের ঘরের মতোই মাটির দেয়াল, আর সনের চালার ছোট্ট ঘরে দুই শিশু সন্তান এবং স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। দিনমজুর বদিউল আলম ক্যাম্পে যাওয়া আসার সুযোগে রোহিঙ্গা শরণার্থী শামসুন্নাহারের প্রেমে পড়েছিলেন। শেষপর্যন্ত বিয়ে করে তিনি তাঁর এই গ্রামের মাটির ঘরে তিন বছর ধরে সংসার করছেন।
বাঙালিদের অনেকেই ঘরে প্রথম স্ত্রী রেখে সময় কাটানো বা আমোদ-ফূর্তি করার জন্য রোহিঙ্গা নারী বিয়ে করছে। এমন তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে।
রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির কবির চৌধুরী বলছিলেন,“আমাদের স্বামী-স্ত্রীর আত্নীয় স্বজনের মধ্যে যাওয়া আসা আছে। ভালবাসা করে বিয়েতে সমস্যা কোথায়। হিন্দু এবং মুসলমানের মধ্যে বিয়ে হচ্ছে। সেখানে আমি রোহিঙ্গা ,বাঙালিকে বিয়ে করলে সমস্যা কোথায়।”
কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের পাশের গ্রামের মসজিদে চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইমামতি করেন মাওলানা ওমর ফারক।
তিনি মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা মেয়ে এনে দুই পরিবারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে তার ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন। এক বছরের সেই সংসারে কোন সমস্যা তিনি দেখছেন না।
তিনি মনে করেন, বিয়ের ক্ষেত্রে সরকারের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ঠিক নয়।
টেকনাফ-উখিয়ার যে ইউনিয়নগুলোতে এ ধরণের বিয়ে বেশি হয় বলে স্থানীয় লোকেরা বলে থাকেন।
এর মধ্যে রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির কবির চৌধুরী বলেছেন, “স্থানীয় অনেকেই রোহিঙ্গা শরণার্থী মেয়ে বিয়ে করে রেশন বা সুযোগ সুবিধা নেওয়ার জন্য তাঁকে ক্যাম্পেই রেখে দিচ্ছে। এ ধরনের সুযোগ নিয়ে বাঙালিদের অনেকেই ঘরে প্রথম স্ত্রী রেখে সময় কাটানো বা আমোদ-ফূর্তি করার জন্য রোহিঙ্গা নারী বিয়ে করছে। এখন এমন তথ্য আমরা পাচ্ছি।”
বাঙালি-রোহিঙ্গার বিয়ের ব্যাপারে কোন পরিসংখ্যান স্থানীয় প্রশাসন দিতে পারেনি।
উখিয়া এলাকার বিয়ে নিবন্ধনকারি বা কাজী আবু হারুন মোকাদ্দেস আহমেদ জানিয়েছেন, তিন বছর আগে প্রণীত বিয়ে নিবন্ধন আইনে পরিচয় পত্র এবং জন্ম নিবন্ধন থাকা সহ নানান শর্তের কারণে এ ধরনের বিয়ে গোপনে হয় এবং তার কোন হিসাব থাকছে না।
এছাড়া এই আইনের আগে কোন বিয়ে হয়ে থাকলে, তাতে রোহিঙ্গারা পরিচয় গোপন রাখতো বলে তিনি উল্লেখ করেন।
যদিও এখন বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে স্থানীয় লোকেদেরই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন মনে করছে, আইনের পাশাপাশি সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা মাঠপর্যায়ে কার্যকর করায় বাঙালিদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের বিয়ে করার প্রবণতা কমে আসবে।