রাজনগরে ডাকাত আতঙ্কে সাধারণ মানুষের রাত জেগে পাহারা
প্রকাশিত হয়েছে : ৩ নভেম্বর ২০১৪, ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ
আব্দুর রহমান সোহেল ::
মৌলভিবাজারের রাজনগর উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের লোকজন ডাকাত আতঙ্কে ভূগছেন। ডাকাতির ভয়ে পালাক্রমে চলছে পাহারা। প্রতিটি গ্রামে ৮-১০ লোক সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত পাহারা দিচ্ছেন। এদিকে ডাকাতি ঠেকাতে পাহারা বসানোর জন্য পুলিশও জনপ্রতিনিধিদের উদ্বুদ্ধ করছে। বিষয়টিকে নিজেদের দুর্বলতা হিসেবে মানতে নারাজ পুলিশ। এতে ডাকাতির সংখা কমবে বলে মনে করছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় ২৫০টিরও বেশি গ্রাম রয়েছে। প্রায় প্রতিবছরই শীত মৌসুমে উপজেলার মুন্সিবাজার, উত্তরভাগ, রাজনগর, মনসুরনগর, ফতেহপুর ও টেংরা ইউনিয়নে ১০ টিরও বেশি ডাকাতির ঘটনা ঘটে থাকে। বড় কোন ডাকাতির ঘটনা না ঘটলে পুলিশ মামলাও নিতে চায় না। আর যে কয়টির মামলা হয় সে গুলোরও কোনো তদন্ত হয় না। ফলে সাধারণ মানুষ ডাকাতির ঘটনায় মামলা করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। অপরদিকে পুলিশ কোন ডাকাতকে আটক করলে কিছুদিন পর ফিরে এসে আবারো ডাকাতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার উত্তর দাসপাড়া, ভুজবল, মজিদপুর, তেলিজুড়ি, পঞ্চেশ্বর, বড়কাপন, সরখরনগর, বনমালী, বালিসহস্র, ধাইসার, কদমহাটা, তাহারলামু, চাটুরা, শ্বাসমহল, ভবানীনগর, নন্দিউড়া, মুড়ালী, উত্তর টেংরা, দক্ষিন টেংরা, রাজখলা, পাঁচগাঁও, দেবীপুর, আদমপুর, খাসপ্রেমনগর, খলাগ্রাম, নোয়াটিলা, উত্তরভাগ (উত্তর), মুটুকপুরসহ অর্ধশত গ্রামে পূর্ণ ও আংশিক পাহারার ব্যবস্থা রয়েছে।
এসব গ্রাম সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যরা পাহারাদারির বিষয়টি মনিটরিং করেন। তাদেরকে পুলিশও সহযোগিতা করে। পাহারাদাররা হাতে লাঠি, টর্চ লাইটসহ গ্রামের অলিগলি ঘুরে পালন করেন দায়িত্ব। পাহারাদার দল দায়িত্ব পালন করছে কি না সে জন্যও রয়েছে অপর একটি দল। ফলে কোন ধরণের গাফিলতি ছাড়াই তারা পালন করছেন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার গুরু দায়িত্ব।
সদর ইউনয়িনের সদস্য আব্দুল হাকিম বলেন, আমার ওয়ার্ডের গ্রাম গুলোতে গত ৩ বছর থেকে নিয়মিত পাহার চলছে। ভুজবল গ্রামে ৪ গ্রুপে ২২ জন নিয়মিত পাহারা দিচ্ছেন। ফলে এ ৩ বছরের মধ্যে আমার এলাকায় চুরি ডাকাতির ঘটনা ঘঠেনি। তিনি আরো বলেন, আমার এলাকায় এজন্য প্রতিদিন আলোচনার পাশাপাশি মাসে একটি বৈঠক হয়। এতে থানার ওসি উপস্থিত থাকেন। মনসুরনগর ইউনিয়নের সদস্য এম মামুনুর রশিদ বলেন, আমার ওয়ার্ডের সব গ্রামে নিয়মিত পাহারা চলে। পঞ্চেশ্বর গ্রামে প্রতিদিন ৩টি দলে ৮ জন করে মোট ২৪ জন রাতের বেলা পাহারা দেন। ডাকাতির আতঙ্ক বেড়ে যাওয়ায় পাহারা আরো জোরদার করা হয়েছে।
গত ১ নভেম্বর শনিবার রাতে পাহারার তারিখ ছিল ভুজবল গ্রামের ষাটোর্দ্ধ মোস্তফা মিয়ার। তিনি বলেন, আগে আমাদের গ্রামে ডাকাতি এবং রাতের আধারে গরু চুরির ঘটনা প্রায়ই ঘটতো। কিন্তু নিয়মিত পাহারা বসানোর ফলে চুরি ডাকাতি নেই। নিয়মিত পাহারার জন্য আমাদের ইউপি সদস্য আব্দুল হাকিম বিষয়টি তদারক করেন।
রাজনগর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেওয়ান খয়রুল মজিদ সালেক বলেন, আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে পারার দেয়া হচ্ছে। এতে ডাকাতির সংখ্যাও কমছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) জুনায়েদ আলম বলেন, পাহারা দেয়া এটা এলাকার জন্য ভালো। কমিউনিটি পুলিশিং-এ জনগনের সহায়তায় অপরাধ দমন বিষয়টি বলাই আছে। এটি পুলিশের দুর্বলতা নয় বরং ভালো। আর অধিকাংশ ডাকাত জেলে থাকায় বর্তমানে ডাকাতির সংখ্যাও অনেকটা কমেছে।