গ্রামের উন্নতিতেই জাতীয় উন্নতি — এপিজে আবদুল কালাম
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ অক্টোবর ২০১৪, ৯:৫২ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
দারিদ্র্য থেকে বের হয়ে আসতে গ্রামীণ এলাকার উন্নয়ন অপরিহার্য। আর গ্রামীণ অগ্রগতি জাতীয় উন্নতির সাফল্যকে ত্বরান্বিত করবে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এপিজে আবদুল কালাম। গতকাল ১৮ অক্টোবর শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) ‘শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বিশ্বসমাজের জন্য টেকসই উন্নয়ন পদ্ধতি’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
এমসিসিআইয়ের ১১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে এ উপলক্ষে গত শুক্রবার ঢাকা আসেন তিনি। অনুষ্ঠান শেষে গতকাল দেশে ফিরে যান ভারতের সাবেক এ রাষ্ট্রপতি।
গ্রামীণ এলাকার উন্নতি প্রসঙ্গে তিনি তিনটি স্বপ্নের কথা বলেন। এগুলো হলো— ফিজিক্যাল কানেকটিভিটি, ইলেকট্রিক কানেকটিভিটি ও নলেজ কানেকটিভিটি। ফিজিক্যাল কানেকটিভিটির মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন তথা রাস্তাঘাট ও রেল ইত্যাদির উন্নয়ন। ইলেকট্রিক কানেকটিভিটির মধ্যে রয়েছে টেলিকমিউনিকেশন ও টেলিমেডিসিনের উন্নয়ন। নলেজ কানেকটিভিটির মধ্যে রয়েছে শিক্ষার গুণগত মানের উন্নয়ন।
তিনি গ্রামাঞ্চলে শহুরে সুযোগ প্রদান বা প্রোভাইডিং আরবান অ্যামেনিটিজ ইন রুরাল এরিয়াস (পুরা) বাস্তবায়নের কথা বলেন। ভারতে এ ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে সফলতার খুঁটিনাটিও উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশে এ ব্যবস্থা বাস্তবায়নে উদাহরণ টানেন খুলনা অঞ্চলের।
সাবেক তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কামাল আজাদের এক প্রশ্নের জবাবে সন্ত্রাস দমনে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, হতাশা ও আর্থিক অনটন থেকেই সন্ত্রাসের পথে চলে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। তাই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে পারলে মানুষের মধ্যে যে হতাশা রয়েছে, তা থেকে সে বেরিয়ে আসতে পারবে এবং ধীরে ধীরে সন্ত্রাস কমে আসবে।
এপিজে আবদুল কালাম দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, নিরাপদ পানি, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, বিভিন্ন উৎসের সঠিক বণ্টন, শিক্ষার মান, সামাজিক ভারসাম্যহীনতা, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থার বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সবাইকে দায়িত্ব নেয়ার আহ্বান জানান।
পাট শিল্পের সম্ভাবনা বিষয়ে এ বিজ্ঞানী বলেন, প্লাস্টিক শিল্পের স্থলাভিষিক্ত হতে পারে পাট শিল্প। খুলনা অঞ্চলে এর বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ভালো সহযোগিতা করতে পারে ভারত। সনাতন ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে প্রযুক্তিসহায়তা নিয়ে উদ্ভাবনী কৌশলের মাধ্যমে এ শিল্পকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
২০৩০ সালের নিজের কাঙ্ক্ষিত বিশ্বের একটি রূপকল্পও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তিনি। তার কল্পনায় সেই সময়ের বিশ্বে শহর ও গ্রামে, ধনী ও দরিদ্রে, উন্নত ও অনুন্নতের ব্যবধান কমে আসবে। সেখানে জ্বালানি ও নিরাপদ পানির সুষম বণ্টন থাকবে। সব সরকার হবে দায়িত্বশীল ও দুর্নীতিমুক্ত, নারী ও শিশুরা থাকবে সন্ত্রাসমুক্ত, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা হবে সবার কাছে সহজলভ্য। ‘রূপকল্প ২০৩০’-এ এমন এক বিশ্বের কল্পচিত্র এঁকেছেন তিনি, যেখানে পরিবেশ হবে দূষণমুক্ত, জীবন হবে শান্তিময় ও যুদ্ধের শঙ্কামুক্ত।
এশিয়া উপমহাদেশের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সার্কভুক্ত দেশগুলোয় ১৪৭ কোটি মানুষ আছে; যা সারা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ। এছাড়া হাজার বছরের ইতিহাস, জীববৈচিত্র্য, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি যুবসম্প্রদায় ও ক্রয়ক্ষমতার দিক থেকেও এগিয়ে এ অঞ্চল।
২০০৭ সালে দিল্লিতে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে ‘সার্ক অঞ্চলের ঐকতানের উপলব্ধি’ শিরোনামে দেয়া তার বক্তৃতার কথা স্মরণ করে ভারতের তত্কালীন রাষ্ট্রপতি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের বাণিজ্য, প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানুষের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ৬০০ কোটি (৬ বিলিয়ন) ডলার অতিক্রম করেছে। আশা করা হচ্ছে, ২০১৮ সালের মধ্যে তা ১০ বিলিয়নে উন্নীত হবে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন বাংলাদেশ ও ভারতের অন্তর্গত উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই দেশের ভেতর দিয়ে বয়ে চলেছে বড় দুই নদী গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নজরুলগীতি এ দুই দেশকে একসূত্রে গেঁথেছে। দুই দেশেরই জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, এর চেয়ে বড় সাহিত্যিক যোগসূত্র আর কী হতে পারে।
জগদীশ চন্দ্র বসু, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ সময় স্মরণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, মানুষের সৃজনশীলতার প্রধান জায়গা হচ্ছে পরিবার ও প্রাথমিক স্কুল। বেড়ে ওঠার এ জায়গা থেকেই মানুষের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে।
দারিদ্র্য, অশিক্ষা, নিরাপদ পানি, সবুজ জ্বালানি, সম্পদ বণ্টনে বৈষম্য— বর্তমান বিশ্বের এমন কয়েকটি সমস্যার কথা উল্লেখ করে খ্যাতনামা এ পরমাণুবিজ্ঞানী বলেন, এসব সমস্যা একক কোনো দেশ তৈরি করেনি, সমাধানও একক কারো হাতে নিহিত নেই। এসব সমস্যা উত্তরণে বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে যৌথ ভূমিকা রাখতে হবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের আগে গতকাল এমসিসিআইয়ের ১১০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন— বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও এমসিসিআই সভাপতি রোকিয়া আফজাল রহমান।