ইবোলা ভাইরাস সংক্রমণে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা নিরাপদে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ অক্টোবর ২০১৪, ১২:০০ অপরাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
ইবোলা ভাইরাস থেকে পুরোপুরি নিরাপদে আছেন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। মিশনে নিয়োজিত চিকিৎসকদের পরামর্শেই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা ছুটিতে আসতে কিংবা কোথাও গমনাগমন করতে পারছেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইবোলা প্রতিরোধে লাইবেরিয়া ও মালিতে থার্মাল স্ক্যানারসহ পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যক্তিগত প্রতিরোধ সরঞ্জাম (পলিথিন গাউন, মুখোশ, সানগ্লাস, হ্যান্ড গ্লাভস, সু কভার) পাঠিয়েছে। ইবোলা ভাইরাসজনিত সংক্রমণের লক্ষণ ও প্রতিরোধে সামরিক চিকিৎসা সার্ভিস মহাপরিদফতর ইতিমধ্যে মিশন এলাকার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করেছে। যা ইবোলা ভাইরাস মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
আগামী ২৭ অক্টোবর ইবোলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের জন্য বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কনসালট্যান্ট ফিজিশিয়ান জেনারেল মেজর জেনারেল মোহাম্মদ রবিউল হোসেনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের চিকিৎসা প্রতিনিধি দল লাইবেরিয়ায় জাতিসংঘ মিশন এলাকা পরিদর্শন করবে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
আইএসপিআর জানায়, সম্প্রতি পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দেশে বিশেষত গিনি, সিয়েরা লিয়ন ও লাইবেরিয়াতে ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত চার সহস্রাধিক ব্যক্তি মারা গেছেন। এ অবস্থাকে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা বিশ্বব্যাপী জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি বলে ঘোষণা করেছে।
বর্তমানে পশ্চিম আফ্রিকায় লাইবেরিয়াসহ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশি সেনা সদস্যরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে নিয়োজিত থাকায় তা বাংলাদেশের জনগণের মাঝেও উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। ইতিমধ্যে লাইবেরিয়া ও মালিতে জাতিসংঘ মিশন কর্তৃপক্ষ ইবোলা মোকাবেলায় জরুরি কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
সন্দেহভাজন ইবোলা আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষার জন্য মহামারী, রোগ, নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, মহাখালীর সমন্বয়ে আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজিতে একটি সমন্বয় সেল খোলা হয়েছে। আফ্রিকা থেকে আসা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সদস্যদের স্ক্রিনিংয়ের জন্য ঢাকা সিএমএইচে ১৮ সদস্যের একটি টিমও গঠন করা হয়েছে।
এ ছাড়া সন্দেহভাজন ইবোলা আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২০ শয্যার একটি পৃথক ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইবোলা আক্রান্ত দেশ বিশেষ করে লাইবেরিয়া থেকে আসা ব্যক্তিদের চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একটি আলাদা সেল খোলা হয়েছে।
বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা বর্তমানে লাইবেরিয়া, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, মালি, আইভরিকোস্ট, সুদান (দারফুর) ও সাউথ সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে নিয়োজিত রয়েছেন।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশ ইবোলার সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। বাংলাদেশের জাতীয় রোগতত্ব, রোগ নিরাময় ও গবেষণা কেন্দ্রের (আইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমানও বলেছেন, ইবোলা ভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালী আইইডিসিআর মিলনায়তনে সাংবাদিকদের জন্য আয়োজিত এক কর্মশালায় তিনি বলেন, কেউ সরাসরি ইবোলা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে না এলে ইবোলা সংক্রমণের কোনো আশঙ্কা নেই। এ ছাড়া এক ব্যক্তির দেহ থেকে অন্যের দেহে রক্ত না দিলে এই ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা একেবারেই কম।
অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, ইবোলা নিয়ে সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। দেশের বিমান, স্থল ও সমুদ্রবন্দরে ২৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। কাউকে সন্দেহ হলে মেডিকেল টিমের কর্মীরা তার শরীর থেকে রক্ত নিয়ে পরীক্ষা করে দেখছে।