ব্যাংকের এমডিদের সুরক্ষায় নীতিমালা আনছে বাংলাদেশ ব্যাংক
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ অক্টোবর ২০১৪, ৯:০০ পূর্বাহ্ণ
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক ::
মেয়াদ পূর্তির আগেই অনেক সময় পদ ছাড়তে হচ্ছে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি)। পর্ষদের অনৈতিক কাজে সমর্থন না দিলেই পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে তাদের। ফলে এক ধরনের অনিশ্চয়তায় ভুগছেন বিভিন্ন ব্যাংকের এমডিরা। এ অবস্থায় ব্যাংক এমডিদের সুরক্ষা দিতে চাইছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যে একটি নীতিমালা তৈরির পরিকল্পনাও করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সম্প্রতি ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডিকে পদত্যাগে বাধ্য করে পরিচালনা পর্ষদ। ওই ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিমের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই ব্যাংক এমডিদের সুরক্ষা দেয়ার বিষয়টি ওঠে আসে, যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ব্যাংকের এমডি নিয়োগ চুক্তিভিত্তিক। ব্যাংক পরিচালনায় চেয়ারম্যান ও এমডির ভূমিকা কী, তা নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে। তার পরও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। ব্যাংকের সুশাসন নিশ্চিতে এটা বন্ধ করে এমডিদের সুরক্ষা দিতে হবে। গভর্নর দেশে ফিরলেই এ-সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু হবে।
ব্যাংক পরিচালনায় পরিচালনা পর্ষদ ও এমডি কার কী ভূমিকা হবে, ব্যাংক কোম্পানি আইন ও নীতিমালায় তা বলে দেয়া আছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তিন বছরের চুক্তিতে এমডি নিয়োগ দেয়া হলেও পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে মেয়াদ শেষের আগেই কাউকে কাউকে ব্যাংক ছাড়তে হচ্ছে। সর্বশেষ এ ধরনের ঘটনা ঘটে ন্যাশনাল ব্যাংকে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই একেএম শফিকুর রহমানকে পদত্যাগে বাধ্য করে পরিচালনা পর্ষদ।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এমডিদের সুরক্ষায় প্রচলিত নীতিমালায় যেসব ফাঁকফোকর রয়েছে, নতুন নীতিমালায় তা বন্ধ করা হবে। পাশাপাশি ব্যাংক পরিচালনায় পরিচালক ও এমডির ভূমিকাও আরো পরিষ্কার করা হবে। কোনো এমডিকে পর্ষদ সরিয়ে দিতে চাইলে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণ হতে হবে। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে কেউ পদত্যাগ করলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে।
যোগাযোগ করা হলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম বলেন, ‘বেসরকারি ব্যাংকের এমডিরা ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করছেন। কিন্তু একটি ব্যাংকের এমডি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেও পরে তিনি পরিচালনা পর্ষদের চাপের কথা স্বীকার করেছেন। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এ কারণে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকৃত ঘটনা খতিয়ে দেখার সুযোগ পাবে এক্ষেত্রে।’
জানা গেছে, গত বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৬ মাস আগেই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন এবি ব্যাংকের এমডি মো. ফজলুর রহমান। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি থেকে তার পদত্যাগপত্র কার্যকর হয়। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেও পরিচালনা পর্ষদের চাপেই মূলত পদত্যাগ করতে হয় তাকে।
একইভাবে হঠাৎ পদত্যাগ করেন মিডল্যান্ড ব্যাংকের এমডি শহীদুল হকও। ব্যাংক পরিচালনা নিয়ে পর্ষদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ায় পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি। আর দৈনন্দিন কাজে পরিচালনা পর্ষদের হস্তক্ষেপের কারণে পদত্যাগ করেন মেঘনা ব্যাংকের এমডি কাইজার এ চৌধুরী।
এদিকে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এমডি এহসানুল হকের ওপরও সম্প্রতি পরিচালনা পর্ষদের তরফ থেকে পদত্যাগের চাপ আসে। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে বিষয়টি মীমাংসা হয়।
জানা গেছে, প্রাইম ব্যাংকের এমডি এহসান খসরুর সঙ্গেও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সম্পর্কের অবনতি হয়। ফল হিসেবে তার মেয়াদ বাড়ায়নি ব্যাংকটি।
পদত্যাগে বাধ্য হওয়া দুজন এমডির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পর্ষদের কোনো সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করলেই ক্ষুব্ধ হন পরিচালকরা। এর পর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। তা না হলে ব্যাংকের বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। পাশাপাশি সামাজিকভাবে হেয় করার হুমকিও দেয়া হয়। এ অবস্থায় পদত্যাগ না করে উপায় থাকে না এমডিদের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করায় কোনো আইনি সহায়তা পাওয়া যায় না।
ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান কে মাহমুদ সাত্তার বলেন, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কোনো এমডি যদি ব্যাংক ছেড়ে চলে যান এবং অন্য ব্যাংকে যোগ দেন তাহলে বুঝতে হবে, বনিবনা না হওয়ায় চলে যেতে হয়েছে তাকে। ব্যাংকের এমডিদের ক্ষেত্রে এটা খুবই দুঃখজনক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সুশাসন নিশ্চিত করতে বলা হলেও এমডিদের হাত শক্তিশালী করা হয়নি। সারা বিশ্বেই এমডিদের সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশে নেই। এখানে পর্ষদের চাপের কথা কেউ কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানান না। কারণ সুরক্ষা না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে।