আপিলেও কামারুজ্জামানের ফাঁসি বহাল
প্রকাশিত হয়েছে : ৩ নভেম্বর ২০১৪, ৫:০১ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
সর্বোচ্চ আদালত চূড়ান্ত রায়ে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সাজা বহাল রাখায় একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিকাষ্ঠেই যেতে হবে জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে।
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ সোমবার এই রায় ঘোষণা করে।
বেঞ্চের বাকি সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
এমন এক দিনে আপিল বিভাগ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করল, যেদিন একই অপরাধে দলটির আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে হরতাল করছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী সংগঠনটি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তৃতীয় ও চতুর্থ অভিযোগে হত্যার দায়ে কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছিল।
এর মধ্যে তৃতীয় অভিযোগে শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুরে ১২০ জন পুরুষকে ধরে নিয়ে হত্যার দায়ে আপিল বিভাগের চার বিচারপতি সর্বসম্মতভাবে আসামি কামারুজ্জামানকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। আর তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে।
তবে চতুর্থ অভিযোগে গোলাম মোস্তফাকে হত্যার ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সর্বোচ্চ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আপিল বিভাগ।
প্রসিকিউশনের দ্বিতীয় ও সপ্তম অভিযোগে কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ড সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত রায়েও বহাল রাখা হয়েছে।
দ্বিতীয় অভিযোগে এক শিক্ষককে নির্যাতনের ঘটনায় এই জামায়াত নেতাকে ট্রাইব্যুনাল ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। আর সপ্তম অভিযোগে গোলাপজান গ্রামের পাঁচজনকে হত্যার ঘটনায় আসামিকে দেওয়া হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। দুটি সাজাই বহাল থাকবে।
প্রসিকিউশনের প্রথম অভিযোগে শেরপুরের কালীনগর গ্রামের বদিউজ্জামানকে হত্যার ঘটনায় ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও আপিল বিভাগ তাকে খালাস দিয়েছে।
প্রসিকিউশনের আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে পঞ্চম ও ষষ্ঠ অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে জানানো হয়েছিল। প্রসিকিউশনের আপিল না থাকায় সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বহু প্রত্যাশিত বিচার কাজ শুরু হয়।
একাত্তরে আল বদরের ময়মনসিংহ জেলা শাখা প্রধান কামারুজ্জামানকে এরপর গত বছর ৯ মে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে গত বছরের ৬ জুন আপিল করেন কামারুজ্জামান। গত ৫ জুন এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালে আসামির সর্বোচ্চ সাজার আদেশ হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় আপিল করেনি।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতদের মধ্যে কামারুজ্জামান হলেন তৃতীয়ব্যক্তি, আপিল বিভাগে যার মামলার নিষ্পত্তি হলো।
এর আগে তার দলেরই আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল নিষ্পত্তির পর ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। এরপর গত বছরের ডিসেম্বর তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হয়।
আর চলতি বছর ১৭ সেপ্টেম্বর আপিলের দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বহু প্রত্যাশিত বিচার কাজ শুরু হয়।
ওই বছর ২১ জুলাই কামারুজ্জামানের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করে প্রসিকিউশনের তদন্ত দল। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে একটি মামলায় একই বছর ২৯ জুলাই তাকে গ্রেপ্তারের পর ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ২০১২ সালের ১৫ জানুয়ারি কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। ৩১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেয়। পরে মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয়।
ওই বছর ৪ জুন অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের বিচার শুরু হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ১৮ জন এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। আর আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দেন পাঁচজন।
স্বাধীনতার পরের বছর ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন কামারুজ্জামান। ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে থেকে মাস্টার্স পাস করার পর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমনের আমলে ১৯৭৮-৭৯ সালে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৯ সালের অক্টোবরে কামারুজ্জামান মূল দল জামায়াতে ইসলামে যোগ দেন এবং ওই বছর ১৬ ডিসেম্বর রুকনের দায়িত্ব পান।
১৯৮২-১৯৮৩ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন। ১৯৯২ সাল থেকে তিনি দলে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্বে রয়েছেন।