বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে বাংলাদেশে এ বছর প্রবৃদ্ধি হবে ৬.২%
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ অক্টোবর ২০১৪, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক ::
চলতি অর্থবছর বাংলাদেশে মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটে’ এ পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, শিল্প, সেবা ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির কারণেই ৬ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি হবে। যদিও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করেছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে গতকাল ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদনের খুঁটিনাটি তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির বাংলাদেশ মিশনের প্রধান ইয়োহানেস জাট। গত চার বছরে বাংলাদেশে দারিদ্র্য প্রায় ৭ শতাংশ কমেছে বলে এ সময় জানানো হয়।
বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে খাতভিত্তিক হিসেবে কৃষিতে ৩ দশমিক ৩, শিল্পে ৯ দশমিক ৫ ও সেবা খাতে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আভাস দিয়েছে। এছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো আয় (রেমিট্যান্স) চলতি অর্থবছর ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে ‘সন্তোষজনক’ উল্লেখ করে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়া প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে নিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ৭ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বিনিয়োগ জিডিপির ২৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৪-৩৫ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে।
৮ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। তৈরি পোশাক খাতে যে সংস্কার চলছে সেটা বাস্তবায়ন, মেগা প্রকল্প যেমন— ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে বিদ্যুত্ প্রকল্পের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন এর অন্যতম। এগুলো করতে পারলে আগামী চার-পাঁচ বছরে জিপিডি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ হতে পারে।
দারিদ্র্যের হার সম্পর্কে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার দ্রুত গতিতে কমছে। দারিদ্র্যের হার ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ২০১৪ সালে ২৪ দশমিক ৪৭ শতাংশে দাঁড়াবে। এ তথ্য কোনো জরিপের ভিত্তিতে না হলেও সরকারি একাধিক সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে প্রাক্কলন করা হয়েছে।
সহস াব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অনুযায়ী, ২০১৫ সালে দারিদ্র্যের হার ২৮ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। তবে গত এক দশকের (২০০০-২০১০) তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস বলছে, ২০১৪ সালে দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৪৭ শতাংশে নেমে আসবে। দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়নেও বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে। ২০১৩ সাল শেষে কর্মসংস্থান বেড়ে ৫ কোটি ৬৫ লাখে দাঁড়িয়েছে বলে সংস্থাটির পরিসংখ্যান বলছে। ২০১০ সালে তা ছিল ৫ কোটি ১৯ লাখ।
অর্থনৈতিক ঝুঁকি প্রসঙ্গে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আগামী দিনের অর্থনীতিতে সব থেকে বড় ঝুঁকি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। ফলে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে ধস ও উচ্চমূল্যস্ফীতির মতো নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে অর্থনীতিতে। রফতানি খাতের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প ও মধ্যপ্রাচ্য শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির চ্যালেঞ্জ।
ইবোলা ভাইরাসের প্রসঙ্গ টেনে ইয়োহানেস জাট বলেন, ইবোলো ভাইরাসে বৈশ্বিকভাবে ৪০০ মিলিয়ন ডলার জরুরি সহায়তা দেয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশের জন্য তেমন কোনো সহায়তা এ মুহূর্তে দরকার নেই।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে চললেও সম্ভাবনার সবটুকু এখনো ব্যবহার করতে পারছে না বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির মূল্যায়ন, বাংলাদেশ এগোলেও তার গতি ধীর। যোগাযোগ ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নয়ন হয়নি। বহু বিতর্কের পর নিজেরা সরে এলেও পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার পরামর্শ দিয়েছে তারা।
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে ২২ বিলিয়ন ডলারের। এটা খুবই সন্তোষজনক। এ রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। এখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল দেখা গেলেও তা কত দিন থাকবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
রাজনৈতিক পরিস্থিতির এ অনিশ্চয়তা বিনিয়োগে প্রভাব ফেললে অর্থনীতি ফের নেতিবাচক ধারায় ফিরে যাবে বলে আশঙ্কা সংস্থাটির। তাদের মতে, সেক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। চাপে পড়তে পারে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। সরকারি ব্যাংকগুলোর দুরবস্থাও আর্থিক খাতকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
তৈরি পোশাক কারখানার সমস্যা ইউরোপের বাজারে রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে এ শিল্পের উন্নয়নে নেয়া পদক্ষেপগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৬৬০ কোটি ডলারের ৩৬টি প্রকল্পের কাজ চলছে।