প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণ এই সরকারকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। সে কারণে ইশতেহার অনুযায়ী দেশ চলবে। কেউ জনগণের ক্ষতি করতে চাইলে তার জবাব দেওয়া হবে।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের শুরুতে দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভাঁওতাবাজি ও ধোঁকাবাজি ওনার চরিত্র। এটা থেকে জনগণকে রক্ষা করতে হবে। জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। ইশতেহার অনুযায়ী দেশ চলছে, চলবে। কেউ যদি জনগণের ক্ষতি করতে চায়, অবশ্যই উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। আমরা জনগণের কল্যাণে আছি।’
নীলফামারীর জনসভা খালেদা জিয়ার দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেখলাম, বিএনপি নেত্রী জনসভা করে সরকার উৎখাতের আন্দোলনের কথা বলেছেন। আমাদের উৎখাতের আন্দোলন করতে গিয়ে ওনার নিজের পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে, এটা তিনি দেখছেন না।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করেছে। সিপিএ ও আইপিইউতে জয়ী হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এমন অর্জন একটা ইতিহাস। এটা আর কেউ করতে পারেনি। এটা গণতন্ত্রের বিজয়। জনগণের প্রতিনিধিত্বশীলতার বিজয়। এটা আমরা জনগণকে উৎসর্গ করছি। যেকোনো নাগরিকের এ কথা জেনে আনন্দিত হওয়ার কথা। আমি জানি সবাই আনন্দিত। তবে তারা আনন্দিত হতে পারবে না, যারা হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে। তারা প্রথমে ক্ষমতার মসনদে বসে। তারপর উচ্ছিষ্ট ছিটিয়ে দল গঠন করে, এরা খুশি হতে পারবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ স্বস্তিতে আছে। এটাকে কেউ যেন নস্যাৎ করতে না পারে। বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন মানেই সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানুষ খুন করা। ৫ জানুয়ারির আগে তারা এটা করেছে। এ রকম আর হতে দেব না। কেউ করতে চাইলে সহজে ছেড়ে দেব না।’ তিনি দাবি করেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে মানুষ মধ্যবিত্ত ও ধনিক শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে। চোখের সামনে অনেককে এ রকম ধনী হতে দেখেছি। নিম্ন আয়ের মানুষ দারিদ্র্য থেকে উঠে এসেছে।’
মানুষ দিন দিন গরিব হয়ে যাচ্ছে—নীলফামারীর সমাবেশে খালেদা জিয়ার এমন মন্তব্যের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওনার জন্য ছিল ভাঙা স্যুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি। নিজের দিকটা দেখুক না উনি। কতটুকু সচ্ছলতা এসেছে। বাড়ি বদলের সময় দেখা গেছে বিদেশি টাইলস, দামি ফার্নিচার, বাতি, শিফন শাড়ি। এক গজের দাম এক হাজার ডলার। একেকখানা শাড়ির তিন-চার লাখ টাকা দাম। বার্মিজ রুবি, ব্লাক ডায়মন্ড মিলিয়ন ডলারের বিষয়। মনে হয়, ভাঙা স্যুটকেস জাদুর বাক্স হয় গেছে নতুবা চুরি করে এগুলো হয়েছে। এই জন্য মামলার তারিখ হলেই তিনি হরতাল দেন, জনসভা করেন। কিন্তু হাজিরা দেন না। গেলে তো ধরা পড়ে যাবেন। এ জন্যই হরতাল দেন, অসুস্থতার ভান করেন।’ তিনি বলেন, ‘এতিমের টাকা মেরে দিয়ে ডায়মন্ড-বিলাসিতা, বিদেশি দামি জিনিস ব্যবহার করেন। তিনি ভয় পান বলেই পালান।’
কোনো দেশ বর্তমান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি—খালেদা জিয়ার এমন মন্তব্যের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘এতটা অজ্ঞতা নিয়ে কীভাবে তিনি দুইবারের প্রধানমন্ত্রী হলেন? তিনি একটি দলেরও প্রধান। একটা রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয় আরেকটি রাষ্ট্রকে। এখানে সরকারের কোনো স্বীকৃতির বিষয় না। রাষ্ট্র হলো স্থায়ী, আর সরকার আসে-যায়।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার পর অনেক দেশ একে একে আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। ওনার উপদেষ্টারা ওনাকে এই পৌরনীতিও বোঝাননি।’
আশরাফ বলেন, ‘আরেকজন ভাইস চেয়ারম্যান তাঁর উপদেষ্টা নিয়োগ দিলেন। তিনি জালিয়াতির কারণে ফৌজদারি মামলায় আটক হয়েছেন। আমেরিকায় এফবিআইকে ঘুষ দেওয়ার চিন্তা করাই অপরাধ। অথচ সেখানে বিএনপির এক লোক ঘুষ দিয়ে হাতে নাতে ধরে পড়েছে। এরা নিজের দেশে দুর্নীতি করে, অন্য দেশেও জালিয়াতি করে।’