এবার ভারতের বাজারে যাচ্ছে বাংলাদেশের আলু
প্রকাশিত হয়েছে : ৪ নভেম্বর ২০১৪, ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক ::
সীমিত পরিসরে হলেও ২৬টির বেশি দেশে রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশে উৎপাদিত আলু। তবে সম্প্রতি রাশিয়া বড় পরিসরে আলু আমদানি শুরু করলে পণ্যটির বাজার বহুমুখীকরণের পথ উন্মুক্ত হয়। আর এ পথ আরো প্রশস্ত করতে যাচ্ছে ভারতের বাজার। এরই মধ্যে আলু আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোয় তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে দেশটির সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ভারতে প্রায় সাড়ে চার কোটি টন আলু উৎপাদন হয়। কিন্তু উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেশি হওয়ায় আলু আমদানি করতে হয় তাদের। ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী দেশটি ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশ থেকে পণ্যটি আমদানির দিকে ঝুঁকছে। এজন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে পেস্ট রিস্ক অ্যানালাইসিসের কারিগরি তথ্য চেয়ে গত মাসের ২৯ তারিখে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশন। আর চিঠি পাওয়ার পরই কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। ভারতের হাইকমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও চিঠির সত্যতা স্বীকার করেছেন।
বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ৮৫ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়। কিন্তু এর বিপরীতে চাহিদা ৭০ লাখ টন। কয়েক বছর ধরে আলু উৎপাদন উল্লেখযোগ্যহারে বাড়লেও এ নিয়ে সুখকর পরিস্থিতিতে নেই আলু উৎপাদনে বিশ্বের অষ্টম শীর্ষ এ দেশ। ফলে যে কয়েকটি কৃষিপণ্যের বাড়তি উৎপাদন কৃষকের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তার মধ্যে আলু অন্যতম। কেননা সম্প্রতি আলু উৎপাদন বাড়াতে যতটা নজর দেয়া হয়েছে, ঠিক ততটাই অবহেলা করা হয়েছে পণ্যটি বিপণনে। আলুর বিকল্প ব্যবহারে যেমন উদ্যোগের অভাব রয়েছে, তেমনি প্রক্রিয়াজাত শিল্পে ব্যবহার উপযোগীও করা হচ্ছে না একে। দেশের চাহিদা মেটানোর পর রফতানি বাজার সম্প্রসারণ না হওয়ায় প্রতি বছরই মজুদ থাকছে বিপুল পরিমাণ আলু। উদ্বৃত্ত আলুর কারণে দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক। এ অবস্থায় ভারতের প্রস্তাব দেশের আলুচাষীদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও বীজ উইংয়ের মহাপরিচালক আনোয়ার জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আলু রফতানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আলু রফতানির ওপর ২০ শতাংশ হারে নগদ অর্থ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে নতুন বাজার রাশিয়ায় আলু রফতানি শুরু হয়েছে। অবশ্যই ভারতের প্রস্তাবটি বিবেচনা করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, কয়েক বছর ধরে ২৮টি দেশে কমবেশি আলু রফতানি হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ২০০ কোটি টাকার আলু রফতানি হয়। যেসব দেশে পণ্যটি রফতানি হচ্ছে, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা ও রাশিয়া। মালয়েশিয়ায় প্রায় ৬০ কোটি, সিঙ্গাপুরে ১৭ ও শ্রীলংকায় প্রায় ১৮ কোটি টাকার আলু রফতানি হয়। তবে গত অর্থবছর থেকে রাশিয়ায় বড় পরিসরে আলু রফতানি শুরু হয়েছে। আর সম্ভাবনাময় এ বাজার ধরে রাখতে কৃষি মন্ত্রণালয় নানামুখী উদ্যোগও নিয়েছে। দেশটিতে প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার টন আলু রফতানি হয়েছে। চলতি অর্থবছর তা আরো বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, ভিয়েতনাম, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাতেও রফতানি হচ্ছে আলু। এছাড়া স্বল্প পরিসরে চীন, গ্রিস, হংকং, যুক্তরাজ্য, ব্রুনাই, বাহরাইন, ইতালি, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, নেপাল, ওমান, পোলান্ড ও টঙ্গোতেও পণ্যটি রফতানি হয়।
গত মৌসুমেও আলুর দাম না পেয়ে বিক্ষোভ করেন কৃষকরা। কৃষক পর্যায়ে আলুর কেজি নেমে এসেছে মাত্র ২ টাকায়। এতে কেজিতে কৃষকের লোকসান হয় ৪-৫ টাকা। তাই কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, রফতানি বাড়াতে নগদ প্রণোদনা ও নতুন জাত উদ্ভাবন ছাড়াও ফসলটির বিকল্প ব্যবহার বাড়াতে প্রক্রিয়া শিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি রফতানিও বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।