পোশাক ও বস্ত্র খাতের রফতানি আয়ের অর্ধেকই চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে
প্রকাশিত হয়েছে : ২ নভেম্বর ২০১৪, ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক ::
বস্ত্র ও পোশাক খাতের রফতানি আয় ক্রমেই বাড়ছে। হাজার ডলার দিয়ে শুরু হয়ে এ খাতের রফতানি আয় এখন ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। একই সঙ্গে বাড়ছে খাতটির কাঁচামাল আমদানি নির্ভরতাও। এ কারণে কমে আসছে রফতানিকারকদের ফরেন কারেন্সি রিটেনশন বা বিদেশি মুদ্রা ধারণের হার। গত পাঁচ অর্থবছরে এ হার ৫৪ ও ৫৫ শতাংশের মধ্যে থাকলেও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা নেমে এসেছে ৫৩ শতাংশে। এ হিসাবে রফতানি আয়ের ৪৭ শতাংশ চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) বরাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৯-১০ থেকে ২০১১-১২ অর্থবছর পর্যন্ত বিদেশি মুদ্রা ধারণের হার ছিল যথাক্রমে ৫৪ দশমিক ৩৫, ৫৪ দশমিক ৬১ এবং ৫৪ দশমিক ১০ শতাংশ। ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এর হার ছিল যথাক্রমে ৫৩ দশমিক ৮ ও ৫৩ শতাংশ। এ হিসাবে গত পাঁচ অর্থবছরে বিদেশি মুদ্রা ধারণের গড় ৫৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
জানা গেছে, বিদেশি মুদ্রা ধারণের হার কম থাকার কারণে নিট, ওভেন ও হোমটেক্সটাইল খাতের মোট রফতানি আয়ের ৪৬ শতাংশ আমদানির বিপরীতে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। ২০০৯-১০ ও ২০১০-১১ অর্থবছরে এ খাতের কাঁচামাল আমদানি ব্যয় পরিশোধে দেশের বাইরে চলে গেছে যথাক্রমে প্রায় ৫৯০ ও ৮৫০ কোটি ডলার। এ দুই অর্থবছরে দেশের বিদেশি মুদ্রা ধারণ করা গেছে ৭০১ কোটি ও ১ হাজার ২১ কোটি ডলার। একইভাবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২ হাজার ৫২৮ কোটি ডলার আয় হলেও এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ধরে রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ। বাকি প্রায় ১ হাজার ২২৮ কোটি ডলার আমদানির বিপরীতে দেশের বাইরে চলে গেছে।
সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের দাবি, আমদানি নির্ভরতার কারণেই বস্ত্র ও পোশাক খাতে বৈদেশিক মুদ্রা ধারণের সক্ষমতা কম। স্থানীয় শিল্প সক্ষমতার বিচারে এ হার সর্বোচ্চ ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকতে পারে। শিল্পের কাঁচামাল তুলা ও পেট্রোকেমিক্যালসহ বেশকিছু পণ্যের উৎপাদন সক্ষমতা না থাকায় বাকি ৩৫ শতাংশ বিদেশী মুদ্রা ধারণ বস্ত্র ও পোশাক খাত থেকে আশা করাও ঠিক হবে না।
পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী জানান, কাঁচামাল উৎপাদন সক্ষমতা ঘাটতিতে আমদানি আমাদের করতেই হবে। সময়ভেদে আমদানি বাড়তেও পারে। ফলে তৈরি পোশাক খাতের মাধ্যমে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বিদেশি মুদ্রা ধারণ কখনই সম্ভব হবে না। এটি বাড়ানোর যে সুযোগ রয়েছে, অবকাঠামোসহ নানা কারণে তা কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না।
ব্যবসায়ীদের দাবি, বৈদেশিক মুদ্রা ধারণক্ষমতা বিদ্যমান ৫৪ থেকে আর ১০-১১ শতাংশ বাড়ানোর যে সুযোগ আছে, তা কাজে লাগাতে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন। জমি, গ্যাসের মতো অবকাঠামো ঘাটতিতে এ সুযোগ নেয়ার সাহস করছেন না উদ্যোক্তারা। এর বাইরে ব্যাংক ঋণ থেকে শুরু করে নানাবিধ আর্থিক অব্যবস্থাপনার ঝুঁকি নিতেও আগ্রহী নন উদ্যোক্তারা।
বিটিএমইএ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন জানান, ‘দেশের নিট পোশাক শিল্পের কাঁচামাল সুতা ও কাপড় উৎপাদনে আমাদের মিলগুলোর সক্ষমতার ফলে নিট খাতে বিদেশি মুদ্রা ধারণের হার অনেক ভালো। তবে ওভেন খাতে আমাদের সক্ষমতা আরো অনেক বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এজন্য বিপুল বিনিয়োগের প্রয়োজন। একেকটি বিনিয়োগে ন্যূনতম ৩০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। অর্থের জোগান থাকলেও অবকাঠামো অনিশ্চয়তায় এ বিনিয়োগ করতে কেউ সাহস করছে না।
ব্যবসায়ীদের দাবি, ওভেন খাতে প্রচুর বিনিয়োগের সুযোগ থাকলেও লগ্নি করা অর্থ ফেরত আসার হার কম। ফলে সার্বিক বিবেচনায় এ খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ কম। যার কারণে বিদেশি মুদ্রা ধারণের গতি চাইলেও বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি পোশাক খাতের বেশকিছু অনুষঙ্গ এখনো আমদানি করেই আনতে হয়। আর ক্রেতাদের নমিনেশনের বাধ্যবাধকতাও এর অন্যতম একটি কারণ।