রাজনগরের চা জনগোষ্ঠির ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ অক্টোবর ২০১৪, ১০:২০ পূর্বাহ্ণ
আব্দুর রহমান সোহেল ::
রাজনগর উপজেলার চা জনগোষ্ঠির ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ ম্যালেরিয়া ঝুকিতে রয়েছেন। গত ৭ বছরে চা বাগানগুলোতেই বেশি ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রুগী সনাক্ত করা হয়েছে। শিক্ষা ও পরিবেশ সচেতনতার অভাবে প্রতিনিয়ত ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি মোকাবেলা করছেন তারা। চা জনগোষ্টি ও হাওর পাড়ের মানুষদের ম্যালেরিয়ার ব্যাপারে সচেতনতার পাশাপাশি প্রতিরোধে ভূমিকা নেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলায় ফাঁড়ি বাগানসহ মোট ১৪টি চা বাগান রয়েছে। এসব চা বাগানে মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। দেশের ম্যালেরিয়া ঝুঁকি প্রবণ ১৩টি জেলার মধ্যে অন্যতম মৌলভীবাজার জেলা। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলের চা জনগোষ্ঠি। ২০০৭ সাল থেকে আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফান্ড ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এনজিও সংস্থা বাংলাদেশ ডেভলাপম্যন্ট সার্ভিস সেন্টার (বিডিএসসি) ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম শুরু করে। এ সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাহাড়ি চা বাগান অধ্যুষিত ছাড়াও ম্যালেরিয়া ঝুঁকিপ্রবণ রাজনগর সদর, টেংরা, মুন্সিবাজার ও উত্তরভাগ ইউনিয়নে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। বছরে একবার এ সংস্থার পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় কার্যক্রম। কিন্তু এ কার্যক্রম কাগজের বাহিরে বাস্তবতায় কী পর্যায়ে রয়েছে তা কেউ জানে না। বিডিএসসির হিসাব অনুযায়ী রাজনগর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ১৪ টি চা বাগান এলাকায় ৬৫০ জনেরমত ম্যালেরিয়া রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে বাগান সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন ম্যালেরিয়া প্রবণতা এখনো ঝুঁকির মধ্যেই আছে। এ কার্যক্রম আরো গতিশীল করা প্রয়োজন। বিডিএসসির তথ্যমতে ২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তাদের পরিচালিত কার্যক্রম থেকে জানা যায়, রক্তকাচ পরীক্ষা করা হয়েছে ১১৭৩০ জন, পজেটিভ ৫৫৯, ফেলসিপেরাম ১৬, ভাইভেক্স ৫৪০, মিক্স ৩, আরডিটি পরীক্ষ ১৩১৩, পজেটিভ-৯৫, মোট পজেটিভ ৬৫৫জন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত এলএলআইএন মশারী বিতরণ ২৪হাজার, ৬৫ হাজার ৯শ ৬০টি মশারী কীনাশক যুক্ত পানিতে চুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এই এনজিও সংস্থাটির কর্তারা জানিয়েছেন চা শ্রমিকরা ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সেখানে তাদের কার্যক্রম বেশি রয়েছে। যদিও এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন চা শ্রমিক নেতারা।
উত্তরভাগ চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি দিপক কৈরী বলেন, আমাদের বাগানে প্রায় ৮-৯ হাজার মানুষ বাস করে তবে কি পরিমান ম্যালেরিয়া রোগী আছে আমরা জানি না। তবে ম্যলেরিয়ার ঝুঁকি বেশি আমাদের বাগানেই। বাগানের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
করিমপুর চা বাগানের শ্রমিক কাজল রায় বলেন, আমরা বিডিএসসির দেয়া মশারী পাইছি। ম্যালেরিয়ার কি চিকিৎসা দেওয়া হয় আমরা জানিনা। আমাদের বাগানের অনেকেই এখনো মশারী পায়নি।
বিডিএসসি ম্যানেজার মো. ওমর ফারুক বলেন, রাজনগর উপজেলার চা বাগান এলাকায়ই ম্যালেরিয়া রোগীর পরিমাণ বেশি। চা বাগান গুলোতে মশারী এবং কীনাশক যুক্ত পানিতে মশারী চুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ঝুঁকি থাকার পরও গ্লোবাল ফান্ড থেকে যা পাওয়া যায় তাই বিতরণ করা হয়। উত্তরভাগ, উদনা, সাকেরা, করিমপুর ও চাদভাগ বাগানে আমাদের কর্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।