জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ৩ উইকেটে জিতল বাংলাদেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ অক্টোবর ২০১৪, ৯:৫১ পূর্বাহ্ণ
স্পোর্টস ডেস্ক ::
অনন্য বোলিংয়ে বাংলাদেশকে জয়ের সহজ লক্ষ্য এনে দিয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। ব্যাটসম্যানরা জয়টা দুরূহ করে ফেলায় নিজেই কাঁধে তুলে নিলেন দায়িত্ব। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে বাংলাদেশকে স্মরণীয় এক জয় এনে দিয়েছেন এই বাঁহাতি স্পিনার।তাইজুলের অসাধারণ বোলিংয়ে প্রথম টেস্টে তিন দিনেই জিম্বাবুয়েকে ৩ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ। মাত্র ১০১ রানের লক্ষ্য পেলেও ব্যাটিংয়ে তালগোল পাকিয়ে সহজ ম্যাচ কঠিন করে ফেলেছিল স্বাগতিকরা।
তাইজুলের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা। বাঁহাতি এই স্পিনারের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে সোমবার তৃতীয় দিনে মাত্র ১১৪ রানে অলআউট হয়ে যায় অতিথিরা।
প্রথম ইনিংসে ১৪ রানের লিড নেয়ায় প্রথম টেস্ট জিততে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১০১ রান।
শূন্য রানে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের বিদায়ে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি বাংলাদেশের। এল্টন চিগুম্বুরার লাফিয়ে উঠা বলে স্লিপে ব্রেন্ডন টেইলের হাতে ধরা পড়েন তামিম ইকবাল।
টিনাশে পানিয়াঙ্গারার বলে বোল্ড হয়ে যান শামসুর রহমান। বল ছেড়ে দিলেও সময় মতো ব্যাট সরাতে পারেননি তিনি। ব্যাটের কানায় লেগে স্ট্যাম্প ভেঙে গেলে দ্বিতীয় উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।
ব্যর্থ হয়েছেন মুমিনুল হকও। চিগুম্বুরার বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন প্রথম ইনিংসে অর্ধশতক পাওয়া এই ব্যাটসম্যান।
চতুর্থ উইকেটে মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে ৪৬ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধ গড়েন সাকিব আল হাসান। শুরুতেই একবার জীবন পেলেও ঝুঁকি খেলতে থাকেন তিনি। উইকেটে থিতু হয়ে টেন্ডাই চাটারার শিকারে পরিণত হন তিনি।
চা-বিরতি পর আবার তালগোল পাকায় বাংলাদেশ। জোড়া আঘাতে মাহমুদুল্লাহ ও শুভাগত হোম চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেন চিগুম্বুরা।
দেখে শুনেই খেলছিলেন শাহাদাত হোসেন। তবে ছক্কা হাঁকিয়ে ব্যাট তুলে উদযাপন করে পরের বলেই তার বিদায়ে আবার চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। তখন জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১৯ রান।
বাকি কাজটুকু তাইজুলকে নিয়ে সহজেই সারেন মুশফিক। বাংলাদেশের অধিনায়ক ২৩ ও তাইজুল ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন। বোলিংয়ে নিজের অসাধারণ নৈপুণ্যকে বৃথা যেতে দেনটি তিনি। মাথা ঠাণ্ডা করে খেলে চার মেরেই বাংলাদেশকে জয়সূচক রান এনে দেন তিনি।
২১ রানে চার উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ের সেরা বোলার চিগুম্বুরা।
এর আগে দিনের প্রথম সেশনেই পাঁচ উইকেট নেয়া তাইজুল শেষ পর্যন্ত ফেরান জিম্বাবুয়ের আট ব্যাটসম্যানকে। মাত্র ৩৯ রানের খরচায় আট উইকেট নিয়ে গড়ে ফেললেন রেকর্ডও। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে এক ইনিংসে ৮ উইকেট নিলেন তিনি।
সোমবার বিনা উইকেট ৫ রান নিয়ে খেলা শুরু করা জিম্বাবুয়ে দিনের শুরুতেই হারায় ভুসি সিবান্দা ও হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে।
তাইজুল ইসলামের বলে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে ধরা পড়েন সিবান্দা। পেসার শাহাদাত হোসেনের বল ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হয়ে যান হ্যামিল্টন মাসাকাদজা।
প্রথম ঘণ্টা শেষে জিম্বাবুয়ের স্কোর ছিল ৪০/২। তখনো বোঝা যায়নি পরের ঘণ্টায় কী অপেক্ষা করছে অতিথিদের সামনে।
এসেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন সিকান্দার রাজা। সাকিব আল হাসানের এক ওভারে দুটি চার আদায় করে নেন তিনি। তাইজুলের পরের ওভারে টানা দুই বলে লংঅফের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকান তিনি।
পরের বলেও একই চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু পারেননি, ব্যাটের উপরের কানায় লেগে পয়েন্টে আসা সহজ ক্যাচটি তালুবন্দি করেন সাকিব।
রাজার বিদায়ের মধ্য দিয়ে জিম্বাবুয়ের ইনিংসের ধসের সূচনা হয়। নিজের পরের ওভারে জোড়া আঘাতে রেগিস চাকাবভা ও এল্টন চিগুম্বুরাকে বিদায় করেন তাইজুল।
চাকাবভা স্লিপে শামসুর রহমান ও চিগুম্বুরা দ্বিতীয় স্লিপে শুভাগত হোম চৌধুরীর ক্যাচে পরিণত হন। চিগুম্বুরার বিদায়ে জিম্বাবুয়ের স্কোর দাঁড়ায় ৫৮/৫।
ক্রেইগ আরভিনের সঙ্গে অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলরের জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে জিম্বাবুয়ে। আরভিনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে নিজের পঞ্চম উইকেট নেয়ার পাশাপাশি ৩৪ রানের জুটি ভাঙেন তাইজুল।
এরপর উইকেট উৎসবে যোগ দেন সাকিবও। জন নিউম্বুকে মুশফিকের ক্যাচে পরিণত করেন তিনি।
৭ উইকেটে ৯৪ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় জিম্বাবুয়ে। লড়াই করার মতো পুঁজি গড়ার পর অধিনায়ক টেইলরের দিকে তাকিয়ে ছিল অতিথিরা। তিনি এক প্রান্তে অবিচল থাকলেও অন্য তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে লক্ষ্যটা ছোটই রাখেন তাইজুল।
পানিয়াঙ্গারাকে স্লিপে শামসুরের ক্যাচে পরিণত করে নিজের ষষ্ঠ উইকেট নেন তাইজুল। নিজের পরের ওভারে পরপর দুই বলে টেন্ডাই চাটারা ও টাফাজওয়া কামুনগোজিকে ফিরিয়ে জিম্বাবুয়ের ইনিংস গুটিয়ে দেন তিনি।
বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই কোনো দলের ইনিংসে সর্বনিম্ন রান। এর আগে ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়েকে ১৫৪ রানে অলআউট করেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে অতিথিদের হারিয়ে টেস্টে প্রথম জয়টি তুলে নেয় বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় আর সব দেশ মিলিয়ে পঞ্চম। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাকি দুটি জয় পেয়েছিল তারা।
আগামী ৩ নভেম্বর খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে: ২৪০ (রাজা ৫১, আরভিন ৩৪; সাকিব ৬/৫৯) ও ১১৪ (সিবান্দা ১৪, চাকাবভা ১০, মাসাকাদজা ৫, রাজা ২৫, টেইলর ৪৫*, চিগুম্বুরা ০, আরভিন ১০, নিউম্বু ১, পানিয়াঙ্গারা ০, চাটারা ৪, কামুনগোজি ০; তাইজুল ৮/৩৯, শাহাদাত ১/২৫, সাকিব ১/৪৪)
বাংলাদেশ: ২৫৪ (মুশফিক ৬৪, মাহমুদুল্লাহ ৬৩, মুমিনুল ৫৩; পানিয়াঙ্গারা ৫/৫৯) ও ১০১/৭ (তামিম ০, শামসুর ০, মুমিনুল ০, মাহমুদুল্লাহ ২৮, সাকিব ১৫, মুশফিক ২৩*, শুভাগত ০, শাহাদাত ১১, তাইজুল ১৫*; চিগুম্বুরা ৪/২১, পানিয়াঙ্গারা ২/৩০, চাটারা ১/৩৪)
ম্যাচ সেরা: তাইজুল ইসলাম