ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছে বিদেশি উদ্যোক্তারা
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ অক্টোবর ২০১৪, ৯:৪২ পূর্বাহ্ণ
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক ::
বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মালিকানা ছেড়ে দিচ্ছে বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোক্তারা। ব্যাংকটিতে থাকা মালিকানার পুরো অংশই সম্প্রতি বিক্রি করে দিয়েছে বাহরাইন ইসলামী ব্যাংক। মালিকানার উল্লেখযোগ্য অংশ বিক্রি করেছে দুবাই ইসলামী ব্যাংকও। এছাড়া শেয়ার বিক্রির আগ্রহ প্রকাশ করেছে কুয়েতের তিন প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোক্তা। তবে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন না পাওয়ায় শেয়ার বিক্রি করতে পারেনি তারা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুন ও অক্টোবরে দুই কিস্তিতে বাহরাইন ইসলামী ব্যাংক তাদের হাতে থাকা মোট ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৮৪৪টি শেয়ার বিক্রি করে। ফলে ইসলামী ব্যাংকে তাদের আর কোনো শেয়ার নেই। দুবাই ইসলামী ব্যাংক গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ঘোষণা দিয়ে দুই কিস্তিতে ৭০ লাখ শেয়ার বিক্রি করে। তবে প্রতিষ্ঠানটির হাতে ইসলামী ব্যাংকের আরো ৯৭ লাখ ৩ হাজার ৫৪০টি শেয়ার অবশিষ্ট রয়েছে।
এছাড়া কুয়েতের পাবলিক ইনস্টিটিউট অব সোস্যাল সিকিউরিটি, কুয়েত আওকাফ পাবলিক ফাউন্ডেশন ও কুয়েত ফিন্যান্স হাউস তাদের শেয়ার বিক্রির জন্য বিএসইসির কাছে আবেদন করে। তবে অনুমতি না পাওয়ায় বিক্রি করতে পারেনি। উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাংকটির ১৫ শতাংশ মালিকানা রয়েছে এ তিন প্রতিষ্ঠানের। সম্মিলিতভাবে তাদের হাতে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার রয়েছে ২০ কোটি ৪ লাখ ৩৩ হাজার ২২৫টি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান জানান, ব্যাংকটি শুরুর সময় বিদেশি উদ্যোক্তারা এটি পরিচালনায় মূল ভূমিকা রাখতেন। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় পরিবর্তন এসেছে। ফলে অনেকেই শেয়ার বিক্রি করছেন। তবে এটা স্বাভাবিক ঘটনা। এছাড়া নতুন নিয়মের ফলেও অনেক উদ্যোক্তা পরিচালক হতে পারেননি। এ কারণেও ইসলামী ব্যাংকে বিদেশিদের শেয়ার কমছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইসলামী ব্যাংক সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা শুরু হয়। ব্যাংকটির বিভিন্ন শাখায় এ সময় হামলাও হয়। এছাড়া জঙ্গি অর্থানের অভিযোগে উঠলে কিছুটা ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে ব্যাংকটি। পাশাপাশি আনন্দ শিপইয়ার্ডসহ চট্টগ্রামভিত্তিক কয়েকটি গ্রুপে ঋণ কেলেঙ্কারিও ব্যাংকটি সম্পর্কে বিদেশি উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
বিদেশি উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি ব্যাংকটিতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন স্থানীয় প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোক্তারাও। এর মধ্যে বড় উদ্যোক্তা ইবনে সিনা ট্রাস্ট তাদের হাতে থাকা ১০ লাখ শেয়ার গেল বছর বিক্রি করে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির হাতে ইসলামী ব্যাংকের ৩ কোটি ৩২ লাখ ৯৭ হাজার ৬২৯টি শেয়ার রয়েছে। এছাড়া শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছে ইসলামিক ইকোনমিকস রিসার্চ ব্যুরো। প্রতিষ্ঠানটি তিনবার ঘোষণা দিয়ে এরই মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার শেয়ার বিক্রি করেছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির হাতে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার রয়েছে ১৭ লাখ ৩৭ হাজার ৩৪৪টি। এছাড়া বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ৩ লাখ ৪০ হাজার ৫০০টি শেয়ার বিক্রি করেছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির হাতে আরো ৩৫ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার রয়েছে।
এদিকে গত ৩১ মার্চ ব্যাংকের সর্বশেষ বার্ষিক সাধারণ সভায় বিদেশি উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে আরো শেয়ার কেনার ঘোষণা দেয়া হয়। ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান সৌদি আরবের ইউসিফ আবদুল্লাহ আল রাজি সভায় বলেন, স্থানীয়ভাবে পরিচালিত হলেও এ ব্যাংকের পরিচালনার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। তাই ব্যাংকটির আরো শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়াতে চান তারা। একই সভায় আরেক পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল জালাহমা বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও প্রতিকূল বাণিজ্য পরিস্থিতি সত্ত্বেও ইসলামী ব্যাংক স্থানীয়ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে সফলতা অব্যাহত রেখেছে। বিদেশী উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিক্রির গুজব অস্বীকার করে কুয়েতের চারটি প্রতিষ্ঠান কুয়েত ফিন্যান্স হাউস, কুয়েত আওকাফ পাবলিক ফাউন্ডেশন, পাবলিক ইনস্টিটিউশন ফর সোস্যাল সিকিউরিটি ও পাবলিক অথরিটি ফর মাইনরস অ্যাফেয়ার্সের পক্ষে তিনি ঘোষণা করেন, তারা সুযোগ পেলে এ ব্যাংকের আরো শেয়ার কিনবেন। তবে এখন পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শেয়ার ক্রয়ের কোনো ঘোষণা আসেনি ডিএসইতে।
২০১৩ সালের সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকে বিদেশী উদ্যোক্তাদের মালিকানা ৫২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্য বিদেশী বিনিয়োগকারীসহ ইসলামী ব্যাংকের মোট বিদেশী মালিকানার পরিমাণ ৬৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
ইসলামী ব্যাংকে বিদেশী উদ্যোক্তারা হলেন— ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, কুয়েত ফিন্যান্স হাউস, ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড করপোরেশন দোহা, বাহরাইন ইসলামিক ব্যাংক, ইসলামিক ব্যাংকিং সিস্টেম ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং লুক্সেমবার্গ, আল-রাজি কোম্পানি ফর কারেন্সি এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড কমার্স, রিয়াদ, শেখ আহমেদ সালেহ জামজুম, শেহ ফুয়াদ আবদুল হামিদ আল-খতিব, দুবাই ইসলামিক ব্যাংক, দ্য পাবলিক ইনস্টিটিউট ফর সোস্যাল সিকিউরিটি কুয়েত ও মিনিস্ট্রি অব জাস্টিস কুয়েত।